করোনার আগে স্বাভাবিক সময়ে প্রবাসীরা বিদেশ থেকে প্রতি মাসে ১৪০ থেকে ১৫০ কোটি মার্কিন ডলার পাঠাতেন। কিন্তু করোনা শুরু হওয়ার পর রেমিট্যান্স তথা প্রবাসী আয়ের পরিমাণ বেশ বৃদ্ধি পায়। এক মাসে প্রবাসী আয় বেড়ে প্রায় ২৬০ কোটি ডলারে উঠে যায়।
কিন্তু পরিস্থিতি যখন স্বাভাবিক হয়ে আসছিল এবং বৈশ্বিক যোগাযোগ গতি পাচ্ছিল, তখন আবার প্রবাসী আয়ে পতন ঘটতে শুরু করে। এ ধারা টানা ছয় মাস ধরে চলছে, অর্থাৎ আয় কমছে। এমনকি সর্বশেষ নভেম্বর মাসে যে প্রবাসী আয় এসেছে, তা বিগত ১৮ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। সব মিলিয়ে শেষ হতে যাওয়া ২০২১ সালকে প্রবাসী আয়ের উত্থান ও পতনের বছর বলে আখ্যায়িত করেছেন ব্যাংকাররা।
ব্যাংক খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অবশ্য বলছেন, করোনাভাইরাসের প্রভাব ও ক্ষতি কাটিয়ে বৈশ্বিক অর্থনীতি যখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, তখন প্রবাসী আয় বড় ধাক্কা খেয়েছে। এখন যোগাযোগ চালু হওয়ায় অবৈধ পথে প্রবাসী আয় পাঠানোর সুযোগও আবার বেড়েছে। সেই সুযোগটি নিচ্ছেন অনেক প্রবাসী। কারণ, অবৈধ পথে প্রবাসী আয় পাঠালে ডলারে ৩-৪ টাকা বেশি পাওয়া যায়। যেমন বর্তমানে ব্যাংকিং চ্যানেলে যেখানে প্রতি ডলারের মূল্য ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা, সেখানে খোলাবাজারে তা ৯০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তাই প্রবাসীদের বৈধ চ্যানেলে অর্থ পাঠানো দিন দিন কমছে বলে মনে করা হয়।
বর্তমানে ব্যাংকিং চ্যানেলে যেখানে প্রতি ডলারের মূল্য ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা, সেখানে খোলাবাজারে তা ৯০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তাই প্রবাসীদের বৈধ চ্যানেলে অর্থ পাঠানো দিন দিন কমছে।
করোনাকালে যাঁরা দেশে ফেরত এসেছিলেন, তাঁরা এখন বিদেশ যেতে শুরু করেছেন। দেশে পাঠানোর মতো অর্থ উপার্জনে আরেকটু সময় লাগবে। সব মিলিয়ে প্রবাসীদের আয় কমে যাওয়াটাই দেশে কম অর্থ পাঠানোর বড় কারণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বরে দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ১৫৫ কোটি ৩৭ লাখ ডলার। এর আগে ২০২০ সালের মে মাসে এসেছিল ১৫০ কোটি ৪৬ লাখ ডলার। মাঝখানের মাসগুলোতে প্রবাসী আয় বেশি ছিল। এর মধ্যে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় আসে ২০২০ সালের জুলাইয়ে। ওই মাসে প্রবাসীরা প্রায় ২৫৯ কোটি ডলারের বেশি অর্থ দেশে পাঠান। তবে ছয় মাস ধরে প্রবাসী আয় কমলেও বার্ষিক হিসাবে ২০২০ সালের তুলনায় চলতি ২০২১ সালে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ বেশি হবে।
গত নভেম্বরে দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ১৫৫ কোটি ৩৭ লাখ ডলার। এর আগে ২০২০ সালের মে মাসে এসেছিল ১৫০ কোটি ৪৬ লাখ ডলার। মাঝখানের মাসগুলোতে প্রবাসী আয় বেশি ছিল। এর মধ্যে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় আসে ২০২০ সালের জুলাইয়ে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে ১৯৬ কোটি, ফেব্রুয়ারিতে ১৭৮ কোটি এবং মার্চে ১৯১ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় আসে। এপ্রিলে ২০৬ কোটি ডলার ও মে মাসে ২১৭ কোটি ডলার পাঠান প্রবাসীরা। কিন্তু এরপর মে মাস থেকে আয় কমতে শুরু করে।
প্রবাসী আয় কমার কারণ সম্পর্কে ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর যখন বিমান যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়, তখন অবৈধ পথে অর্থ আসাও বন্ধ হয়। এ কারণে সব আয় ব্যাংকিং চ্যানেলে আসতে শুরু করেছিল। এতে প্রবাসী আয়ে নতুন নতুন রেকর্ড হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও নতুন উচ্চতায় পৌঁছায়। এখন যোগাযোগব্যবস্থা চালু হওয়ায় বৈধ পথে প্রবাসী আয় আসা কমছে। তা ছাড়া করোনায় প্রবাসীরা যে ক্ষতির মুখে পড়েছেন, তা এখন বোঝা যাবে।
তবে সুখবর হলো করোনাভাইরাসের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে বৈদেশিক কর্মসংস্থান খাত। গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি কর্মী গেছেন বিভিন্ন দেশে। ছয় মাস ধরেই আগের বছরের তুলনায় বিদেশে কর্মী পাঠানো বেড়েছে।
করোনায় প্রবাসীদের অনেকেই অতিরিক্ত ভাতা পেয়েছেন। আবার অনেকে সঞ্চয় ভেঙে দেশে পাঠিয়েছেন। এ কারণে করোনার সময়ে প্রবাসী আয় অনেক বেড়ে গিয়েছিল। এখন পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় সেই বাড়তি আয় দেশে আসছে না। তবে জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এর প্রভাব পড়বে প্রবাসী আয়ে।আরফান আলী, এমডি, ব্যাংক এশিয়া
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, গত বছর কাজ নিয়ে বিদেশে যান ২ লাখ ১৭ হাজার ৪৬৯ জন। এর মধ্যে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত তিন মাস বিদেশে যাওয়া পুরোপুরি বন্ধ ছিল। চলতি বছরের শুরু থেকে বিদেশ যাওয়া বাড়তে থাকলেও মধ্যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে এপ্রিল-মে ও জুলাই-আগস্টে তা আবার কমে যায়। সব মিলিয়ে এ বছরের প্রথম ১১ মাসে (জানুয়ারি–নভেম্বর) দেশ থেকে ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৮৯৩ জন বিভিন্ন দেশে গেছেন। বছর শেষে এটি সাড়ে ৫ লাখ ছাড়াতে পারে। এর ফলে ভবিষ্যতে প্রবাসী আয় আবারও ইতিবাচক ধারায় আসবে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
ব্যাংক এশিয়া এখন প্রবাসী আয় সংগ্রহে শীর্ষ ব্যাংকগুলোর একটি। এই ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আরফান আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনায় প্রবাসীদের অনেকেই অতিরিক্ত ভাতা পেয়েছেন। আবার অনেকে সঞ্চয় ভেঙে দেশে পাঠিয়েছেন। এ কারণে করোনার সময়ে প্রবাসী আয় অনেক বেড়ে গিয়েছিল। এখন পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় সেই বাড়তি আয় দেশে আসছে না। তবে জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এর প্রভাব পড়বে প্রবাসী আয়ে।’