রাজধানী
‘ক্যাশলেস’ কেনাকাটা করলেই ছাড়
ঈদ ঘিরে মানুষের কেনাকাটা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। পোশাক, গয়না, খাবার থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় থাকে নানা অফার।
শ্যামলীর রিং রোডের একটি পোশাকের দোকানের আউটলেট থেকে অমিয়া আহমেদ আত্মীয়ের জন্য কিছু পোশাক কিনলেন। বিল দেওয়ার সময় চোখে পড়ল, তিনি যদি তাঁর ব্র্যাক ব্যাংকের কার্ড থেকে কেনাকাটা করেন, তবে ১৫ শতাংশ ছাড় পাবেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি নগদ টাকা রেখে কার্ডে বিল পরিশোধ করেন।
পবিত্র ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে মানুষের কেনাকাটা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। পোশাক, গয়না, খাবার থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় থাকে নানা অফার। গ্রাহকেরাও কেনাকাটা করতে গিয়ে এসব অফারের খোঁজ করতে থাকেন। সারা বছরই ব্যাংক ও আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নানা রকমের অফার থাকে। তবে ঈদ ঘিরে বরাবরের মতো এবারও দেশের ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের জন্য বিশেষ ছাড়ের সুবিধা রেখেছে।
গত শনিবার অমিয়া গিয়েছিলেন রাজধানীর শ্যামলীর আর্টিসানের একটি আউটলেটে। সেখানেই তিনি কেনাকাটার ওপর ১৫ শতাংশ ছাড় পান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এর পর থেকে তিনি কেনাকাটার সময় অফারগুলো বিশেষভাবে বিবেচনায় রাখবেন।
আর্টিসানের শ্যামলী আউটলেটের ব্যবস্থাপক জহিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের কাছে ৬টি ব্যাংকের কার্ডে কেনাকাটায় ১৫ শতাংশ ছাড় রয়েছে। এ ছাড়া বিকাশে ক্যাশব্যাক অফারও আছে। তিনি আরও জানান, যাঁরা কার্ড সঙ্গে রাখেন, তাঁরা সাধারণত নগদ টাকায় কম কেনাকাটা করেন। এ ছাড়া বিল পরিশোধের সময় সবাইকেই অফারগুলোর ব্যাপারে জানানো হয়।
কোথায় কী অফার
ব্র্যাক ব্যাংকের কার্ডে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় থাকছে। বিভিন্ন পাঁচ তারকা হোটেল ও রেস্তোরাঁ থেকে বুফে ইফতার ও সাহ্রিতে একটি কিনলে সঙ্গে এক বা একাধিক ফ্রি অফার থাকছে। এ ছাড়া রেস্তোরাঁ, লাইফস্টাইল ও ই-কমার্স, ভ্রমণ, ইলেকট্রনিকসেও থাকছে এসব ছাড়।
সিটি ব্যাংকের আমেরিকান এক্সপ্রেস কার্ডে ৫০০-এর বেশি ব্র্যান্ডে ১০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় রয়েছে। এর মধ্যে থাকছে লাইফস্টাইল, খাবার ও ভ্রমণে।
কার্ডের সঙ্গে সঙ্গে এখন মুঠোফোনে আর্থিক লেনদেন করে, এমন প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়েছে। ফলে প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে। সবাই নিজেদের গ্রাহকদের জন্য নানা অফার নিয়ে আসছে।
রেস্তোরাঁ, লাইফস্টাইল, জুয়েলারি ও মেকওভার, ই-কমার্সসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডে ইস্টার্ণ ব্যাংকের গ্রাহকেরা কার্ডে পাবেন ৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়।
ডাচ্বাংলা ব্যাংকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডে কেনাকাটায় ২০ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাশব্যাক অফার রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন রেস্তোরাঁ থেকে ইফতারি ও ডিনার একটি কিনলে তিনটি পর্যন্ত ফ্রি অফার থাকছে।
প্রাইম ব্যাংকের কেনাকাটায় ক্রেডিট কার্ডে আসবাব, ভ্রমণ, খাবার, লাইফস্টাইলসহ বিভিন্ন খাতের কেনাকাটায় ১০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যাবে।
