রিজার্ভ কমে ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে
গতকাল সোমবার (৮ মে, ২০২৩) দিন শেষে রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৯৮৩ কোটি ডলার। এর আগে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রিজার্ভ এই ঘরে ছিল।
ডলার–সংকটের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে ৩০ বিলিয়ন বা ৩ হাজার কোটি ডলারের নিচে নেমে এসেছে। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) মার্চ-এপ্রিল সময়ে আমদানি বাবদ ১১৮ কোটি ডলার পরিশোধের পর আজ সোমবার রিজার্ভ কমে গেছে। ফলে গতকাল সোমবার (৮ মে, ২০২৩) দিন শেষে রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৯৮৩ কোটি ডলার। এর আগে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রিজার্ভ তিন হাজার কোটি ডলারের নিচে ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে রাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হকের বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
২০২০ সালে করোনা মহামারি শুরু হলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হু হু করে বাড়তে থাকে। বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় ওই সময় সব প্রবাসী আয় বৈধ পথে তথা ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে আসে। আবার আমদানিও কমে যায়। ফলে ২০২১ সালের আগস্টে রিজার্ভ বেড়ে প্রথমবারের মতো ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্ববাজারে জ্বালানিসহ খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়। তাতে বেড়ে যায় দেশের আমদানি খরচও। তবে সেই তুলনায় বাড়েনি প্রবাসী ও রপ্তানি আয়। এই কারণে বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রতিনিয়ত আমদানি দায় মেটাতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে রিজার্ভ প্রতিনিয়ত কমছে। ডলার–সংকট মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত না নেওয়ায় দিন দিন ডলার–সংকট আরও প্রকট হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, সামনে রিজার্ভ আরও কমতে পারে। কারণ, আমদানির দায় মেটাতে রিজার্ভ বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে সামনের মাসে বিদেশি ঋণ ও অনুদানের কিছু অর্থ যোগ হবে। তখন রিজার্ভ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি ঘটবে। চলতি ২০২২–২৩ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই–এপ্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ১২ বিলিয়ন বা ১ হাজার ২০০ কোটি ডলারের বেশি বিক্রি করেছে। বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে প্রতি ডলার ১০৪ টাকা ৫০ পয়সা দামে বিক্রি করছে।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে রিজার্ভ ২ হাজার ৯৮৩ কোটি ডলার হলেও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবে রিজার্ভের ৬০০ কোটি ডলার ব্যবহারযোগ্য নয়। আইএমএফের শর্ত মানলে দেশে এখন ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়ায় ২ হাজার ৩৮৩ কোটি ডলার।
আইএমএফ গত মার্চে সর্বনিম্ন ২২ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার নিট রিজার্ভ রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল, যা পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। আগামী জুনে এই লক্ষ্য বাড়িয়ে ২৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার শর্ত রয়েছে সংস্থাটির। আগামী সেপ্টেম্বরে নিট রিজার্ভের পরিমাণ বাড়িয়ে ২৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার এবং ডিসেম্বরে ২৬ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্য ঠিক করে দিয়েছে আইএমএফ।
জানা যায়, এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মার্চ-এপ্রিল সময়ের ১১৮ কোটি ডলার বিল পরিশোধের সময় নির্ধারিত হয় গত সপ্তাহে। বাংলাদেশ ব্যাংক গত সপ্তাহে সেই বিল পরিশোধের জন্য আদেশ পাঠায়, যা গতকাল কার্যকর হয়েছে। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যে আন্ত-আঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তিব্যবস্থা। এর মাধ্যমে এশিয়ার নয়টি দেশের মধ্যে যেসব আমদানি-রপ্তানি হয়, তার দায় দুই মাস পরপর নিষ্পত্তি করা হয়। তবে অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের লেনদেন তাৎক্ষণিকভাবে সম্পন্ন হয়। আকুর সদস্যদেশগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ভুটান ও মালদ্বীপ। তবে দেনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় শ্রীলঙ্কা এই তালিকা থেকে বাদ পড়েছে।
ডলারের ওপর চাপ কমাতে ঋণপত্র খোলায় কড়াকড়ি আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য শতাধিক পণ্যে বাড়তি শুল্কও বসিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর। এতে কমে গেছে আমদানি ঋণপত্র খোলা। এরপরও কমছে না ডলার–সংকট। দামও ঊর্ধ্বমুখী।
ডলার–সংকট প্রকট হওয়ায় গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব থেকে সরে আসে। এ দায়িত্ব দেওয়া হয় ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের সঙ্গে জড়িত ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনকে (বাফেদা)। এই দুই সংগঠন মিলে সময়ে–সময়ে ডলারের দাম নির্ধারণ করছে এখন। এবিবি ও বাফেদার সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে এখন প্রতি ডলারের দাম ১০৮ টাকা, যা আগে ছিল ১০৭ টাকা। একইভাবে রপ্তানিকারকেরা রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে প্রতি ডলারের দাম পাচ্ছেন ১০৬ টাকা, যা আগে ছিল ১০৫ টাকা। নতুন এ সিদ্ধান্ত ১ মে থেকে কার্যকর হয়েছে।