ডলারের দাম নিয়ে অস্থিরতা চলছেই
গতকালও ১২৪ টাকা দামে প্রবাসী আয় কিনেছে কিছু বেসরকারি ব্যাংক। যদিও আমদানি দায় মেটাতে ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম এখনো ১১১ টাকা।
দেশের ব্যাংকগুলো এখনো ঘোষণার চেয়ে বেশি দামে প্রবাসী আয় কেনা অব্যাহত রেখেছে। গতকাল সোমবারও ১২৪ টাকা দরে প্রবাসী আয় কিনেছে কিছু বেসরকারি ব্যাংক। যাদের আমদানি ও বিদেশি ঋণের দায় মেটানোর চাহিদা ছিল, তারাই এভাবে ডলার কিনেছে। যদিও আমদানি দায় মেটাতে ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম এখনো ১১১ টাকা।
এদিকে যেসব ব্যাংক রেমিট্যান্স হাউসগুলোর চাহিদামতো ডলারের দাম দিতে পারছে না, তারা প্রবাসী আয় পাচ্ছে না। ব্যাংকগুলোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
ব্যাংকগুলোর ঘোষণা অনুযায়ী, প্রবাসী আয় কেনার ক্ষেত্রে ডলারের দাম ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। এর সঙ্গে রয়েছে সরকারের আড়াই শতাংশ প্রণোদনা। পাশাপাশি কোনো কোনো ব্যাংক আরও আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে। ফলে ডলারের সর্বোচ্চ দাম দাঁড়ায় ১১৬ টাকা। রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী ও অগ্রণী ব্যাংক অতিরিক্ত আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিয়ে প্রবাসী আয় কিনছে। আবার বেসরকারি খাতের কিছু ব্যাংক এই প্রণোদনার পাশাপাশি আরও বেশি দামে প্রবাসী আয় কিনছে।
রাষ্ট্রমালিকানাধীন অগ্রণী ব্যাংকের রেমিট্যান্স বিভাগের একজন কর্মকর্তা গতকাল প্রথম আলোকে জানান, সৌদি প্রতিষ্ঠান আল-রাজি এক্সচেঞ্জ তাঁদের কাছে প্রতি ডলার ১২৩ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু তাঁরা ১১০ টাকা ৫০ পয়সার বেশি দিতে রাজি হননি। পরে ইসলামি ধারার একটি ব্যাংক আল-রাজি এক্সচেঞ্জের কাছ থেকে সেই প্রবাসী আয় ১২৪ টাকা দামে কিনে নিয়েছে। ডলারের দাম কম দেওয়ায় সোমবার মাত্র ১ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় পেয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। অন্য সময়ে দিনে যা ২০ লাখ ডলার ছিল।
এদিকে ডলারের বেশি দাম দেওয়ায় বৈধ পথে প্রবাসী আয় আসা বাড়ছে। চলতি মাসের প্রথম ৯ দিনে (১-৯ নভেম্বর) ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছে ৭৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে এসেছিল ৫৬ কোটি ২০ লাখ ডলার। সেই হিসাবে গত বছরের নভেম্বরের প্রথম ৯ দিনের তুলনায় চলতি বছরে একই সময়ে প্রবাসী আয় বেড়েছে প্রায় ৪১ শতাংশ।
ঘোষিত দামে প্রবাসী আয় কেনার নির্দেশনা
বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) গত বুধবার এক সভায় প্রবাসী ও রপ্তানি আয়ে প্রতি ডলার আগের মতো ১১০ টাকা ৫০ পয়সায় কেনার সিদ্ধান্ত হয়। ৫ শতাংশ প্রণোদনাসহ ডলারের সর্বোচ্চ দাম হবে ১১৬ টাকা। তবে আমদানি দায়ের ক্ষেত্রে ডলারের দাম থাকবে সর্বোচ্চ ১১১ টাকা। সব ব্যাংককে এই নির্দেশনা মানতে হবে। এক দিন পর বৃহস্পতিবার বৈদেশিক বাণিজ্যে শীর্ষস্থানীয় ১৬ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকেরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সভা করে জানান, সব ব্যাংক ডলারের ওই দাম মেনে চলবে। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর তদারকি চান তাঁরা।
এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল প্রবাসী আয় সংগ্রহে শীর্ষ পর্যায়ে থাকা রেমিট্যান্স হাউসগুলোর স্থানীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে সভা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন, ইনস্ট্যান্ট ক্যাশ, স্মল ওয়ার্ল্ড, ট্রান্সফাস্ট, মানিগ্রাম, রিয়া, এনইসি মানি ট্রান্সফার, মার্চেন্ট ট্রেডসহ আরও কয়েকটি রেমিট্যান্স হাউসের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় এবিবি ও বাফেদার নির্ধারিত দামে প্রবাসী আয় সংগ্রহের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সভায় উপস্থিত দুটি রেমিট্যান্স হাউসের কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবিবি ও বাফেদার নির্ধারিত দামে প্রবাসী আয় সংগ্রহের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা ব্যাংকের চাহিদা অনুযায়ী প্রবাসী আয় সংগ্রহ করি। যে ব্যাংকের চাহিদা বেশি, তাদের জন্য বেশি দামে প্রবাসী আয় কিনে থাকি।’
দাম নির্ধারণের সভা নিয়ে ক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে বাফেদা ও এবিবি সময়ে-সময়ে ডলারের দাম নির্ধারণ করে আসছে। এ নিয়ে সভা হলেও ডলারের জোগান ও চাহিদা নিয়ে কোনো আলোচনা হয় না। অনলাইনে অনুষ্ঠিত এমন একটি সভার রেকর্ড সংগ্রহ করে দেখা গেছে, উপস্থিত একজন ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, যদি নির্দেশনা জানানোর জন্য এই সভা আহ্বান করা হয়, তাহলে কেন বলা হচ্ছে আলোচনার মাধ্যমে দাম নির্ধারণ হচ্ছে। সভায় তো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারণ করে দেওয়া দাম জানানো ছাড়া আর কিছুই হচ্ছে না।
গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শে বাফেদা ও এবিবি সময়ে-সময়ে ডলারের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব পালন করছে।
দাম নির্ধারণের সঙ্গে যুক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, তাঁরা ধীরে ধীরে দাম বাজারভিত্তিক করার পক্ষে। এ জন্য গভর্নরের অনুমতি নিয়ে প্রতিটি সভায় ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। এখন মনে হচ্ছে, এই সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল না। দাম নির্ধারণের দায়িত্ব ব্যাংকগুলোর ওপর ছেড়ে দিলেই বাজার এত দিনে ঠিক হয়ে যেত।