আর্থিক প্রতিষ্ঠানের স্বতন্ত্র পরিচালকেরাও পাবেন ৫০ হাজার টাকা স্থায়ী সম্মানী

বাংলাদেশ ব্যাংকছবি: সংগৃহীত

এখন থেকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের স্বতন্ত্র পরিচালকের নিয়োগ, যোগ্যতা ও সুযোগ-সুবিধা নির্ধারিত হবে ব্যাংকের মতো। বাংলাদেশ ব্যাংক আজ বুধবার এ–সংক্রান্ত নতুন নির্দেশনা জারি করেছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কোনো ব্যক্তির অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কোনো স্বার্থ বা দৃশ্যমান স্বার্থের বিষয় জড়িত থাকলে তিনি সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানের স্বতন্ত্র পরিচালক হতে পারবেন না। স্বতন্ত্র পরিচালকেরা প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা স্থায়ী সম্মানী পাবেন। এ ছাড়া প্রতিটি পর্ষদ সভার জন্য পাবেন ১০ হাজার টাকা করে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানের স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, এখন থেকে ৪৫ বছরের কম বয়সের কেউ স্বতন্ত্র পরিচালক হতে পারবেন না। স্বতন্ত্র পরিচালকদের বয়স হতে হবে সর্বনিম্ন ৪৫ থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ বছর। এ ছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠানের স্বতন্ত্র পরিচালক হতে হলে দেশের স্বীকৃত কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি, ব্যাংকিং, ফিন্যান্স, ব্যবসায় প্রশাসন, আইন, হিসাববিজ্ঞান বা কস্ট অ্যাকাউন্টিংয়ে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকতে হবে।

নির্দেশনা অনুযায়ী, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের স্বতন্ত্র পরিচালক হতে হলে ১০ বছরের ব্যবস্থাপনা, ব্যবসায়িক বা পেশাগত অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তবে কারও নিজের বা পরিবারের নামে সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার থাকলে কিংবা পরিবারের কেউ ওই প্রতিষ্ঠানে লাভজনক কোনো পদে কর্মরত থাকলে তিনি স্বতন্ত্র পরিচালক হতে পারবেন না। স্বতন্ত্র পরিচালকেরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সরাসরি অভিযোগ বা তাঁদের মতামত জানাতে পারবেন।

স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় অনুষদ বা ব্যবসায় প্রশাসন, ব্যবস্থাপনা, আইন ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে অভিজ্ঞ শিক্ষক, আইন পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তি, পেশাদার হিসাববিদ, অভিজ্ঞ ব্যাংকার, বাণিজ্য, অর্থ, শিল্প ও আইন মন্ত্রণালয়ের অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা অগ্রাধিকার পাবেন।

তবে কোনো ব্যক্তি পাওনাদারের প্রাপ্য পরিশোধ না করলে বা পাওনাদারের সঙ্গে আপসরফার মাধ্যমে পাওনা আদায় থেকে অব্যাহতি না পেলে তিনি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের স্বতন্ত্র পরিচালক হতে পারবেন না। এমনকি করখেলাপি, ঋণখেলাপি, জালজালিয়াতির সঙ্গে জড়িত, কারও বিরুদ্ধে আদালতের রায়ে বিরূপ পর্যবেক্ষণ থাকলে তাঁরা স্বতন্ত্র পরিচালক হওয়ার জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবেন। পাশাপাশি নিবন্ধন বাতিল হওয়া বা অবসায়িত কোম্পানির মালিকানার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিও স্বতন্ত্র পরিচালক হতে পারবেন না।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, নতুন বিধান অনুযায়ী কোনো স্বতন্ত্র পরিচালকের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলাজনিত বিরূপ পর্যবেক্ষণ পাওয়া গেলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ১৫ জন পরিচালক থাকলে তার মধ্যে কমপক্ষে ২ জন স্বতন্ত্র পরিচালক থাকতে হবে।

নতুন বিধান করা হলেও বর্তমান স্বতন্ত্র পরিচালকদের মধ্যে যাঁদের এসব যোগ্যতা নেই, তাঁরা মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত এই পদে থাকতে পারবেন। ফলে এখনই কাউকে পদ ছাড়তে হবে না।

ব্যাংকের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের স্বতন্ত্র পরিচালকেরাও প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা স্থায়ী সম্মানী পাবেন। আগে অবশ্য স্বতন্ত্র পরিচালকদের স্থায়ী সম্মানী ছিল না। এ ছাড়া কোম্পানির পর্ষদ বা সহায়ক কমিটির প্রতিটি সভায় উপস্থিতির জন্য সম্মানী হিসেবে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পাবেন তাঁরা। কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান চাইলেই কোনো স্বতন্ত্র পরিচালককে সরাতে পারবে না। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন লাগবে।

ব্যাংকের পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের স্বতন্ত্র পরিচালকদের ভূমিকা নিয়ে অনেক দিন ধরে আলোচনা হচ্ছে। কারণ, অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান নিজেদের আত্মীয় ও কর্মচারীকে নিজ প্রতিষ্ঠানে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে রেখেছেন। এসব পরিচালক আমানতকারী ও শেয়ারধারীদের স্বার্থ রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারছেন না।