নতুন ব্যাংকে সরকারি সংস্থার ১৫ হাজার কোটি টাকা

সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলো থেকে নতুন প্রজন্মের ৯ ব্যাংক গড়ে দেড় হাজার কোটি টাকা করে মোট ১৫ হাজার কোটি টাকা আমানত পেয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক
ফাইল ছবি

দেশের ৬১টি ব্যাংকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোর জমা টাকার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা, দুই বছর আগের তুলনায় যা ৫২ হাজার কোটি টাকা বেশি। গত মার্চ পর্যন্ত শুধু ঢাকা থেকে উল্লেখিত সংস্থাগুলোর জমা অর্থের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৫৮ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। আর অন্যান্য অঞ্চল থেকে জমা হয় ১ লাখ ৫ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংক মার্চ মাস পর্যন্ত হিসাব তুলে ধরে গত জুনে এ-বিষয়ক একটি বিবরণী অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। তা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বেশির ভাগ টাকাই জমা হয়েছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন চার ব্যাংকে। তবে নতুন প্রজন্মের ব্যাংকগুলোতেও ধীরে ধীরে সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার জমা অর্থের পরিমাণ বাড়ছে। নতুন প্রজন্মের ব্যাংক ১৩টি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বিবরণী বলছে, নতুন ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রথম দফায় অনুমোদন পাওয়া ৯ ব্যাংকের মধ্যে কোনো ব্যাংক ৫০০ এবং কোনো ব্যাংক এক হাজার কোটি টাকার আমানত পেয়েছে। আবার কেউ কেউ পেয়েছে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি। তবে গড়ে তারা দেড় হাজার কোটি টাকা করে আমানত পেয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর বাঁচতে হবে, কিন্তু সরকারি সংস্থাগুলোকে মেরে তা করতে হবে, এমন নয়। সংস্থা যখন টাকা চাইবে, তখন যাতে নিজের টাকা ফেরত পায়, জমা রাখার সময় সেই বিবেচনা আগে করতে হবে। আমি বলব, ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাংকে বেশি টাকা জমা রাখা কারও উচিত নয়।’

এনআরবি কমার্শিয়াল

এ ব্যাংকে ২০২ কোটি টাকা রয়েছে নিবন্ধন অধিদপ্তরের। এ ছাড়া পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ১৫৯ কোটি, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) ৯৮ কোটি, বাখরাবাদ গ্যাসের ৮০ কোটি, তিতাস গ্যাসের ৬৩ কোটি, মেঘনা পেট্রোলিয়ামের ৫০ কোটি, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলেরও (বিএআরসি) ২৮ কোটি, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ৩৮ কোটি, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১৭ কোটি, পেট্রোবাংলার ১৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা রয়েছে।

এ ছাড়া ঢাকা ওয়াসা ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আমানত আছে এ ব্যাংকে।

ইউনিয়ন ব্যাংক

মেঘনা পেট্রোলিয়াম ২১৭ কোটি, পদ্মা অয়েল ১৫০ কোটি, যমুনা অয়েল ১৫০ কোটি, চট্টগ্রাম ওয়াসা ৯২ কোটি, সিলেট গ্যাস ফিল্ডস ৯৮ কোটি টাকা, পেট্রোবাংলা ৩২ কোটি, তিতাস গ্যাস ১৫ কোটি টাকা রেখেছে এই ব্যাংকে। এ ছাড়া সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড রাজশাহী, ইসলামী ফাউন্ডেশন, বিসিআইসি, বাখরাবাদ গ্যাস, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষ ও অন্যান্য মন্ত্রণালয় এ ব্যাংকে টাকা রেখেছে।

মেঘনা ব্যাংক

বিপিসি ২০৩ কোটি, রাজউক ৫০ কোটি, পেট্রোবাংলা ২০ কোটি, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ২০ কোটি, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় ১৬ কোটি, সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন ১৪ কোটি টাকা এ ব্যাংকে আমানত রেখেছে।

এ ছাড়া কল্যাণ তহবিল, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, ইপিবি, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ, টিসিবি, চট্টগ্রাম ওয়াসা, এফডিসি ইত্যাদি সংস্থার টাকা আছে এ ব্যাংকে।

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক

এ ব্যাংকে টাকা রেখেছে যমুনা অয়েল ৬১৯ কোটি, মেঘনা পেট্রোলিয়াম ৩১৬ কোটি, বিআইডব্লিউটিএ ২২৫ কোটি, বিপিসি ১৬২ কোটি, রাজউক ১০০ কোটি, পেট্রোবাংলা ৬৫ কোটি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৭ কোটি, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ১৪ কোটি, সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন ১২ কোটি ও বিএডিসি ৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম ওয়াসা, বিএসইসি, সিলেট গ্যাস ফিল্ড, তিতাস গ্যাস, বাখরাবাদ গ্যাস, পানি উন্নয়ন বোর্ড, কর্ণফুলী গ্যাস ও বিটাক এ ব্যাংকে টাকা রেখেছে।

পদ্মা ব্যাংক

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ৭৭ কোটি, তিতাস গ্যাস ৩০ কোটি, গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি ১৬ কোটি ৬৭ লাখ, সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ ১৫ কোটি, বিসিক ১০ কোটি, পেট্রোবাংলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ১১ কোটি ও যমুনা অয়েল ১০ কোটি টাকা রেখেছে এ ব্যাংকে।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর, পুলিশ অধিদপ্তর, এলজিইডি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েরও টাকা আছে এ ব্যাংকে। এ ছাড়া সরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার আছে ২০ কোটি টাকা।

সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার

এ ব্যাংকে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের আছে ১৫৫ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ৯৩ কোটি, পেট্রোবাংলার ৩৬ কোটি, তিতাস গ্যাসের ২৭ কোটি, জালালাবাদ গ্যাসের ১৭ কোটি টাকা রয়েছে। বিপিসি, ঢাকা ওয়াসা, সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের টাকা রয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের আছে ১৫২ কোটি টাকা।

মিডল্যান্ড, মধুমতি ও এনআরবি

তিতাস গ্যাসের ৯০ কোটি টাকা আছে মিডল্যান্ড ব্যাংকে। এ ছাড়া এ ব্যাংকে আছে ঢাকা ওয়াসা, চট্টগ্রাম ওয়াসা, চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন, স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি ও পেট্রোবাংলার টাকা।

তিতাস গ্যাসের ৬৭ কোটি, সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের ২৮ কোটি, বিপিসির ১২ কোটি টাকা, রুরাল ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বগুড়ার ৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা আছে মধুমতি ব্যাংকে।

এনআরবি ব্যাংকে পদ্মা অয়েলের আছে ১১২ কোটি টাকা। ৬৫ কোটি টাকা সিলেট গ্যাস ফিল্ডের ও তিতাস গ্যাসের ২৭ কোটি টাকা আছে।

কমিউনিটি, সীমান্ত, সিটিজেনস ও বেঙ্গল কমার্শিয়াল

বিবরণীতে দেখা যায়, এ ব্যাংকগুলোতে এখনো তেমন কোনো সংস্থা টাকা রাখতে শুরু করেনি। সিটিজেনস ব্যাংকে ১১০ কোটি টাকা রেখেছে পুলিশ অধিদপ্তর। সীমান্ত ব্যাংক বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ৬৮০ কোটি টাকার আমানত পেয়েছে।

সিটিজেনস ও কমিউনিটি ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, বিসিএসআইআর ৫ কোটি টাকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৫৫ লাখ, সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস ১০ কোটি, বেপজা ৫ কোটি ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ১ কোটি টাকা রেখেছে।