ক্যাশব্যাক, পয়েন্ট অর্জন, ছাড়সহ বিভিন্ন অফার এনেছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক। এ ছাড়া বুফে ইফতার ও সাহ্রিতেও অফার রয়েছে তাদের কার্ড ব্যবহার করলে।
লাইফস্টাইল, গ্রোসারি, ডাইনিং, অনলাইন শপ, ভ্রমণসহ বিভিন্ন খাতের ব্র্যান্ডে ঢাকা ব্যাংকের কার্ডে ১০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যাবে। লাইফস্টাইল ও মুদিদোকানের কেনাকাটায় যমুনা ব্যাংক দিচ্ছে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাশব্যাক অফার। লংকাবাংলা ফাইন্যান্স ১৯ ধরনের ব্র্যান্ডে ১০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়ের ব্যবস্থা রেখেছে।
প্রিমিয়ার ব্যাংক ব্র্যান্ড ও পণ্যে, খাবার এবং ভ্রমণে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় কার্ডে ছাড় দিচ্ছে।মিডল্যান্ড ব্যাংকেও কেনাকাটায় থাকছে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়।
ঈদে বিকাশেরও থাকছে ক্যাশব্যাক অফার। তাদের তালিকাভুক্ত নির্দিষ্ট ব্র্যান্ড থেকে কেনাকাটা করলে ৫ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাশব্যাক অফার পাওয়া যাবে। এ ছাড়া মুঠোফোনে আর্থিক লেনদেন প্রতিষ্ঠান নগদেও থাকছে নানা অফার।
এনআরবি ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহীন হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘কার্ডের সেবায় আমরা চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর মধ্যে শীর্ষে এবং সব ব্যাংকের মধ্যে শীর্ষ দশের মধ্যে আছি। ব্যাংকের ডিজিটাল সেবা ব্যবহারে গ্রাহকেরা আগের চেয়ে অনেক বেশি আগ্রহী। গ্রাহককে আকৃষ্ট করতে ঈদ সামনে রেখে নানা অফার দেওয়া হয়েছে।’
গ্রাহকেরাই খুঁজে নেন মূল্যছাড়
গ্রাহকেরা এখন কেনাকাটা করতে গেলে নিজেরাও এসব অফার খুঁজে নেন। এ ছাড়া ব্যাংকগুলো খুদে বার্তা পাঠানোর পাশাপাশি ফেসবুকেও অফার নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে।
দেশে পোশাক ও জুতাসহ বিভিন্ন পণ্যের কেনাকাটার বড় মৌসুম ঈদুল ফিতর। এর বাইরে পবিত্র ঈদুল আজহা ও পয়লা বৈশাখকে কেন্দ্রকে কেনাকাটা হয়। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাঁদের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় ঈদুল ফিতরে।
ঈদকেন্দ্রিক অর্থনীতি কত হাজার কোটি টাকার, তার সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের বড় এই উৎসবে শাড়ি, লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, জামা, জুতা থেকে শুরু করে গাড়ির মতো বিলাসী পণ্যের ব্যবসা চাঙা হয়। জনসংখ্যার একটি অংশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বছর বছর এই অর্থনীতির আকারও বড় হচ্ছে। সে জন্য ঈদকে কেন্দ্র করে ক্রেতা আকর্ষণে ব্যাংকের কার্ডে ছাড় দেওয়া হয়। যেসব প্রতিষ্ঠান ব্যাংক ও মুঠোফোনে আর্থিক সেবার মাধ্যমে ছাড় দেয়, তাদের বিক্রিও ভালো হয়। অন্যদিকে ব্যাংকের কার্ডের জনপ্রিয়তা বাড়ে।
সিটি ব্যাংকের রিটেইল ব্যাংকিং-প্রধান অরূপ হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, পেমেন্ট সেবা এখন অন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। কার্ডের সঙ্গে সঙ্গে এখন মুঠোফোনে আর্থিক লেনদেন করে, এমন প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়েছে। ফলে প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে। সবাই নিজেদের গ্রাহকদের জন্য নানা অফার নিয়ে আসছে। সিটি ব্যাংক তার সহযোগী অংশীদার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কেনাকাটায় অফার দিয়েছে, যা ব্যাংকের ওয়েবসাইটে গেলে পাওয়া যাবে। এ ছাড়া খুদে বার্তার মাধ্যমেও জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।