দেশের শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোয় ২০২২ থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত দেড় বছরে প্রচুর গ্রাহক আমানত তুলে নিয়েছেন। আবার ঋণ অনিয়মের কারণে প্রচলিত ব্যাংকগুলোর তুলনায় বেশি তারল্যসংকটে ভুগছে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো।

এই ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত তারল্য গত বছরের জুলাই থেকে গত জুন পর্যন্ত অর্থাৎ এক বছরে কমেছে ৬৬ দশমিক ৬ শতাংশ বা ৯৮২ কোটি টাকা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ঋণমান যাচাইকারী সংস্থা ফিচ রেটিংস বাংলাদেশের শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর ওপর সম্প্রতি এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ। কিন্তু সম্প্রতি এসব ব্যাংক তারল্যসংকটে পড়েছে। তবে ইসলামি ধারার ব্যাংকে আমানত রাখার ক্ষেত্রে এ দেশের মানুষের বেশ আগ্রহ রয়েছে।

২০২৩ সালের জুন শেষে ব্যাংক খাতের মোট আমানতের ২৫ দশমিক ৩ শতাংশই ছিল শরিয়াহভিত্তিক বিভিন্ন ব্যাংকে। ২০২২ সালের একই সময়ে যা ছিল ২৮ দশমিক ২ শতাংশ। যদিও গত এপ্রিল-জুনে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের অতিরিক্ত তারল্য ১২ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে। শরিয়াহ ব্যাংকগুলোর মোট আমানত ২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসে মাত্র ৩ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে। গত বছরের একই সময়ে আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ শতাংশ।

দেশে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক রয়েছে ১০টি। এগুলো হলো ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। এর মধ্যে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ছয়টি ব্যাংক। এসব ব্যাংক নানা অনিয়মের কারণে তারল্যসংকটে ভুগছে।

ফিচের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর স্বল্পমেয়াদি তারল্যসংকটের চ্যালেঞ্জ হিসাব করা হয় লিকুইডিটি কভারেজ রেশিও বা এলসিআর কমে যাওয়ার হিসাব ধরে। ২০২২ সালের শেষ ছয় মাসে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর এলসিআর কমে দাঁড়ায় ৮৭ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০২১ সালের শেষে যা ছিল ১৮৮ দশমিক ৮ শতাংশ।

শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিংয়ের বাজারের দিক দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর মোট সম্পদের পরিমাণ ৪ লাখ ৯৭ হাজার ৭ কোটি টাকা। 

ফিচ বলছে, অনেক প্রচলিত ব্যাংকই নতুন শরিয়াহভিত্তিক শাখা বা পূর্ণাঙ্গ শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকে রূপান্তরিত হয়ে ইসলামিক ব্যাংকিং সুবিধা বাড়াচ্ছে।