গ্রামাঞ্চলের ব্যাংকে আমানতের বড় পতন

দেশের গ্রামাঞ্চলের ব্যাংকগুলোয় আমানতের পরিমাণ কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি বছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকের তুলনায় জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে দেশের গ্রামাঞ্চলের ব্যাংকগুলোয় আমানতের পরিমাণ ৯৮ হাজার ৮৮৫ কোটি ২৯ লাখ বা ২৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ কমেছে। যদিও এ সময় দেশের শহরাঞ্চল ও সামগ্রিকভাবে ব্যাংক খাতের আমানত বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিক শেষে গ্রামাঞ্চলে অবস্থিত তফসিলি ব্যাংকের শাখাগুলোয় আমানতের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৭৫৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বর সময় শেষে তা নেমে এসেছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৭০ কোটি ২২ লাখ টাকায়।

দেশে প্রায় দেড় বছর ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। নভেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৪৯ শতাংশে, যা গত সাত মাসে সর্বনিম্ন। খাদ্যে মূল্যস্ফীতির হার আরও বেশি; শহর ও গ্রামাঞ্চল উভয় অঞ্চলেই। তবে গ্রামাঞ্চলের মানুষের সঞ্চয়ে এর প্রভাব বেশি পড়ছে বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন। সেই সঙ্গে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণেও মানুষের সঞ্চয়ে প্রভাব পড়ছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, শহর ও গ্রামের মূল্যস্ফীতির হার প্রায় সমান, ক্ষেত্র বিশেষে গ্রামাঞ্চলের মূল্যস্ফীতি বেশি। ফলে গ্রামের মানুষের হাতে সঞ্চয় করার মতো অর্থ কমে যাবে, এটাই স্বাভাবিক। এ ছাড়া দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রবাসী আয় আসা কমে গেছে। অনানুষ্ঠানিকভাবে যে প্রবাসী আয় আসে, তা মূলত নগদে লেনদেন হয়। সে কারণেও গ্রামাঞ্চলের ব্যাংকগুলোর আমানত কমে যেতে পারে।

সেলিম রায়হান আরও বলেন, জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকে আমানতের সুদহার কম ছিল, আমানত কমে যাওয়ার পেছনে তার একটা প্রভাব থাকতে পারে। এরপর অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকের তথ্য হাতে এলে বোঝা যাবে, সুদহার বৃদ্ধির পর আমানত বাড়ল কি না।

দেশের আটটি বিভাগের মধ্যে খুলনা ও রংপুর বিভাগ ছাড়া বাকি ছয়টি বিভাগের গ্রামাঞ্চলে আমানত কমেছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা গেছে। এই দুই বিভাগেও আমানত তেমন একটা বাড়েনি। খুলনা বিভাগে বেড়েছে ১৯৫ কোটি টাকা; রংপুর বিভাগে বেড়েছে ৪১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।

বিভাগগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে আমানত কমেছে ২০ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা; ঢাকা বিভাগে কমেছে ৭৩ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা; ময়মনসিংহ বিভাগে কমেছে ৭৫৩ কোটি টাকা; রাজশাহী বিভাগে কমেছে ১৫৪২ কোটি ৮৯ লাখ টাকা; বরিশাল বিভাগে কমেছে ৯৬২ কোটি টাকা এবং সিলেট বিভাগে কমেছে ২ হাজার ৭৬০ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।

এ সময় অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে দেশের গ্রামাঞ্চলে ব্যাংক আমানত কমলেও শহরাঞ্চলে বেড়েছে। এ সময় শহরাঞ্চলের আমানত বেড়েছে ১ লাখ ২৪ হাজার ৯৯৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।

একই সময়ে সামগ্রিকভাবে দেশের ব্যাংকগুলোয় আমানত বেড়েছে। এপ্রিল-জুন প্রান্তিকের তুলনায় জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে দেশের ব্যাংক খাতের সামগ্রিক আমানত বেড়েছে ২৬ হাজার ১১০ কোটি ২৫ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন পর্যালোচনায় আরও দেখা যায়, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মোট আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪ কোটি ৯৭ লাখ ৭০ হাজার ৬৮৪–তে। এসব হিসাবে মোট আমানত আছে ১৭ লাখ ১৩ হাজার ১৩৪ কোটি টাকা।