টেকসই ব্যাংকিংয়ে অনন্য অবস্থানে ব্র্যাক ব্যাংক
সেবার মান ও পরিধি, পরিবেশবান্ধব অর্থায়ন ও ক্ষুদ্র-মাঝারি গ্রাহকনির্ভর ব্র্যাক ব্যাংক এখন দেশের টেকসই ব্যাংকের মধ্যেও অন্যতম সেরা ব্যাংক। দেশের আর কোনো ব্যাংকের মালিকানা ও পরিচালনা পর্ষদ ব্র্যাক ব্যাংকের মতো নয়। ফলে ব্যবস্থাপনার দক্ষতাও অনন্য, যা ব্যাংকটিকে আলাদা পরিচয় এনে দিয়েছে। মানুষ, ধরিত্রী ও সমৃদ্ধি (৩ পি)—এই তিন লক্ষ্য হলো ব্র্যাক ব্যাংকের অন্যতম মূল্যবোধ। এসব মূল্যবোধ ব্যাংকটিকে পাঁচ বছর ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের টেকসই তালিকায় রাখতে সহায়তা করে যাচ্ছে।
কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) গ্রাহকদের অর্থায়নে ব্র্যাক ব্যাংক প্রতিষ্ঠা হলেও ব্যাংকটির কর্মকাণ্ড একটি খাতে আটকে থাকেনি। ব্যাংকটি অর্থায়ন করেছে করপোরেট ও রিটেইল বা খুচরা ব্যাংকিং খাতেও। ফলে গাড়ি, বাড়ি ও ব্যক্তি ঋণেও বেশ এগিয়ে আছে ব্যাংকটি। সব মিলিয়ে প্রযুক্তিনির্ভর সেবা ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সাফল্য ব্যাংকটিকে দেশীয় মালিকানার ব্যাংকগুলোর মধ্যে শীর্ষ মুনাফা অর্জনকারী ব্যাংকে পরিণত করেছে। দেশের বেশির ভাগ ব্যাংক গ্রামের আমানত শহরে বিনিয়োগ করে। কিন্তু ব্র্যাক ব্যাংক শহরের আমানত গ্রামে বিনিয়োগ করছে। খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ, টেকসই খাতে অর্থায়ন, প্রযুক্তিনির্ভর সেবা এবং গ্রাহকবান্ধব কার্যক্রমের কারণে এখন বাংলাদেশের অন্যতম সফল বাণিজ্যিক ব্যাংক এটি। গত বছর ব্যাংকটির নিট মুনাফা প্রথমবারের মতো ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার গণ্ডি পেরিয়ে ১ হাজার ২১৪ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
জানা গেছে, ব্যাংকটিতে ২০ লাখ গ্রাহকের জমা অর্থের পরিমাণ প্রায় ৬৯ হাজার কোটি টাকা। আর বিতরণ করা ৬২ হাজার কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ৪২ শতাংশ সিএমএসএমই, ৪২ শতাংশ করপোরেট ও ১৬ শতাংশ রিটেইল বা খুচরা খাতে বিতরণ করা হয়েছে। ব্যাংকটির সিএমএসএমই খাতের গ্রাহক ১৫ লাখ, করপোরেট গ্রাহক ৯ হাজার ৫০৩ জন ও ১৩ লাখ ভোক্তা ঋণের গ্রাহক। ব্যাংকটির মোট জনবল ৯ হাজার ৬৭ জন।
ব্যাংক–সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালে ব্র্যাক ব্যাংকের টেকসই ঋণের পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ২৬১ কোটি টাকা। গত বছর, তথা ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫০ হাজার ২১৫ কোটি টাকায়। ব্যাংকটি সবুজ শিল্প, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, কৃষি এবং নারী উদ্যোক্তাদের কাছে ঋণ পৌঁছে দিয়ে সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের টেকসই ব্যাংকের তালিকায় ব্র্যাক ব্যাংক টানা পাঁচ বছর ধরে নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে, যা ব্যাংকটির পরিবেশ ও সামাজিক সচেতনতার উদাহরণ বলে মনে করেন ব্যাংকটির কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, যেখানে অনেক ব্যাংক উচ্চ খেলাপি ঋণের চাপে জর্জরিত, সেখানে ব্র্যাক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ২০২৪ সাল শেষে কমে দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৬৩ শতাংশে। অথচ ২০২১ সালেও ব্যাংকটির খেলাপির হার ছিল ৩ দশমিক ৯০ শতাংশ। ব্যাংকটির ঋণ বাড়লেও খেলাপির পরিমাণ না বাড়ায় ব্যাংকটির মূলধন ভিত্তি মজবুত হয়েছে।
সিএমএসএমই গ্রাহকদের অর্থায়নে ব্র্যাক ব্যাংক প্রতিষ্ঠা হলেও ব্যাংকটির কর্মকাণ্ড একটি খাতে আটকে থাকেনি। ব্যাংকটি অর্থায়ন করেছে করপোরেট ও রিটেইল বা খুচরা ব্যাংকিং খাতেও।
২০২১ থেকে ২০২৪—এই সময়ে ব্র্যাক ব্যাংকের মুনাফা বেড়ে দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। ২০২৪ সালে নিট মুনাফা হয়েছে ১ হাজার ২১৪ কোটি টাকা, যা ২০২১ সালে ছিল ৫৫৫ কোটি টাকা। আর চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্র্যাক ব্যাংকের মুনাফা করেছে ৬২০ কোটি টাকা।
ব্র্যাক ব্যাংক দেশের অন্যতম বৃহৎ এসএমই ব্যাংক। ২০২৪ সালে নতুন ১ লাখের বেশি গ্রাহক ব্যাংকটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই গ্রাহকদের দ্রুত ঋণ বিতরণ করা হয়। পাশাপাশি নারী উদ্যোক্তা ও স্টার্টআপ উদ্যোগে বিনিয়োগ করে ব্যাংকটি সামাজিক অন্তর্ভুক্তিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। ব্যাংকের অনেক শাখা ও এটিএম এখন সৌরবিদ্যুৎ–চালিত। ব্র্যাক ব্যাংকের পরিবেশনীতি অনুযায়ী, নতুন স্থাপনায় সৌরশক্তি ও জ্বালানি দক্ষতা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
টেকসই প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি ব্র্যাক ব্যাংক তার সিএসআর বা করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচির আওতায় ধারাবাহিকভাবে ব্যয় বৃদ্ধি করেছে। ২০২৩ সালের ব্যাংকটি সিএসআর খাতে ব্যয় করে প্রায় ১১ কোটি টাকা, ২০২৪ সালে যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৪ কোটি টাকায়।
এমন সব টেকসই উদ্যোগের জন্য ব্র্যাক ব্যাংক আন্তর্জাতিক পর্যায়েও স্বীকৃতি পেয়েছে। এগুলোর মধ্যে সাম্প্রতিক ব্লুমবার্গ সাসটেইনেবিলিটি রেটিংয়ে বাংলাদেশের সেরা ইএসজি রেটিং প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান, মুডিসের টপ ইএসজি পারফরমারের স্বীকৃতি এবং ইউনাইটেড নেশনস গ্লোবাল কমপ্যাক্ট নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এসডিজি পাইওনিয়ার অ্যাওয়ার্ড উল্লেখযোগ্য।