চাহিদা বেড়েছে সৌদি রিয়ালের, দাম বেশি ব্যাংকেই
হজের কারণে সৌদি রিয়ালের দাম বেড়ে গেছে। তবে ব্যাংকে প্রতি রিয়ালের দাম ৩১ টাকা ২০ পয়সা, খোলাবাজারে ২৯ টাকা ৮০ পয়সা।
হজ আসন্ন হওয়ায় সৌদি আরব–যাত্রা বেড়ে গেছে। হজের কারণে সৌদি-বাংলাদেশ বিমান চলাচলও যেকোনো সময়ের তুলনায় বাড়ছে। এর প্রভাব পড়েছে সৌদি মুদ্রা রিয়ালে। গত তিন মাসে ব্যাংকে সৌদি রিয়ালের দাম বেড়ে গেছে প্রায় দুই টাকা। আর এক বছরের ব্যবধানে প্রতি রিয়ালের দাম বেড়েছে সাত টাকার বেশি। ব্যাংকের পাশাপাশি রিয়ালের দাম বেড়েছে খোলাবাজারেও। ফলে হজযাত্রীদের খরচ বেড়ে গেছে। তবে অবাক হওয়ার মতো বিষয় হলো খোলাবাজার ও মানি চেঞ্জারের চেয়ে ব্যাংকে প্রতি রিয়ালের দাম এক থেকে দেড় টাকা বেশি।
পবিত্র হজ পালনের জন্য ২১ মে থেকে সৌদি আরবের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবেন হজযাত্রীরা। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৭ জুন হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। বাংলাদেশ থেকে এ বছর মোট ১ লাখ ২৭ হাজার মানুষ হজ করতে পারবেন। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধিত হজযাত্রীদের হজের জন্য খরচ হচ্ছে প্রায় ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৫২৯ টাকা (১৫ হাজার ৬২২ সৌদি রিয়াল)।
হজের খরচ যাত্রীরা আগেই পরিশোধ করে দেন। এর বাইরে প্রতিজন হজযাত্রী হজে যাওয়ার সময় বিদেশি মুদ্রা সঙ্গে নিয়ে যান। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। এ জন্য গত এপ্রিল থেকে রিয়াল কেনা শুরু করে দিয়েছেন হজযাত্রীরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, এবার বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রীরা হজের খরচের বাইরে ১ হাজার ২০০ ডলার বা সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সঙ্গে নিয়ে যেতে পারবেন।
হজযাত্রী ফারুক আহমেদ সস্ত্রীক এবার হজে যাওয়ার জন্য টাকা জমা দিয়েছেন। সৌদি আরব যাওয়ার তারিখও নির্ধারণ হয়ে গেছে। সঙ্গে কিছু রিয়াল নেওয়ার জন্য ব্যাংকে খোঁজ নিচ্ছিলেন। জানতে পারেন ব্যাংকেই দাম বেশি, খোলাবাজারে কম। ফারুক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যাংকে দাম কম হবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এখন উল্টো শুনছি। আগে কখনো এমনটা শুনিনি।’
জানা গেছে, গত ৫ ফেব্রুয়ারি জনতা ব্যাংক প্রতি রিয়াল বিক্রি করেছে ২৯ টাকা ৫০ পয়সায়। ৫ মার্চ এ দাম বেড়ে হয় ৩০ টাকা ৫০ পয়সা। আর ৫ এপ্রিল ব্যাংকটি প্রতি রিয়াল বিক্রি করেছে ৩১ টাকা ২০ পয়সায়। এখনো একই দামে রিয়াল বিক্রি করছে ব্যাংকটি। এর চেয়ে ১০-২০ পয়সা কম বা বেশি দামে রিয়াল বিক্রি হচ্ছে অগ্রণী, রূপালী ও সোনালী ব্যাংকে।
তবে মতিঝিলের মানি চেঞ্জার ও খোলাবাজারে রিয়াল বিক্রি হচ্ছে ২৯ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে ২৯ টাকা ৮৫ পয়সা দামে। আবার অনেক মানি চেঞ্জার ৫০০ রিয়ালের নোট বিক্রি করছে ২৯ টাকা ৮০ পয়সায় এবং ১০০ রিয়াল নোট ৩০ টাকা ৩০ পয়সায়। ২০২২ সালের মার্চে প্রতি রিয়ালের দাম ছিল ২৪ টাকা।
মতিঝিলের খোলাবাজারের মুদ্রা ব্যবসায়ী জালাল আহমেদ বলেন, এই সময়ে রিয়ালের চাহিদা অনেক। সে তুলনায় সরবরাহ কিছুটা কম। এর ফলে দাম কিছুটা বেশি। তবে ব্যাংকের চেয়ে খোলাবাজারে দাম এখনো কম।
ব্যাংকাররা বলছেন, ব্যাংক ডলার বা রিয়াল কোনোটাই বিদেশ থেকে আমদানি করে না। বিদেশফেরত যাত্রীরা ব্যাংকের কাছে মুদ্রা বিক্রি করলে সেই মুদ্রাই পরে গ্রাহকদের কাছে ব্যাংক বিক্রি করে। এ জন্য ব্যাংকে নগদ ডলারের ভালো সরবরাহ থাকলেও অন্য মুদ্রার সরবরাহ কম। কারণ, অন্য দেশফেরত যাত্রীরা বেশির ভাগ শ্রমিক। তাঁরা ব্যাংকে না এসে খোলাবাজার ও মানি চেঞ্জারে গিয়ে বিদেশ থেকে সঙ্গে আনা বৈদেশিক মুদ্রা বিক্রি করেন। এ ছাড়া খোলাবাজারের তুলনায় ব্যাংকের পরিচালন খরচ অনেক বেশি। ফলে খোলাবাজারের চেয়ে ব্যাংকে ডলার ছাড়া অন্য মুদ্রার দামও কিছুটা বেশি।
তবে মানি চেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সিনিয়র সহসভাপতি এস এম জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রতি রিয়াল কেনাবেচায় ১০ থেকে ১৫ পয়সা মুনাফা করি। আর ব্যাংক প্রতি রিয়ালে মুনাফা করে ১-২ টাকা। এ জন্য ব্যাংকে দাম বেশি।’