ব্যাংক একীভূতকরণের ঝুঁকির সঙ্গে সুযোগও আছে

মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে কথা বলেন ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন। গতকাল ঢাকায় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়েছবি: প্রথম আলো

দেশের ব্যাংক খাতের ভালো প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য ব্যাংক একীভূত হওয়ার প্রয়োজন আছে। সে ক্ষেত্রে নিয়মনীতি ভালোভাবে পরিপালন করতে হবে। সেই সঙ্গে দক্ষ জনবলও লাগবে। তখন ঝুঁকি থাকলেও ব্যাংক একীভূত করে ভালো সুযোগ তৈরির সম্ভাবনা থাকবে।

ঢাকায় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন এসব কথা বলেন। এতে ব্যাংকটির শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, অর্থনীতির বর্তমান বাস্তবতায় ছোট ছোট ব্যাংকের টিকে থাকা কঠিন। তাই সরকার ব্যাংক একীভূতকরণের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা সঠিক। প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর জন্য এটার প্রয়োজন আছে। তবে কাজটা বুঝেশুনে করতে হবে। এসব করতে গেলে দক্ষ লোকবল প্রয়োজন। বিষয়টা ইতিবাচকভাবে দেখতে হবে। তবে সবকিছু নির্ভর করবে রেগুলেশন কেমন হবে তার ওপর। মার্জার বা একীভূতকরণে ঝুঁকি আছে। আবার ঝুঁকির সঙ্গে সুযোগও আছে।

সেলিম আর এফ হোসেনের মতে, দেশে আমদানি কমায় ডলারের চাহিদা কিছুটা কমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। এ জন্য ব্যাংকগুলো বেশি করে ডলার আনতে চাইছে না। খোলাবাজারে ডলার কেনাবেচা নিয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তার কারণ নেই। তিনি বলেন, বেশ কিছু পণ্য আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া আছে, সেটা এখনো তুলে নেওয়ার সময় আসেনি। আবার ডলার কিনে মানুষ বালিশের নিচেও রাখছে না। এ কারণেও ডলারের বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসছে বলে মনে করেন তিনি।

করোনার পর থেকে ব্যাংকে গ্রাহকের আচরণে পরিবর্তন এসেছে উল্লেখ করে সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, ‘ডিজিটাল বা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে গেলে আমাদের আরও উদ্যোগ নিতে হবে। অনেক ব্যাংক পিছিয়ে আছে। আগামীতে তাদের এগিয়ে আসতে হবে। না হলে টিকে থাকতে পারবে না। মানুষ গরিব হতে পারেন, শিক্ষা কম থাকতে পারে; কিন্তু মানুষ বোকা না। তাঁরা প্রযুক্তির সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নিচ্ছেন। সুতরাং ব্যাংকগুলোকে এখানে বিনিয়োগ করতে হবে।’

২০২৩ সালে ব্র্যাক ব্যাংকের ৮০০ কোটি টাকার বেশি মুনাফার বিষয়ে সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, ‘এটি আমাদের বোর্ড ও ব্যবস্থাপনার সঙ্গে ভালো সম্পর্কের ফল। আমরা সম্পূর্ণ স্বতন্ত্রভাবে কাজ করতে পারি। আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন ভালো। এখানে স্বচ্ছতা অনেক বেশি। এসএমই খাতে খেলাপি ঋণ মাত্র আড়াই শতাংশ। এখানে নারীদের জন্য আলাদা একটা ফোরাম আছে। আলাদা মূল্যবোধ নিয়ে কাজ করেন সবাই। তাঁদের পরিশ্রমের ফলে ব্র্যাক ব্যাংক আজ এত ভালো করছে। আরও চার–পাঁচ বছর ৩০ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে চাই। তাহলে দেশের সেরা ব্যাংক হতে পারব।’

ব্র্যাক ব্যাংক ২০২৩ সালে ৮২৭ কোটি টাকার নিট বা প্রকৃত মুনাফা করেছে। এই মুনাফা ২০২২ সালের ৬১৪ কোটি টাকার চেয়ে প্রায় ৩৫ শতাংশ বেশি। গতকাল ব্র্যাক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় গত বছরের হিসাব চূড়ান্ত হয়।

সভায় শেয়ারধারীদের ২০ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদানের সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে ১০ শতাংশ স্টক বা বোনাস ও ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ। ২০২৩ সালে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ৪ টাকা ৭৩ পয়সা, যা ২০২২ সালে ছিল ৩ টাকা ৭৫ পয়সা।