প্রথম আলোসহ চারটি পত্রিকাকে এস আলমের আইনি নোটিশ

প্রকাশিত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে সরকারের দুই সচিব, প্রথম আলোসহ চার পত্রিকার সম্পাদক ও সাতজন সাংবাদিক বরাবর আইনি নোটিশ দিয়েছেন এস আলম গ্রুপ ও এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম। নোটিশে আগামীকাল রোববার সকাল ১০টার আগে এস আলম গ্রুপ ও এর সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন পাবলিক ডোমেইন থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্রসচিব এবং তথ্য ও সম্প্রচারসচিবকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। পাশাপাশি এ জাতীয় সংবাদ প্রকাশ না করার দাবি জানানো হয়েছে।

মোহাম্মদ সাইফুল আলমের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আজমালুল হোসেন কেসি গত বৃহস্পতিবার ওই নোটিশ পাঠান। নোটিশে বলা হয়, ১৩ আগস্ট সকাল ১০টা বা এর আগে প্রতিবেদনগুলো সরানো না হলে সাইফুল আলম এবং এস আলম গ্রুপের মৌলিক অধিকার সুরক্ষার জন্য যথাযথ প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হবে।

নোটিশে তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাবে ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এসব প্রতিবেদনের কারণে এস আলম গ্রুপের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর ৪৩ হাজার ৩২২ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। 

প্রথম আলো পত্রিকায় গত বছরের ২৪ নভেম্বর প্রকাশিত ‘ইসলামী ব্যাংকে ভয়ংকর নভেম্বর’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এই প্রতিবেদনের প্রসঙ্গটি উল্লেখ করে প্রথম আলো সম্পাদক ও প্রকাশক মতিউর রহমান এবং প্রতিবেদক সানাউল্লাহ সাকিব বরাবর নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকায় নোটিশ দেওয়া হয়েছে দুটি প্রতিবেদনের জন্য। এর একটি প্রকাশিত হয়েছিল গত বছরের ৬ ডিসেম্বর, এস আলম গ্রুপের সম্পদের তদন্ত বিষয়ে। আরেকটি প্রকাশিত হয় ৪ আগস্ট ‘এস আলম গ্রুপের আলাদিনের চেরাগ’ শীর্ষক শিরোনামে। এ জন্য ডেইলি স্টার-এর সম্পাদক ও প্রকাশক মাহ্‌ফুজ আনাম, নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হক, সাংবাদিক পার্থ প্রতিম ভট্টাচার্য ও জাইমা ইসলামকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। 

নিউএজ পত্রিকায় গত ৩০ নভেম্বর ‘এস আলম গ্রুপ একাই ইসলামী ব্যাংক থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ তুলে নিয়েছে’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ জন্য নিউএজ-এর সম্পাদক নূরুল কবীর এবং প্রতিবেদক মোস্তাফিজুর রহমানকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার সম্পাদক ইনাম আহমেদ, রিপোর্টার জেবুন নেছা আলো ও সাখাওয়াত প্রিন্সকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে গত বছরের ২৭ নভেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনের জন্য। যার শিরোনাম ছিল ‘কীভাবে ২৪ বছর বয়সী গ্রিনহর্ন ৯০০ কোটি টাকা ঋণ পেলেন’।

প্রসঙ্গত, ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার-এ ‘এস আলম’স আলাদিন’স ল্যাম্প’ (এস আলমের আলাদিনের চেরাগ) শিরোনামে ৪ আগস্ট একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি নজরে আনার পর ৬ আগস্ট বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ আদেশ দেন। অনুমতি ছাড়া বিদেশে বিনিয়োগ বা অর্থ স্থানান্তর নিয়ে এস আলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলমের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধান করে দুই মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডির) প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়। 

এর আগে ইসলামীসহ তিন ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন নজরে আসার পর গত বছরের ৪ ডিসেম্বর হাইকোর্টের একই বেঞ্চ অনুসন্ধানের নির্দেশ দেন। ওই ঘটনা অনুসন্ধান করে দুদক, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএফআইইউ এবং সিআইডিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।