কেন অনেক ব্যাংক ঈদের সময় নগদ টাকার সংকটে পড়েছিল

কোরবানির ঈদে পশু কেনাবেচাসহ চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী ও গ্রাহকদের কাছে নগদ টাকার চাহিদা খুব বেড়ে গিয়েছিল। সে তুলনায় সরবরাহ ছিল কম।

টাকাফাইল ছবি

এবারের ঈদের আগে ও ছুটিতে দেশের বেশির ভাগ ব্যাংক নগদ টাকার সংকটে পড়েছিল। ফলে অনেক ব্যাংকের শাখা থেকে গ্রাহকেরা চাহিদামতো টাকা তুলতে পারেননি। আবার অনেক ব্যাংকের এটিএম বুথেও পর্যাপ্ত টাকা ছিল না। কিছু ব্যাংকের এটিএম থেকে অন্য ব্যাংকের গ্রাহকেরা টাকা তুলতে পারেননি। এতে গ্রাহকেরা ভোগান্তিতে পড়েন।

পরিস্থিতি সামাল দিতে ঈদের আগে শেষ কর্মদিবসে ব্যাংকগুলোকে রেকর্ড সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা ধার দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরও পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি হয়নি। অর্থাৎ নগদ টাকার চাহিদা ছিল আরও বেশি। ঈদের পর অবশ্য সংকট কেটে গেছে। বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তা, গ্রাহক ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

ব্যাংকাররা বলছেন, সাধারণত ঈদের সময় নগদ টাকার চাহিদা বেড়ে যায়। তবে এবার একদিকে ব্যাংকগুলোয় টাকার সংকট ছিল, অন্যদিকে নগদ টাকা তোলার চাপও বেশি ছিল। কারণ, কোরবানির পশু কেনার প্রায় পুরোটাই নগদ টাকায় হয়ে থাকে। চাকরিজীবীরা বেতন-বোনাসের পুরোটাই তুলে নেন। আবার ব্যবসায়ী ও অন্য গ্রাহকেরাও নগদ টাকা তোলেন। ফলে টাকা তোলার চাপ এবার অনেক বেশি ছিল। এ কারণে সংকট তৈরি হয়েছিল।

সরকারি সংস্থা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবমতে, এবারের ঈদুল আজহায় ১ কোটি ৪ লাখ পশু কোরবানি হয়েছে। প্রতিটি পশুর গড় দাম ৭৫ হাজার টাকা ধরে হিসাব করলে এবারের কোরবানির হাটগুলোয় ৭৮ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। কোরবানির হাটের সিংহভাগ লেনদেন হয় নগদে। ফলে টাকার চাহিদা এ সময়ে বেড়ে যায়।

জানা যায়, দেশে গত এপ্রিলে ছাপানো টাকার পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৭১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে মানুষের হাতে ছিল ২ লাখ ৬৪ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা। আর ব্যাংকের ভল্টে ছিল ২৬ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা। ওই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে ব্যাংকগুলোর ৬৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকা জমা ছিল।

এবার ঈদুল আজহা উদ্‌যাপিত হয় ১৭ জুন। এর আগে ১৫ জুন রাত ১০টার দিকে বিধান সরকার নামের একজন গ্রাহক ঢাকা ব্যাংকের কার্ড দিয়ে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ইসলামী ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক ও এনসিসি ব্যাংকের এটিএম থেকে টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরদিন কক্সবাজারের কলাতলী এলাকার ইসলামী ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকেও তিনি ১০ হাজার টাকা তুলতে গিয়ে ব্যর্থ হন। পরে অবশ্য ওই বুথ থেকে তিনি পাঁচ হাজার টাকা তোলার সুযোগ পান। ওই সময়ে বুথটিতে সাইনবোর্ড ঝুলছিল, অন্য ব্যাংকের কার্ড দিয়ে একবারে পাঁচ হাজার টাকার বেশি তোলা যাবে না। একই রকম অভিজ্ঞতা হয়েছে রাজধানীর আশকোনা, রংপুর, পঞ্চগড়, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন এলাকার গ্রাহকদের।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুনেছি, এবার অনেক ব্যাংকের শাখায় ও এটিএমে টাকার সংকট হয়েছিল। এ জন্য কোনো কোনো ব্যাংক এনপিএসবি সেবাও বন্ধ করে দিয়েছিল। এমনিতে কিছু ব্যাংক টাকার সংকটে আছে। আবার কোরবানির কারণে নগদ টাকা উত্তোলন অনেক বেড়ে গিয়েছিল। বিশেষ করে ঈদের আগে ব্যাংক থেকে মোবাইলে আর্থিক সেবার (এমএফএস) এজেন্টরা অনেক টাকা উত্তোলন করে নেন। ঋণ আদায়ও বেশ কম। এ জন্য এই সমস্যা হয়েছিল। এখন তা কেটে গেছে।’

ব্যাংকগুলোয় টাকার সংকট হলে অন্য ব্যাংক থেকে টাকা ধার করে। তবে এবার আন্তব্যাংক লেনদেনের ক্ষেত্রে সুদের হার সাড়ে ১২ শতাংশ পর্যন্ত ওঠে। এতে ব্যর্থ হলে তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের শরণাপন্ন হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়ে দেয়, এবারে কেউ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা ধার নিয়ে অন্য ব্যাংককে ধার দিতে পারবে না। এর মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে অযৌক্তিক মুনাফা করার পথ বন্ধ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশে ব্যাংক ১, ৭, ১৪ ও ২৮ দিন মেয়াদে ধার দেয়। এই ধারে সুদের হার ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত ওঠে। ৯ জুন বাংলাদেশ ব্যাংক ১৩ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা, ১০ জুন ১৫ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা, ১১ জুন ১৩ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা, ১২ জুন ১৮ হাজার ২২ কোটি টাকা ও ঈদের আগে শেষ কর্মদিবস ১৩ জুন ২২ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা ধার দেয়।