কার্ডে খরচেও ডলারের দাম বাড়তি

ডলারের দাম হু হু করে বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই বিদেশে যেতে কার্ড ব্যবহার শুরু করেছেন। কারণ, বাজারে নগদ ডলারের দাম বেশি, ব্যাংকে কিছুটা কম। তবে ব্যাংকেও নগদ ডলার পর্যাপ্ত নয়। ক্রেডিট, ডেবিটসহ বিভিন্ন কার্ডে যে ডলার খরচ হয়, তা নগদ ডলার নয়। এসব ডলার ডিজিটাল মুদ্রা বা ইলেকট্রনিক মুদ্রা। চলমান ডলার-সংকটে ব্যাংকগুলো এ ডলারেরও দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ব্যাংকে নগদ ডলার যে দামে বিক্রি হবে, কার্ডে লেনদেন হওয়া ডলারের দামও তা হবে। পাশাপাশি বিদেশে শিক্ষা খরচের জন্য শিক্ষার্থীরা যে ডলার পাঠান, তার দামও হবে নগদ ডলারের সমান। এর ফলে কার্ডে লেনদেন ও বিদেশে শিক্ষা গ্রহণে খরচ বেড়ে গেছে। অবশ্য ব্যাংকের নগদ ডলারের দাম খোলাবাজারের চেয়ে কম। ফলে এখনো ডলার খরচের জন্য কার্ডই সাশ্রয়ী।

জানা যায়, বিশ্ববাজারে জ্বালানি ও ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় গত এপ্রিল থেকে আমদানি খরচ বেড়ে যায়। এতে ডলারের দামও বাড়তে থাকে। মাঝে খোলাবাজারে ডলারের দাম ১২০ টাকা উঠলেও কার্ডে লেনদেনের ক্ষেত্রে ডলারের দাম ছিল ১০০ টাকার নিচে। ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের দামের চেয়ে ৩-৪ টাকা বেশি দাম ধরত। কিন্তু সংকট প্রকট হলে ডলারের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব ব্যাংকগুলোর ওপর ছেড়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ অথরাইজড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) যৌথভাবে গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ডলারের দাম নির্ধারণ করে আসছে। এর ফলে এখন প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে ডলারের দাম ১০৭ টাকা ৫০ পয়সা ও রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দাম ৯৯ টাকা। এই দুই দামের গড় মূল্যের চেয়ে এক টাকা বেশি খরচ ধরা হয় আমদানি খরচের ক্ষেত্রে।

এবিবির পক্ষে সংগঠনটির চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসেন, বাফেদার পক্ষে সংগঠনটির চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের এমডি আফজাল করিম ব্যাংকগুলোতে পাঠানো চিঠিতে জানিয়েছেন, কার্ডে ও শিক্ষা খরচে ডলারের দাম হবে ব্যাংকে বিক্রি হওয়া নগদ ডলারের সমান। এরপর থেকে ব্যাংকগুলো কার্ডে লেনদেন হওয়া ডলারের দামও বাড়িয়ে দিয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার অগ্রণী ব্যাংকে নগদ ডলার বিক্রি হয় ১০৭ টাকায়, জনতা ব্যাংকে ছিল ১০৬ টাকা ৯০ পয়সা। আর বেসরকারি খাতের ব্র্যাক, দি সিটি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডসহ বেশির ভাগ ব্যাংকে নগদ ডলারের বিক্রয়মূল্য ছিল ১০৬ টাকা। এসব ব্যাংকের কার্ডে যাঁরা ডলার খরচ করছেন, সেই খরচের দায় মেটাতে তাঁদের গুনতে হচ্ছে এই দাম। তবে গত বৃহস্পতিবার খোলাবাজারে ডলারের দাম ছিল ১১৪ থেকে ১১৫ টাকা। ফলে এখনো কার্ডে ডলার খরচ করলে খোলাবাজারে ডলারের দামের চেয়ে কম দাম গুনতে হচ্ছে।

বাংলাদেশে ক্রেডিট কার্ডে শীর্ষে রয়েছে বেসরকারি খাতের দি সিটি ব্যাংক। ব্যাংকটির একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, আগে গ্রাহকেরা কার্ডে ডলার খরচ করলে সেই দায় সমন্বয়ের ক্ষেত্রে ডলারের দাম ১০১ থেকে ১০২ টাকা ধরা হতো। এখন তা বেড়ে ১০৬ টাকা হয়েছে। এতে গ্রাহকের ওপর চাপ পড়েছে। কিন্তু ব্যাংকগুলো এর চেয়ে কম দামে ডলার পাচ্ছে না। ব্যাংকগুলো এখন ক্রেডিট কার্ডের পাশাপাশি ডেবিট কার্ডেও ডলার খরচের সুযোগ দিচ্ছে। গত জুলাই শেষে ডেবিট কার্ড ছিল ২ কোটি ৭৯ লাখ ও ক্রেডিট কার্ড ছিল ২০ লাখ। গত জুলাইয়ে এসব কার্ডে লেনদেন হয়েছে যথাক্রমে ৩৮ হাজার ১৯ কোটি টাকা ও ৪৪২ কোটি টাকার সমমূল্যের ডলার।