বাংলাদেশ ব্যাংক
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

দেশের ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৫টির খেলাপি ঋণ ৩২ শতাংশের বেশি। আবার সাতটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন চলছে ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দিয়ে। অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাহিদা অনুযায়ী অর্থ জমা রাখতে পারছে না। সেগুলোর কোনো কোনোটি জামানতবিহীন ঋণ দিয়েছে। অনেকগুলো আর্থিক প্রতিষ্ঠানই আমানতকারীদের টাকা যথাসময়ে ফেরত দিতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আমানতকারীদের অর্থ ফেরত প্রদানকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। 

দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এমডিদের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুষ্ঠিত সভায় এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। গত ২৭ আগস্ট এ সভা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এমডিদের কাছে পাঠানো সভার কার্যবিবরণী থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

সভায় ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তারল্য সমস্যা, নগদ জমার হার বা সিআরআর এবং বিধিবদ্ধ জমা বা এসএলআর সংরক্ষণে ব্যর্থতা, মূলধন ঘাটতি, যথাসময়ে আর্থিক বিবরণী বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা না দেওয়া, জামানতবিহীন ঋণ বিতরণ, আমানতকারীদের আমানত মেয়াদ শেষে পরিশোধ না করাসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন। পাশাপাশি ঋণ আদায়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করা, অপর্যাপ্ত আইনি পদক্ষেপ, হিসাবরক্ষণ–প্রক্রিয়ার দুর্বলতাসহ সার্বিক সুশাসনের ঘাটতির ফলে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে সভায় অবহিত করেন। 

সভায় কাজী ছাইদুর রহমান বলেন, দেশের ৩৫ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৫টি প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ ৩২ শতাংশের বেশি, যা উদ্বেগজনক। আবার খেলাপি ঋণ আদায়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর পদক্ষেপ পর্যাপ্ত নয়। এ জন্য ঋণের অর্থ আদায়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি বলে সভায় জানান তিনি। পাশাপাশি যথাসময়ে আমানতের অর্থ ফেরতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করতে নির্দেশ দেন। সভায় আরও বলা হয়, দেশের সাতটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে ভারপ্রাপ্ত এমডি দিয়ে চলছে, এটা নীতিমালার লঙ্ঘন। 

সভায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইআইডিএফসির এমডি গোলাম সরওয়ার ভূঁইয়া বলেন, পিপলস লিজিংয়ের অবসায়ন কার্যক্রম শুরুর পরপরই আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাত আস্থার সংকটে পড়ে। পরবর্তী সময়ে করোনার প্রভাব ও ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে এ খাতে তারল্য সমস্যা দেখা দেয়। তবে গত এক বছরে যেসব নীতিমালা জারি করা হয়েছে, তা এ খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। ব্যাংকগুলোর মতো নীতিসহায়তা পেলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাত সহজেই ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে তিনি সভায় জানান। 

আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইপিডিসি ফাইন্যান্সের এমডি মমিনুল ইসলাম বলেন, শুধু তারল্য–সহায়তা পেলেই এ খাত ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে। 

আইডিএলসি ফাইন্যান্সের এমডি জামাল উদ্দিন বলেন, ঋণ আদায় কার্যক্রমের যথাযথ তদারকি ও জোরালো আইনি প্রক্রিয়ার কারণে আমরা খেলাপি ঋণ ৬ শতাংশ থেকে ৪ শতাংশে নামিয়ে আনতে পেরেছি। 

ডিবিএইচ ফাইন্যান্সের এমডি নাসিমুল বাতেন বলেন, গৃহনির্মাণ ঋণ পুনর্তফসিলের সময়সীমা সর্বোচ্চ ছয় বছর। তাই এ সময়সীমা বাড়ানোর অনুরোধ জানান তিনি। 

ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড বা ইডকলের এমডি আলমগীর মোরশেদ বলেন, ঋণের বিপরীতে জামানত হিসেবে নেওয়া ব্যাংক গ্যারান্টি যথাসময়ে নগদায়ন করা যাচ্ছে না। কিছু ব্যাংককে বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও তারা এসব গ্যারান্টি নগদায়ন করছে না। 

সভার কার্যবিবরণীর তথ্য অনুযায়ী, যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ ৩২ শতাংশের বেশি, তার মধ্যে রয়েছে বিআইএফসি, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, এফএএস ফাইন্যান্স। এসব প্রতিষ্ঠানের এমডিও সভায় বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, আগের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও পরিচালনা পর্ষদ জামানতবিহীন ও হদিসবিহীন ঋণ দিয়েছে। ঋণ নিয়ে কিছু ঋণগ্রহীতা বিদেশে পালিয়ে গেছেন। আবার ঋণের অপব্যবহারও করেছে।