রিজার্ভ চুরির মামলায় পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে যা বলছে বাংলাদেশ ব্যাংক

রিজার্ভ চুরি

রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি) বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের করা মামলা চালিয়ে নেওয়ার বিষয়ে সম্প্রতি অনুমতি দিয়েছেন নিউইয়র্কের একটি আদালত। আদালতের এ রায়কে স্বাগত জানিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, আদালতের ওই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে পর্যালোচনা করছে।

আজ সোমবার এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক এ কথা জানিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, আরসিবিসি যে শুরু থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংকে চুরির ঘটনায় সম্পৃক্ত ছিল, এটি প্রমাণের সুযোগকে বাংলাদেশ ব্যাংক স্বাগত জানায়। ফার্স্ট কোর্টের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ ব্যাংককে বিবাদীদের বিরুদ্ধে জালিয়াতিসহ অন্যান্য অভিযোগে নিউইয়র্কে অর্থাৎ যেখান থেকে অর্থ চুরি হয়েছিল, সেখানে মামলা পরিচালনার সুযোগ করে দিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ফার্স্ট কোর্টের আলোচ্য রায়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। কারণ, এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারের প্রক্রিয়া আরও একধাপ এগিয়ে গেল। আদালতের ওই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে পর্যালোচনা করছে।

কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে, সে বিষয়ে বিবৃতিতে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সংস্থাটি বলেছে, এসব পদক্ষেপ শুধু আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের আপিল বা আরসিবিসি এবং কিম অং-এর আপিলের (যদি করে) জবাব প্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। বরং বিচারিক আদালতে চলমান অর্থ পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ২৭ মে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাদের বিরুদ্ধে অর্থ রূপান্তর, চুরি, আত্মসাৎ—এ ধরনের কর্মকাণ্ডে সহায়তা বা প্ররোচনা, জালিয়াতি (আরসিবিসির বিরুদ্ধে), জালিয়াতিতে সহায়তা বা প্ররোচনাসহ বেশ কিছু অভিযোগ আনা হয়।

গত শনিবার ফিলিপাইনের গণমাধ্যম এনকোয়ারার ডট নেট জানায়, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি এক আদেশে নিউইয়র্ক আদালত বাংলাদেশের করা মামলা চালিয়ে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। তবে তিনটি ‘কজ অব অ্যাকশনের’ আইনি ভিত্তি নেই বলে জানিয়েছেন আদালত। আদালত আরসিবিসি ব্যাংক ও সব বিবাদীর বিরুদ্ধে অর্থ রূপান্তর, চুরি, আত্মসাৎ—এ ধরনের কর্মকাণ্ডে সহায়তা বা প্ররোচনা, জালিয়াতি, জালিয়াতিতে সহায়তা বা প্ররোচনা, এসব অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন।

এ ছাড়া ব্যক্তিগত এখতিয়ার না থাকায় আরও চারজন বিবাদীকে মামলা থেকে খারিজ দিয়েছেন আদালত। তাঁরা হলেন ইসমায়েল রেয়েস, ব্রিজিত ক্যাপিনা, রোমুয়ালদো আগারাদো ও নেস্তর পিনেদা।

তবে নিউইয়র্কের আদালত জানিয়েছেন, আরসিবিসি ও অন্যান্য বিবাদীর বিরুদ্ধে অন্য অভিযোগে মামলা চলতে পারে, যেমন যে অর্থ আরসিবিসিতে গেছে, তা ফেরত দেওয়া।

নিউইয়র্কের আদালত বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে রায় প্রদান করেছেন এমন উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিবৃতিতে বলা হয়, ফার্স্ট ডিপার্টমেন্টের রায়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের জয় হয়েছে। আদালত নিশ্চিত করেছেন যে আরসিবিসির কর্মকর্তা ও কিম অং কর্তৃক বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সংঘটিত অপরাধের জন্য আলোচ্য বিবাদীদেরকে দায়ী করা যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, নিউইয়র্কের ফার্স্ট কোর্ট তাঁর রায়ে উল্লেখ করেছেন যে বাংলাদেশ ব্যাংক বিবাদীদের বিপক্ষে জালিয়াতি, অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন, অনধিকার প্রবেশ এবং অর্থ গ্রহণ প্রভৃতি অভিযোগ নিয়ে অগ্রসর হতে পারে। আদালতের এই সিদ্ধান্ত প্রকারান্তরে বাংলাদেশ ব্যাংকে সংঘটিত চুরির সহযোগীদের বিরুদ্ধে নিউইয়র্কে ব্যবস্থা গ্রহণসংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছে।

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুইফট ব্যবস্থা কাজে লাগিয়ে ৩৫টি ভুয়া বার্তার মাধ্যমে ফেডারেল রিজার্ভের নিউইয়র্ক শাখায় বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০০ কোটি ডলার চুরির চেষ্টা চালান অপরাধীরা। এর মধ্যে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার লোপাট করতে সক্ষম হন তাঁরা। অর্থের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় যায় ২ কোটি ডলার, যে অর্থ অবশ্য উদ্ধার করা হয়েছে, তবে বাকি ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার আরসিবিসি ব্যাংক হয়ে ফিলিপাইনের বিভিন্ন ক্যাসিনোয় ঢুকে যায়। চুরি যাওয়া অর্থের মধ্যে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৩ কোটি ৪৬ লাখ ডলার উদ্ধার করা হয়েছে; বাকি ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার এখনো পাওয়া যায়নি।