বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন নিয়ে দুই সত্যি গল্প
বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন সম্পর্কে সরকারের নীতিনির্ধারক কিংবা ব্যাংকের কর্তাব্যক্তিদের ধ্যানধারণা কেমন, সে সম্পর্কে দুটি ভিন্ন গল্প শুনিয়েছেন সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান ও সরকারের পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়ন নীতি নিয়ে এক আলোচনায় অংশ নেন। সেখানে অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান নীতি প্রণয়নের সঙ্গে যাঁরা জড়িত আছেন বা ছিলেন, তাঁদের সবার প্রতি আহ্বান জানান তাঁরা যেন অকপটে নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন।
তাঁর সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে আতিউর রহমান জানান, তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর থাকার সময় তৎকালীন অর্থমন্ত্রী তাঁকে বলেছিলেন যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মূল্যস্ফীতির প্রাক্কলন রাখতে হবে।
এ বিষয়ে তিনি আপত্তি জানালে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ে আপনার এত মাথাব্যথা কেন। সরকার এটা ঠিক করে দেবে, কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সেটাই বলতে হবে।’
জবাবে তখন আতিউর রহমান বলেন, ‘ওটাই তো আমার কাজ, আমি যদি মূল্যস্ফীতির হিসাব করতে না পারি, তাহলে মুদ্রানীতি কীভাবে করব’।
একটা সমাধান হিসেবে তখন আতিউর রহমান প্রস্তাব করেন, ‘ঠিক আছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রাক্কলন প্রকাশ করা হবে, পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাক্কলনও প্রকাশ করা হবে। এটা উল্লেখ থাকবে যে একটি বাংলাদেশ ব্যাংকের, আরেকটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের।’
আতিউর রহমান বলেন, ‘এতে অর্থমন্ত্রী খেপে গেলেন; বললেন, এক সরকারের দুটি লক্ষ্যমাত্রা থাকে কী করে।’
তবে শেষ পর্যন্ত ওই প্রতিবেদনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রাক্কলনই প্রকাশিত হয়েছিল এ কথা জানিয়ে সাবেক এই গভর্নর বলেন, এখন আর সে রকম হয় না। এখন শুধু সরকারের হিসাবই প্রকাশিত হয়।’
আতিউর রহমান বলেন, কাজ করতে গিয়ে তিনি যেসব সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলমও সম্ভবত তেমন সমস্যার মুখোমুখি হন।
তখন শামসুল আলম নিজের গল্প বলেন। ‘এমনও হয়েছে, একবার অর্থসচিব বলেছেন, পরিকল্পনার দরকার কী, আমরাই তো বাজেট করব।’ তবে শেষ পর্যন্ত অর্থমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে এর নিরসন হয়েছিল বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন সম্পর্কে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মনে করেন যে মুদ্রানীতি, মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরও স্বায়ত্তশাসন দরকার।
এ প্রসঙ্গে আরেকটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেন শামসুল আলম। তিনি বলেন, একবার এক বৈঠকে তিনি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেছিলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরও স্বায়ত্তশাসন প্রয়োজন। কিন্তু গভর্নর উল্টো বলে বসেন, ‘স্বায়ত্তশাসন যথেষ্ট আছে, আর দরকার নেই, স্যার।’
আক্ষেপ করে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এই হচ্ছে অবস্থা।’
বাঙলার পাঠশালা আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে রেহমান সোবহানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আতিউর রহমান ও শামসুল আলম কিছুটা হলেও খোলামেলা হয়েছিলেন।
নীতিপ্রণেতা ও গবেষকদের সম্পর্ক নিয়ে অনুষ্ঠানে আলোচনা হয়। বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসুও নীতিপ্রণেতা হিসেবে তাঁর অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন।