আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানতকারী কমলেও আমানত বেড়েছে 

বাংলাদেশ ব্যাংকের লোগো

টাকা ফেরত দিতে না পারায় আস্থাহীনতার কারণে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে (এনবিএফআই) আমানতকারীর সংখ্যা এক বছরের ব্যবধানে কমে গেছে। তবে এই সময়ে আমানত কিছুটা বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে লিজ ও ঋণ। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সাল শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৪ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা, যা এক বছর আগে ছিল ৪৩ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। অর্থাৎ আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ৪৬ শতাংশ। অন্যদিকে গত বছর শেষে আমানত হিসাবের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৩১ হাজার ২২১। তার আগের বছর, অর্থাৎ ২০২২ সালে আমানত হিসাবের সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ২১ হাজার ৫৫৬। সে হিসাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানত হিসাব কমেছে প্রায় ১৭ শতাংশ।

গত ডিসেম্বরে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে ঋণের স্থিতি ছিল ৭৩ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা। আগের বছরের চেয়ে যা ৩ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকা বা ৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেশি। ২০২২ সালে এসব প্রতিষ্ঠানে ঋণের স্থিতি ছিল ৭০ হাজার ৩২১ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত এসব প্রতিষ্ঠানের দেওয়া ঋণের সুবিধাভোগী হিসাবের সংখ্যা ছিল ২ লাখ ১৯ হাজার ৭০৫।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে স্থায়ী আমানতের পরিমাণ ২০২২ সালের চেয়ে টাকার অঙ্কে বাড়লেও মোট আমানতের আনুপাতিক হারে কমেছে। গত ডিসেম্বর শেষে স্থায়ী আমানতের পরিমাণ ছিল ৪৩ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা, যা মোট আমানতের ৯৭ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। ২০২২ সাল শেষে তা ৯৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ ছিল।

মোট আমানতের মধ্যে ৪১ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা বা ৯২ দশমিক ৪৫ শতাংশই ঢাকা বিভাগের। আর সর্বনিম্ন ৫৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকার আমানত রয়েছে বরিশাল বিভাগের, যা মোট আমানতের শূন্য দশমিক ১২ শতাংশ। আমানতের মতো ঋণের সিংহভাগও ঢাকা বিভাগে। গত ডিসেম্বর শেষে মোট ঋণের মধ্যে ৬১ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা বা ৮৩ দশমিক ৩১ শতাংশ ঢাকা বিভাগেই দেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে কম ঋণ স্থিতিও বরিশাল বিভাগে, ৩৭১ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ।

বর্তমানে সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলয়ে ৩৫টি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মোট ৩০৮টি শাখা রয়েছে, যার ২৮৬টি শহর এলাকায়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর শেষে এ খাতে গড় সুদহার ছিল ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ। এর মধ্যে ঋণের ক্ষেত্রে গড় সুদহার ছিল ১০ দশমিক ৮৮ শতাংশ। ভোক্তা ঋণে সর্বোচ্চ সুদহার ছিল ১১ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ‘স্মার্ট (সিক্স মান্থস মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল) সুদহারের সঙ্গে সর্বোচ্চ আড়াই শতাংশ অতিরিক্ত সুদ যোগ করে আমানত এবং সাড়ে ৫ শতাংশ বাড়তি সুদ যোগ করে ঋণের সুদহার নির্ধারণ করতে পারবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। তাতে মার্চে নতুন আমানতের সুদহার বেড়ে হয়েছে ১২ দশমিক ১১ শতাংশ। আর ঋণের সুদহার বেড়ে হয়েছে সর্বোচ্চ ১৫ দশমিক ১১ শতাংশ।