সীমার বেশি ঋণে সায় দিল না কেন্দ্রীয় ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংকফাইল ছবি

ঋণের পরিমাণ নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে না নামিয়ে উল্টো সীমার বেশি ঋণ পেতে বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করেছে বড় কয়েকটি শিল্প গ্রুপ। আবার ব্যবসায়ীদের দুটি সংগঠনও ঋণের ঊর্ধ্বসীমা শিথিল করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চিঠি দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়ে দিয়েছে, ব্যাংক খাতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য একক ঋণসীমা কোনোভাবেই লঙ্ঘন করা যাবে না। বরং যেসব আবেদন করা হচ্ছে, তা নির্দেশনার পরিপন্থী।

ব্যাংক কোম্পানি আইনে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা গ্রুপকে ঋণ প্রদানের সীমা কোনোভাবেই ওই ব্যাংকের রক্ষিত মূলধনের ২৫ ভাগের বেশি হবে না। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালে এক নির্দেশনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, নন ফান্ডেড ও ফান্ডেড ঋণ (সুদ ছাড়া) মিলিয়ে একটি গ্রুপ কোনোভাবেই ২৫ শতাংশের বেশি ঋণ পাবে না। এ ক্ষেত্রে ফান্ডেড ঋণ হবে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ।

তবে সব ধরনের নন ফান্ডেড ঋণে ১০০ টাকার দায়কে ৫০ টাকা ও বিদ্যুৎ খাতের ১০০ টাকার দায়কে ২৫ টাকা হিসাবে গণনা করতে হবে। এর ফলে রপ্তানিমুখী খাতের ঋণের সীমা বেড়ে হয় ৩৫ শতাংশ ও বিদ্যুৎ খাতের সীমা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৫ শতাংশ। এতে অবশ্য রপ্তানিমুখী খাতের ঋণের সীমা আগের চেয়ে প্রায় ১৫ শতাংশ কমে যায়। রপ্তানিমুখী খাতের ৯০ শতাংশ ঋণ পোশাক খাতসংশ্লিষ্ট। আগে হিসাব হতো সুদসহ, এরপর হিসাব শুরু হয় মূল ঋণ ও ঋণসুবিধা। এ জন্য বেশ কয়েকটি ব্যবসায়ী গ্রুপ সমস্যায় পড়ে যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাষ্ট্রমালিকানাধীন জনতা ব্যাংকের ঋণের প্রায় অর্ধেকই নিয়ে গেছে তিনটি গ্রুপ। তবে গ্রুপ তিনটি নানা ভাগে ভাগ করে বাংলাদেশ ব্যাংকে রিপোর্ট জমা দিচ্ছে এই ব্যাংক। একইভাবে ইসলামী ব্যাংকের এক–তৃতীয়াংশ ঋণ নামে-বেনামে একটি শিল্প গ্রুপের কাছে চলে গেছে। তবে ব্যাংকটি একই গ্রুপভুক্ত না করে বিভিন্ন নামে এসব ঋণের তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দিচ্ছে। একই ঘটনা ঘটেছে ইসলামি ধারার আরও কয়েকটি ব্যাংকে। ফলে তাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

অন্যদিকে প্রকৃত ও ভালো উদ্যোক্তারা ঋণ পেতে সমস্যায় পড়ছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমএ) ঋণের সীমা শিথিল করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চিঠি দিয়েছে। একই ধরনের চিঠি দেয় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।

জানতে চাইলে বিসিএমএ সভাপতি মো. আলমগীর কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকের ঋণসীমা অতিক্রম করে যাচ্ছে। আবার যে ব্যাংকে ঋণ সীমা আছে, সেখানে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারছে না। এতে ব্যবসা করতে সমস্যা হচ্ছে। এ জন্য আমরা ঋণের সীমা শিথিল করার আবেদন করেছিলাম।’

তবে ঋণের সীমা বৃদ্ধির আবেদন কেন্দ্রীয় ব্যাংক নাকচ করে দিয়েছে। ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি গতকাল বুধবার এক প্রজ্ঞাপনে বলেছে, যেসব গ্রাহকের নির্ধারিত একক গ্রাহক ঋণসীমা অতিক্রম করেছিল, তাঁদের ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ঋণ নির্ধারিত সীমার মধ্যে নামিয়ে আনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। এরপরও কিছু গ্রাহক একক গ্রাহক ঋণের ঊর্ধ্বসীমা শিথিল করার জন্য আবেদন করছেন, যা নির্দেশনার পরিপন্থী। এমন প্রেক্ষাপটে বৃহৎ ঋণঝুঁকি হ্রাস, করপোরেট সুশাসন সমুন্নত রাখা এবং ঋণ বিতরণে উত্তম চর্চা নিশ্চিত করার মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য একক গ্রাহক ঋণ সীমা কোনোক্রমেই অতিক্রম না করার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া যাচ্ছে।