যেভাবে নিরাপদ হবে কার্ডনির্ভর লেনদেন
কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন হয় বলে বর্তমানে ক্যাশলেস লেনদেনের জনপ্রিয়তা ব্যাপকভাবে বাড়ছে। এতে নগদ অর্থ পরিবহনের বাড়তি ঝক্কিঝামেলা পোহাতে হয় না। সেই সঙ্গে লেনদেনও করা যায় খুব দ্রুত। বলা যায়, সহজ লেনদেনের একটি আধুনিক সমাধান হলো কার্ডনির্ভর লেনদেন। কেনাকাটা, বিল পরিশোধ, অনলাইন ট্রানজেকশন থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক লেনদেনেও কার্ডের ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে।
এ ছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তাব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় কার্ডে লেনদেন আগের চেয়ে অনেক বেশি নিরাপদ। তবু দেখা যায়, অনেকেই নানাভাবে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। প্রতারকেরা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে গ্রাহকের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন বিভিন্ন অঙ্কের টাকা। তবে একটু সচেতনতা এবং প্রতারকদের কৌশলগুলো সম্পর্কে অবগত থাকলে এই ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। চলুন জানা যাক, নিরাপদে লেনদেন করবেন কীভাবে।
স্কিমিং ও কার্ড ক্লোনিং প্রতারণা
স্কিমিং হলো প্রতারণার এমন একটি কৌশল, যেখানে প্রতারকেরা এটিএম মেশিন, পেমেন্ট টার্মিনাল বা পয়েন্ট-অব-সেলস ডিভাইসে স্কিমিং ডিভাইস বসিয়ে গ্রাহকের কার্ডের তথ্য চুরি করে। চুরি করা তথ্য দিয়ে তারা নকল কার্ড তৈরি করে এবং সেটি কেনাকাটা কিংবা অর্থ উত্তোলনে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে। প্রতারকদের হাত থেকে নিরাপদ থাকতে সব সময় সন্দেহজনক এটিএম মেশিনগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। কার্ড রিডারের ওপর কোনো অতিরিক্ত ডিভাইস লাগানো আছে কি না, তা ভালোভাবে পরীক্ষা করতে হবে। লেনদেনের ক্ষেত্রে পিন ইনপুট দেওয়ার সময় অন্য কেউ দেখছে কি না, সেদিকেও দিতে হবে বিশেষ নজর।
‘পরিচয় চুরি’ বা আইডেনটিটি থেফ্ট
পরিচয় চুরি বা আইডেনটিটি থেফ্ট একটি ভয়াবহ সাইবার অপরাধ, যেখানে প্রতারকেরা ভুয়া পরিচয় তৈরি করে গ্রাহকের ব্যাংকের হিসাব, ক্রেডিট কার্ড বা মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়। পরিচয় চুরির অন্যতম মাধ্যম হলো ফিশিং, যেখানে প্রতারকেরা ভুয়া ই-মেইল, এসএমএস বা ওয়েবসাইট তৈরি করে গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে। এই প্রতারণা এড়াতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য যেমন জন্মতারিখ, ঠিকানা, ফোন নম্বর শেয়ার করা, সন্দেহজনক ই-মেইল বা লিংকে ক্লিক করা এবং ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নাম করে ফোন এলে তাৎক্ষণিকভাবে তথ্য প্রদান থেকে বিরত থাকতে হবে।
ওটিপি ও পাসওয়ার্ডের নিরাপত্তা
ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড বা ‘ওটিপি’ একটি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তাব্যবস্থা, যা প্রতারকেরা বিভিন্ন উপায়ে হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে থাকে। তারা ফোনকল বা এসএমএসের মাধ্যমে ব্যাংক কর্মকর্তা সেজে ওটিপি চাইতে পারে। এই নম্বর শেয়ার করলে প্রতারকেরা সহজেই অর্থ হাতিয়ে নিতে পারে। এ ছাড়া দুর্বল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করাও বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। নিরাপদ থাকতে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে, যেখানে সংখ্যা, বড় হাতের অক্ষর, ছোট হাতের অক্ষর এবং বিশেষ চিহ্ন থাকতে পারে। একই পাসওয়ার্ড দীর্ঘদিন ব্যবহার না করে নিয়মিত পরিবর্তন করা ভালো।
অনলাইন লেনদেন এবং ফিশিং আক্রমণ
অনলাইনে কেনাকাটার সময় অনেকেই নিজের অজান্তে প্রতারকদের ফাঁদে পা দেন। অনেক প্রতারক ভুয়া ই-কমার্স সাইট তৈরি করে, যেখানে আকর্ষণীয় ডিসকাউন্ট দেখিয়ে গ্রাহকদের ফাঁদে ফেলে। এসব ওয়েবসাইটে কার্ডের তথ্য দিলে প্রতারকেরা সেটি সংগ্রহ করে নেয়। তাই শুধু বিশ্বস্ত ও সুপ্রতিষ্ঠিত ওয়েবসাইটেই লেনদেন করা ভালো। সন্দেহজনক ই-মেইল বা এসএমএসে থাকা লিংকে কিছুতেই ক্লিক করা যাবে না। সেই সঙ্গে নিয়মিত কার্ডের লেনদেন পর্যবেক্ষণ করা বেশ জরুরি। যেসব ওয়েবসাইট বা অ্যাপে কার্ডের তথ্য সংরক্ষণ করা হয়, সেগুলো যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলাই ভালো। সন্দেহজনক ফোনকল বা ই-মেইলে কার্ডের তথ্য প্রদান করা যাবে না। যদি কোনো অস্বাভাবিক লেনদেন দেখা যায়, তবে দ্রুত ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
কার্ডনির্ভর লেনদেন আধুনিক বিশ্বের অন্যতম সহজ ও নিরাপদ লেনদেনপদ্ধতি হলেও এতে প্রতারণার ঝুঁকি রয়ে গেছে। তবে সচেতনতা, প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার, নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নিয়মিত লেনদেন পর্যবেক্ষণ করলে প্রতারণার শিকার হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশে কমে যায়।