ঋণ নীতিমালা বাস্তবায়নে সময় চায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাত

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অল্প কয়েকটি ভালো অবস্থানে থাকলেও অধিকাংশই নিয়মনীতি ও তদারকি কার্যক্রমে দুর্বলতার কারণে এখন গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। তাই বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নতুন নিয়মনীতি চালু শুরু করেছে। কিন্তু তা এখনই মানতে চাইছে না আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) সংগঠন বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশন (বিএলএফসিএ)।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত ১৪ সেপ্টেম্বর আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ পুনঃ তফসিলসংক্রান্ত নীতিমালা জারি করে। কিন্তু বিএলএফসিএ করোনার কারণে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই নীতিমালা বাস্তবায়ন না করার দাবি জানিয়েছে। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের কাছে চিঠি দিয়েছেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গ্রাহকের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা যাচাই না করেই বারবার ঋণ পুনঃ তফসিল করছে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান। ঋণ পরিশোধের সূচি পুনর্নির্ধারণ এবং যথাযথভাবে পুনঃ তফসিল প্রক্রিয়া অনুসরণ না করায় এসব প্রতিষ্ঠানের আদায়ের প্রকৃত চিত্র প্রতিফলিত হচ্ছে না। এখন থেকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কেবল বিরূপ মানে শ্রেণিকৃত (নিম্নমান, সন্দেহজনক ও ক্ষতিজনক) ঋণ পুনঃ তফসিল করতে পারবে। ঋণ নিয়মিত করার প্রতিটি পর্যায়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারিত হারে এককালীন জমা নিতে হবে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান এখন থেকে কোনো ঋণ তিনবারের বেশি পুনঃ তফসিল করতে পারবে না। আর তৃতীয় দফা পুনঃ তফসিলের পরও কোনো গ্রাহক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে তিনি স্বভাবজাত বা ইচ্ছাকৃত খেলাপি হিসেবে বিবেচিত হবেন। এ ছাড়া পুনঃ তফসিল করা ঋণের শুধু যেটুকু আদায় হবে তার বিপরীতে সুদ আয় খাতে নেওয়া যাবে। দ্রুত এই নীতিমালা বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

এখনো অনেক প্রতিষ্ঠান করোনার ক্ষত কাটাতে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। তারা যথাযথ সহায়তা পেলে ঘুরে দাঁড়াবে, ঋণের কিস্তিও নিয়মিত দেবে। এটা করা না গেলে পুরো অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

এরপর বিএলএফসিএ এক চিঠিতে গভর্নরকে জানায়, করোনার কারণে কোম্পানির ব্যবসা ও গ্রাহকদের ওপর বিধ্বংসী প্রভাব পড়েছে। এর মধ্যে কঠোর ঋণনীতির ফলে ঋণ আদায়ে খারাপ প্রভাব পড়বে। এর প্রভাব পড়বে পুরো খাতে। এখনো অনেক প্রতিষ্ঠান করোনার ক্ষত কাটাতে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। তারা যথাযথ সহায়তা পেলে ঘুরে দাঁড়াবে, ঋণের কিস্তিও নিয়মিত দেবে। এটা করা না গেলে পুরো অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ জন্য বিএলএফসিএ ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই নীতি স্থগিতের দাবি জানায়। এই সময়টা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ঘুরে দাঁড়ানোর ব্যাপারে সহায়তা করবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এক গ্রাহকের ঋণ দফায় দফায় পুনঃ তফসিল করছে। খেলাপি হলেও সুদ নিয়ে যাচ্ছে আয় খাতে। এভাবে তো চলতে পারে না।

ব্যবসায়ীরা করোনার ক্ষতি এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি। এর মধ্যে নতুন করে আবার করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা করা হচ্ছে। নতুন নীতিমালা দিলে তা দেশের অর্থনীতির জন্য খারাপ হবে। এ জন্য আমরা দুই বছর সময় চেয়েছি। আশা করছি, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত দেবে।
গোলাম সারওয়ার ভূঁইয়া, ভাইস চেয়ারম্যান, বিএলএফসিএ

বর্তমানে দেশে ৩৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর মধ্যে বহুল আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদারের মালিকানাধীন চারটিসহ কমপক্ষে ১০টি প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের টাকা সময়মতো ফেরত দিতে পারছে না। গত মার্চ শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দেওয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ৬৬ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১০ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ ১৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ ঋণ এখন খেলাপি। তবে করোনাজনিত ছাড় ও নতুন নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে তা দ্বিগুণ হয়ে যাবে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

বিএলএফসিএর ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা করোনার ক্ষতি এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি। এর মধ্যে নতুন করে আবার করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা করা হচ্ছে। নতুন নীতিমালা দিলে তা দেশের অর্থনীতির জন্য খারাপ হবে। এ জন্য আমরা দুই বছর সময় চেয়েছি। আশা করছি, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত দেবে।’