আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানত কমেছে, বেড়েছে ঋণ 

চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট ও রংপুর বিভাগে আর্থিক খাতের আমানত বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ঢাকায় ১ দশমিক ৩০, খুলনায় ১০ দশমিক ১৫ ও ময়মনসিংহে ২ দশমিক ৪৬ শতাংশ হারে আমানত কমেছে।

ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানত ও ঋণের সুদহার বেঁধে দেওয়ার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে এই খাতে। সুদহার বেঁধে দেওয়ার পর আমানত হারাচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠান। গত এক বছরে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানত কমেছে হাজার কোটি টাকার ওপরে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান–সম্পর্কিত বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রাহকের আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪১ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা; গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ৪২ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানত কমেছে ১ হাজার ২০৫ কোটি টাকা।

একই সময়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণের স্থিতি বেড়েছে। চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিতরণকৃত ঋণের স্থিতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৯ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা; গত বছরের একই প্রান্তিকে যা ছিল ৬৬ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ এই সময়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণের স্থিতি বেড়েছে ২ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা। 

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানতের সুদহার বেঁধে দেওয়ার পর এ খাতে মানুষ টাকা রাখছেন কম। কারণ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এখন আমানতের ওপর ৭ শতাংশের বেশি সুদ দিতে পারে না। তাতে মানুষের আগ্রহ কমেছে। তবে প্রতিষ্ঠানগুলো যথেষ্ট আমানত না পাওয়া সত্ত্বেও ঋণ বিতরণ থেমে নেই। গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের তুলনায় চলতি বছরের একই প্রান্তিকে এ খাতে ঋণের স্থিতি প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে।

চলতি বছরের জুলাই থেকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ সুদে আমানত নিতে পারবে বলে পরিপত্র জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সুদহার নির্ধারণ করা হয় ১১ শতাংশ। এর আগে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে ব্যাংকগুলোর জন্য ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশ নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। আমানতের ক্ষেত্রে এই হার সরাসরি নির্ধারণ করা না হলেও ব্যাংক আমানতে সুদহার ৬ শতাংশের আশপাশে হয়ে থাকে। 

আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুদহার বেঁধে দেওয়ার পর কমতে শুরু করেছে আমানতের প্রবাহ। তবে ঋণের স্থিতি বেড়েছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আমানত কমার আরও একটি কারণ দেখিয়েছেন। সেটা হলো, দেশের আর্থিক খাতের অনিয়ম। তবে এ খাতে ঋণ বিতরণ স্বাভাবিক নিয়মে বেড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। 

এদিকে গত সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন এক নীতিমালায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের যেকোনো ঋণ চারবার পর্যন্ত পুনঃতফসিল করার সুযোগ দিয়েছে। ঋণ পরিশোধে ছয় মাস বিরতি দেওয়া যাবে। আগে তিনবার ঋণ পুনঃতফসিল করা যেত এবং পরিশোধের ক্ষেত্রে বিরতি ছিল না। 

আইডিএলসি ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম জামাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সার্বিকভাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানত কমলেও গত প্রান্তিকে আমাদের ৬-৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছিল। এই সময়ে আইডিএলসির ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ শতাংশের মতো। আর সুদহার বেঁধে দেওয়ার ফলে এ খাতে কিছু সমস্যা হলেও যেসব প্রতিষ্ঠানে সুশাসন বা যাদের সুনাম আছে, তাদের আমানতের ঘাটতি হচ্ছে না। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে বর্তমানে ৩৪ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৩০৪টি শাখা রয়েছে। এর মধ্যে শহরে ২৮০টি ও গ্রামীণ এলাকায় ২৪ শাখা রয়েছে। এ ছাড়া ৩৪ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে হিসাব আছে ৫ লাখ ৭০ হাজার ১৯৬টি।

বিভাগ বিশ্লেষণে দেখা যায়, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট ও রংপুর বিভাগে আর্থিক খাতের আমানত বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ঢাকাতে ১ দশমিক ৩০, খুলনায় ১০ দশমিক ১৫ ও ময়মনসিংহে ২ দশমিক ৪৬ শতাংশ হারে আমানত কমেছে। এ ছাড়া বিতরণকৃত ঋণের ৩৫ দশমিক ১৪ শতাংশই গেছে শিল্পে; ৩১ দশমিক ১৩ শতাংশ বাণিজ্যে ও ১৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ ভোক্তা খাতে। 

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সর্বনিম্ন তিন মাস মেয়াদে অর্থ জমা নিতে পারে। এখনো দেশের বেশির ভাগ আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে থাকে। তাদের মধ্যে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক আমানত যাদের যত বেশি, তারা তত ভালো অবস্থানে আছে।