সন্দেহজনক লেনদেন বেড়ে দেড় গুণ 

২০২১-২২ অর্থবছরে সন্দেহজনক লেনদেন (এসটিআর) ও সন্দেহজনক কার্যক্রম (এসএআর) প্রতিবেদন হয়েছে ৮ হাজার ৫৭১টি।  

দেশে আর্থিক খাতে সন্দেহজনক লেনদেন বেড়ে গেছে। এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে সন্দেহজনক লেনদেন দেড় গুণের বেশি বেড়েছে। আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিএফআইইউ।  

বিএফআইউর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে সন্দেহজনক লেনদেন (এসটিআর) ও সন্দেহজনক কার্যক্রম (এসএআর) প্রতিবেদন হয়েছে ৮ হাজার ৫৭১টি। ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল ৫ হাজার ২৮০টি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছিল ৩ হাজার ৬৭৫টি। ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্যাংকে সন্দেহজনক লেনদেন দেড় গুণের বেশি বেড়েছে, কমেছে রেমিট্যান্স কোম্পানির প্রতিবেদন। 

বিএফআইইউর প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন সংস্থাটির প্রধান মো. মাসুদ বিশ্বাস

বিএফআইইউর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮–১৯ সাল থেকে ব্যাংক খাতে ধারাবাহিকভাবে সন্দেহজনক লেনদেন বাড়ছে। ২০১৮–১৯ অর্থবছরে সন্দেহজনক লেনদেনের প্রতিবেদন হয়েছিল ৩ হাজার ৫৭৩টি। ২০১৯–২০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৬৭৫টিতে। আর ২০২০–২১ সালে প্রথমবারের মতো এ ধরনের লেনদেন ৫ হাজার ছাড়িয়ে যায়। আর সর্বশেষ গত অর্থবছরে তা সাড়ে ৮ হাজারে পৌঁছেছে। গত অর্থবছরে যেসব সন্দেহজনক লেনদেন রেকর্ড করা হয়েছে, তার মধ্যে ৪ হাজার ২১৮টি এসটিআর আর ৪ হাজার ৩৫৩টি এসএআর লেনদেন। গত অর্থবছর সন্দেহজনক যেসব লেনদেন নথিভুক্ত করা হয়েছে, তার মাধ্যমে প্রায় ২ হাজার ৩৫০ কোটি টাকার লেনদেন হয়। আগের অর্থবছরে সন্দেহজনক যেসব লেনদেন নথিভুক্ত করা হয়েছিল, তার মাধ্যমে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা। 

বিএফআইইউ বলছে, দেশের আর্থিক খাতের সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয় ব্যাংকের মাধ্যমে। তাই ব্যাংকের নানা ধরনের সেবা, পণ্য ও নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমে অর্থায়নের ঝুঁকি রয়েছে।

তবে প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে বিএফআইইউ প্রধান মো. মাসুদ বিশ্বাস বলেন, করোনার কারণে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ বিতরণ বেড়েছে। এর ফলে সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে। সন্দেহজনক প্রতিবেদন মানেই অপরাধ বা অবৈধ অর্থ না। প্রতিবেদনদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো সতর্ক ও সচেতন হওয়ায় প্রতিবেদন বেড়েছে। 

 এদিকে গত অর্থবছরে নগদ জমা লেনদেনের (সিটিআর) প্রতিবেদন হয়েছে ২১ হাজার ১১৩টি, ২০২০-২১ অর্থবছরে যা ছিল ১৪ হাজার ৪৩৮টি। ব্যাংকে ১০ লাখ টাকার বেশি জমা বা উত্তোলন হলে সিটিআর প্রতিবেদন করে থাকে। 

এসটিআর ও সিটিআরের ভিত্তিতে বিএফআইইউ গত অর্থবছরে ৮৪টি প্রতিবেদন বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে পাঠিয়েছে। আগের অর্থবছরে ছিল ৭৩টি এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছিল ১১৬টি। গত অর্থবছরে বিএফআইইউ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) ৩৬টি, দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) ১৩টি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) ২টি, পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি) ১টি ও অন্য সংস্থার কাছে ৩২টি প্রতিবেদন পাঠিয়েছে। 

সীমান্ত এলাকাগুলোতে নগদ লেনদেন বেড়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নগদ লেনদেন যথাযথ তদারকির আওতায় আনা প্রয়োজন। নগদ লেনদেনের ধরন বিবেচনা করে সীমান্ত এলাকায় নজরদারি জোরদার করতে বলেছে বিএফআইইউ।

এদিকে ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা লেনদেন নিয়েও বিএফআইইউর কাছে আগের চেয়ে বেশি তথ্য দিয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ২০২১-২২ এমন প্রতিবেদন এসেছে ৪৯টি, ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল ১৫টি।

এদিকে গত অর্থবছরে বড় অংশ জুড়ে বিএফআইইউ কর্মকর্তারা ব্যস্ত ছিলেন আলোচিত ই-কমার্স খাতের লেনদেন ও টাকার গন্তব্য পরিদর্শনে। গত অর্থবছরে ৫২টি ই-কমার্স নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে সংস্থাটি। এর মধ্যে ৩০টি জমা দেওয়া হয় উচ্চ আদালতে। ২০টি ই-কমার্সে লেনদেন হয় ১ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা এবং উত্তোলন হয় ১ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা। পাশাপাশি ডিজিটাল হুন্ডি নিয়েও বেশ কিছু কাজ করে। এর ধারাবাহিকতায় কয়েক হাজার এজেন্ট ও কয়েকজন পরিবেশকের লাইসেন্স বাতিল করা হয়। 

গত অর্থবছরে বিদেশি এফআইইউ থেকে তথ্য প্রদানের ২৬টি আবেদন পায় বিএফআইইউ, আর বিএফআইইউ তথ্য চেয়ে আবেদন পাঠায় ১০৩টি।