৯% সুদে ঋণ দেবে এনজিও

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ঋণ দেবে এনজিও
প্রথম আলোর ফাইল ছবি

প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ক্ষুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো (এমএফআই) থেকেও ঋণ নিতে পারবেন। সে ক্ষেত্রেও সুদের হার হবে সর্বোচ্চ ১৪ শতাংশ। তবে ৫০ লাখ টাকার বেশি ঋণ পাবেন না কোনো গ্রাহক।

এমএফআইগুলোও এনজিও হিসেবে পরিচিত। তবে সব এনজিও এই ঋণ দিতে পারবে না। শুধু ক্ষুদ্রঋণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (এমআরএ) থেকে নিবন্ধন পাওয়া এনজিওগুলোই এ ঋণ দিতে পারবে। এমআরএ থেকে সনদ নেওয়া এনজিও এখন ৭০০টি।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কয়েক দফা বৈঠক করে এ বিষয়ে একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করেছে। নীতিমালাটির নাম ‘নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রভাব মোকাবিলায় সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের দ্রুত ঋণ দেওয়ার সহায়ক নীতিমালা’। সিএমএসএমই বলতে বোঝানো হয়েছে কুটির, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের উদ্যোক্তাদের। এসব উদ্যোক্তাকে চলতি মূলধনের চাহিদা পূরণ করা এই নীতিমালার উদ্দেশ্য।

এ বিষয়ে জানতে চাইল আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ বি এম রুহুল আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নতুন কোনো মতামত না পেলে শিগগির এ নীতিমালা চূড়ান্ত করা হবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংক শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ সুদে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে টাকা দেবে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সেই টাকা ২ শতাংশ সুদে দেবে এমএফআই বা সংশ্লিষ্ট এনজিওগুলোকে। এনজিওগুলো পরে সেই টাকা ৯ শতাংশ সুদে গ্রাহকদের দেবে। তবে এনজিওগুলো সুদ পাবে ১৪ শতাংশ। গ্রাহকের ৯ শতাংশ সুদের বাইরে আরও ৫ শতাংশ সুদ সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে ভর্তুকি হিসেবে দেবে এনজিওগুলোকে।

খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ সুদে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে টাকা দেবে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সেই টাকা ২ শতাংশ সুদে দেবে এমএফআই বা সংশ্লিষ্ট এনজিওগুলোকে। এনজিওগুলো পরে সেই টাকা ৯ শতাংশ সুদে গ্রাহকদের দেবে। তবে এনজিওগুলো সুদ পাবে ১৪ শতাংশ। গ্রাহকের ৯ শতাংশ সুদের বাইরে আরও ৫ শতাংশ সুদ সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে ভর্তুকি হিসেবে দেবে এনজিওগুলোকে।

করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সরকার এখন পর্যন্ত ২১টি খাতের জন্য ১ লাখ ২১ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। সেই প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় সিএমএসএমই খাতে চলতি মূলধন দেওয়ার জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ এপ্রিল শুরু হওয়া এ প্যাকেজ থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ১০ হাজার ৯০০ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।

সিএমএসএমই খাতে ঋণ যাতে ভালোভাবে যায়, সে জন্য সরকারের পরামর্শে বাংলাদেশ ব্যাংক ১০ হাজার কোটি টাকার একটি আবর্তনশীল পুনঃ অর্থায়ন কর্মসূচিও গঠন করেছে। বর্তমানে ৫৬টি ব্যাংক ও ২০টি নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান সিএমএসএমই খাতের প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে জড়িত। অর্থ মন্ত্রণালয়ের খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে এনজিওগুলো যে ঋণ নেবে, তার বিপরীতে ঋণ পরিশোধের ঘোষণাপত্র এবং ঋণস্থিতি জামানত হিসেবে রাখতে হবে। ঋণ পাবে তারা দুই বছরের জন্য। একটি এনজিও সর্বোচ্চ তিনটি ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবে।

একক বা গ্রুপ—যেভাবেই হোক না কেন, এই প্যাকেজের আওতায় কোনো গ্রাহক ৫০ লাখ টাকার বেশি ঋণ পাবে না। এর মধ্যে কুটির শিল্প পাবে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ। এ ছাড়া অতি ক্ষুদ্র সর্বোচ্চ ৩০ লাখ এবং ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান পাবে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ। ঋণের টাকায় কোনো গ্রাহক তার আগে নেওয়া কোনো ঋণ সমন্বয় বা পরিশোধ করতে পারবেন না।

নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, একক বা গ্রুপ—যেভাবেই হোক না কেন, এই প্যাকেজের আওতায় কোনো গ্রাহক ৫০ লাখ টাকার বেশি ঋণ পাবে না। এর মধ্যে কুটির শিল্প পাবে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ। এ ছাড়া অতি ক্ষুদ্র সর্বোচ্চ ৩০ লাখ এবং ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান পাবে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ। ঋণের টাকায় কোনো গ্রাহক তার আগে নেওয়া কোনো ঋণ সমন্বয় বা পরিশোধ করতে পারবেন না। গ্রাহক পর্যায়ে প্যাকেজের ৪০ শতাংশ ট্রেডিং খাতে এবং ৬০ শতাংশ উৎপাদন ও সেবা খাতে বিতরণ করতে হবে। আর উদ্যোক্তারা প্যাকেজের আওতায় ভর্তুকি সুবিধা পাবেন এক বছর।

নির্বাচিত গ্রাহকদের ঋণ আবেদনের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্মনিবন্ধন সনদ অথবা পাসপোর্টের কপি অথবা ট্রেড লাইসেন্স অথবা সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার কাউন্সিলরের অথবা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের অথবা স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের প্রত্যয়নপত্র লাগবে। পাশাপাশি লাগবে অন্য দুজনের নিশ্চয়তাপত্র (গ্যারান্টি)।

সরকারের উদ্যোগটিকে স্বাগত জানাই। তবে নীতিমালাটি জলদি চূড়ান্ত হওয়া উচিত। কারণ, অনেক সিএমএসএমই প্রতিষ্ঠান চলতি মূলধনের অভাবে ব্যবসা গুটিয়ে বসে আছে।
হোসনে আরা বেগম, নির্বাহী পরিচালক, ঠেঙ্গামারা সবুজ সংঘ

অন্য দুজন কারা হবেন, পরিবারের সদস্য কেউ হবেন, না সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তি নাকি আত্মীয়স্বজন—এ ব্যাপারে কোনো ব্যাখ্যা বা সংজ্ঞা দেওয়া হয়নি খসড়া নীতিমালায়। একজন একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে নিশ্চয়তা দিলে তিনি অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষেও তা দিতে পারবেন কি না, তাও স্পষ্ট করে বলা হয়নি।

২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত খসড়া নীতিমালার ওপর যে কেউ মতামত দিতে পারবেন বলে জানিয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

যোগাযোগ করলে দেশের অন্যতম বেসরকারি সংস্থা ঠেঙ্গামারা সবুজ সংঘের (টিএমএসএস) নির্বাহী পরিচালক হোসনে আরা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারের উদ্যোগটিকে স্বাগত জানাই। তবে নীতিমালাটি জলদি চূড়ান্ত হওয়া উচিত। কারণ, অনেক সিএমএসএমই প্রতিষ্ঠান চলতি মূলধনের অভাবে ব্যবসা গুটিয়ে বসে আছে।’