উচ্চ আয়ের পেশাজীবীরাও পাবেন ডলারের সর্বোচ দাম
এখন থেকে সরাসরি ব্যাংকের মাধ্যমে উচ্চ আয়ের প্রবাসী পেশাজীবীদের পাঠানো প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে প্রতি ডলারে ১০৭ টাকা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। একই সঙ্গে ব্যাংকগুলো আপাতত রেমিট্যান্স আহরণ বাবদ কোনো চার্জ বা মাশুলও নেবে না বলে জানা গেছে। সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাফেদা। ওই বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ব্যাংকাররা জানান, এত দিন উচ্চ আয়ের পেশাজীবীরা দেশে প্রবাসী আয় পাঠালে ডলারের দাম পেতেন রপ্তানি আয়ের জন্য নির্ধারিত দরের সমান, ৯৯ টাকা ৫০ পয়সা। এতে তারা ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসী আয় পাঠাতে নিরুৎসাহিত হচ্ছিলেন। এ কারণে তাদের জন্য ডলারের দাম বাড়িয়ে ১০৭ টাকা করা হয়েছে। বর্তমানে প্রবাসী আয়ে সর্বোচ্চ ডলারের দাম সর্বোচ্চ ১০৭ টাকা।
উচ্চ আয়ে পেশাজীবীদের পাঠানো প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে ডলারের দাম বাড়ানোর পাশাপাশি ব্যাংকগুলোকে নিজস্ব উৎস থেকে ডলার সংস্থান করে ঋণপত্র বা এলসি খুলতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল ও কাজী ছাইদুর রহমানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা। অন্যদিকে, ব্যাংকগুলোর পক্ষে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসেন, বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের এমডি আফজাল করিম, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিন প্রমুখ।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধি দলের ঢাকা সফরের মধ্যে সোমবার হঠাৎ করেই এ বৈঠক ডাকা হয় বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুসারে ওয়েজ আর্নার হিসেবে সব প্রবাসীর সমান রেমিট্যান্স দর পাওয়ার কথা। কিন্তু গত সেপ্টেম্বর মাসে মুদ্রার বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হলে হোয়াইট কলার বলে পরিচিত চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী, ব্যাংকার, নার্সসহ উচ্চ আয়ের পেশাজীবীদের ক্ষেত্রে বিনিময় হার কমিয়ে ধরে ব্যাংকগুলো। সে সময় থেকে এ ধরনের পেশাজীবীদের পাঠানো প্রবাসী আয়ে ডলারের দাম রপ্তানি বিলের সমান হারে অর্থাৎ ৯৯ টাকা ৫০ পয়সা ধরা হচ্ছিল। তবে এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো তাদের ভালো দর দিত।
অন্যদিকে ব্যাংকগুলো বর্তমানে এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে ডলার কেনার ক্ষেত্রে ১০৭ টাকা করেই দাম দিচ্ছিল। এতে করে ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ পাঠাতে অনেকে নিরুৎসাহিত হচ্ছে। এ রকম বাস্তবতায় উভয় ক্ষেত্রে ডলারের অভিন্ন দর দিতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর ফলে এখন থেকে চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী ও সেবিকাদের আয় ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠালেও ওয়েজ আর্নার্সদের মতো সর্বোচ্চ ১০৭ টাকা দর দেওয়া হবে।
পাশাপাশি বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজ নির্ভরতা কমিয়ে সরাসরি ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসী আয় আহরণ উৎসাহিত করতে দেশের বাইরে নিজস্ব এক্সচেঞ্জ হাউজ বাড়াতে বলা হয়েছে বৈঠকে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
একই সঙ্গে ডলার সংকটের এ সময়ে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে প্রবাসী আয় পাঠানোকে উদ্বুদ্ধ করতে কোনো ধরনের চার্জ বা মাশুল না নিতে বলা হয়েছে বৈঠকে। ব্যাংকগুলোও এসব সিদ্ধান্ত কার্যকরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
নিজস্ব উৎস থেকে ডলার সংস্থানের পরামর্শ
জানা গেছে, সোমবারের বৈঠকে ঋণপত্র বা এলসি খোলার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। বর্তমানে ব্যাংকগুলো ডলার সংকটের কারণে এলসি খুলতে সমস্যায় পড়ছিল। এ জন্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার সহায়তার অনুরোধ জানায় ব্যাংকগুলো।
তবে সোমবারের বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, নিজস্ব উৎস থেকে ডলার সংস্থান করেই কেবল এলসি খুলতে হবে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের বর্তমান বাস্তবতায় সামগ্রিকভাবে কোনো সহায়তা দেওয়া হবে না। কেবলমাত্র সরকারি জরুরি পণ্য আমদানিতে রিজার্ভ থেকে ডলার দেওয়া হবে।