বছরজুড়ে চলা সংকটে ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম ৫ শতাংশ বেড়ে ১১০ টাকা হয়েছে। তবে ব্যাংকগুলো আমদানি দায় মেটাতে ডলারের দাম নিচ্ছে ১২০ টাকার বেশি। কারণ, ব্যাংকগুলো প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স কিনছে ঘোষণার চেয়ে বেশি দামে। এর পরও বিদায়ী বছরে প্রবাসী আয়ে বড় প্রবৃদ্ধি হয়নি। যদিও গত বছর রেকর্ড পরিমাণ জনশক্তি রপ্তানি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ২ হাজার ১৯০ কোটি ডলার। ২০২২ সালে এসেছিল ২ হাজার ১৩০ কোটি ডলার। ফলে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৩ শতাংশ। এর আগে ২০২১ সালে প্রবাসী আয় এসেছিল ২ হাজার ২০৭ কোটি ডলার। এর আগে ২০২০ সালে আসে দুই হাজার ১৭৩ কোটি ডলার। আর ২০১৯ সালে এসেছিল ১ হাজার ৮৩৩ কোটি ডলার।
সেই হিসাবে গত পাঁচ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় এসেছে গত বছর। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রবাসী আয়ে যে প্রবৃদ্ধি তা কাঙ্ক্ষিত নয়। এ আয়ে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনে ভারসাম্য বজায় রাখা কঠিন হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সদ্য বিদায়ী ডিসেম্বর মাসে গত ছয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় এসেছে। এ মাসে প্রবাসী আয় এসেছে ১৯৯ কোটি ডলার। এর আগে সর্বশেষ গত জুনে ২১৯ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় দেশে এসেছিল।
এদিকে ২০২৩ সাল বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে চলতি ২০২৩–২৪ অর্থবছরেরও প্রথমার্ধ শেষ হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে, অর্থাৎ জুলাই-ডিসেম্বরে সব মিলিয়ে প্রবাসী আয় এসেছে ১ হাজার ৮০ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ১ হাজার ৫১ কোটি ডলার। তাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে পৌনে ৩ শতাংশ।
জনশক্তি রপ্তানি ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে বিভিন্ন দেশে গেছেন ১২ লাখ ১০ হাজারের বেশি কর্মী। ২০২২ সালে সব মিলিয়ে বিদেশে কর্মী গিয়েছিলেন ১১ লাখ ৩৬ হাজার। গত বছর কর্মী বেশি গেলেও প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে তার প্রভাব পড়েনি।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, প্রবাসীরা ঠিকই দেশে অর্থ পাঠাচ্ছেন। তাঁদের পরিবারগুলোও অন্যদের তুলনায় ভালো আছে। অর্থ পাচার অব্যাহত থাকায় বৈধ পথে প্রবাসী আয় বাড়ছে না। প্রবাসীদের ডলার বিদেশ থেকেই পাচারকারীরা কিনে ফেলছে। অর্থ পাচার হচ্ছে, এ জন্য ডলার–সংকট হয়েছে। এর পরও কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক ও নোমাডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, গত বছরের শেষে আনুষ্ঠানিক তথা বৈধ চ্যানেলে বাংলাদেশের মোট প্রবাসী আয়ের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ২৩ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলারে; কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসেছে ২ হাজার ১৯০ কোটি ডলার।
ডলার–সংকটের কারণে গত বছর ডলারের দাম নিয়ে নানা পরীক্ষা, বেশি দামে প্রবাসী আয় কেনা, প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বাড়াতে অতিরিক্ত প্রণোদনা প্রদানসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর পরও বৈধ পথে প্রবাসী আয় কাঙ্ক্ষিত হারে বাড়েনি। প্রবাসীরা এখন বৈধ পথে আয় পাঠালে প্রতি ডলারের বিপরীতে পাচ্ছেন ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। দেড় মাস আগে প্রবাসীদের ডলারের দাম ছিল ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। এর সঙ্গে সরকারের আড়াই শতাংশ প্রণোদনার পাশাপাশি ব্যাংকগুলোও সমপরিমাণ প্রণোদনা দিচ্ছে।
বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরামর্শে ডলারের দাম নির্ধারণ করছে। এখন কিছু ব্যাংক ১২৩ টাকা দামেও প্রবাসী আয় কিনছে। এতে পুরো প্রবাসী আয়ের বাজারে একধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। কয়েকটি ব্যাংক বেশি দামে প্রবাসী আয় কিনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বিক্রি করেছে। এভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন রিজার্ভও বাড়াচ্ছে।