এস আলম কি এত টাকা একা খেয়েছে, প্রশ্ন ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যানের

ভয়েস ফর রিফর্ম, নাগরিক কোয়ালিশন ও ব্রেইন আয়োজিত ‘অর্থনৈতিক সংস্কারে অগ্রাধিকার’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা। আজ বুধবার রাতে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের বিডিবিএল ভবনেছবি: প্রথম আলো

বর্তমান সরকার অভ্যুত্থানের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশে মাফিয়া নেটওয়ার্ক ভাঙতে পারেনি, যেটির সঙ্গে ব্যবসায়ী ও আমলারা জড়িত। এই ক্ষমতাবানেরাই দেশের নীতি নির্ধারণ করে থাকেন। তাই সেখানে আঘাত করতে হবে। তাঁদের ক্ষমতার পালাবদল হচ্ছে, এমন ইঙ্গিত দিতে হবে। ক্ষমতার কাঠামো নিয়ে আগে আলাপ করতে হবে। নয়তো ৬ মাস পর আবার অভ্যুত্থান হবে।

আজ বুধবার রাতে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড বা বিডিবিএল ভবনে অনুষ্ঠিত ‘অর্থনৈতিক সংস্কারে অগ্রাধিকার’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এ কথাগুলো বলে। সেমিনারটি যৌথভাবে আয়োজন করে ভয়েস ফর রিফর্ম, নাগরিক কোয়ালিশন ও ব্রেইন। সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ভয়েস ফর রিফর্মের উদ্যোক্তা ও সংগঠক ফাহিম মাসরুর। আলোচনায় অংশ নেন বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞরা।

যুক্তরাজ্যের সোয়াস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুশতাক খান বলেন, ‘ক্ষমতায় কাঠামোগত পরিবর্তন না আনতে পারলে কোনো সংস্কার উদ্যোগ কাজে আসবে না। কারণ, আগের লোকেরাই নীতি নির্ধারণ করছেন। তাই সেখানে বদল না হলে তাঁদের নিয়েই চলতে হবে। তখন দেখা যাবে কোনো কিছুই বদলাচ্ছে না। ৬ মাস পর দেখা যাবে, আবার অভ্যুত্থান হচ্ছে। ছাত্ররাও আবার সেটা বলতে শুরু করেছে। আমরা দেখেছি বিদ্যুৎ খাতে সংঘবদ্ধ অপরাধ হয়েছে। এসব যদি ১০০টির মধ্যে ১০টিও না থামতে পারি, তাহলে ঝুঁকি আরও বাড়বে।’

ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম জুবায়দুর রহমান বলেন, ‘আমরা অর্ধেক সম্পদ নিয়ে কাজ করছি। এস আলম আমাদের ৮২ শতাংশ শেয়ার কিনে নিয়েছিল। তারা আমাদের এত টাকা নিয়ে গেল—এটা কি একা খাওয়া সম্ভব? নিশ্চিতভাবেই অন্যকে অংশ দিয়েছে। আমরা এখন নিজেদের শেয়ার ফেরত নিতে পারছি না। কারণ, আইন অনুযায়ী নিজের শেয়ার নিজে কেনা যায় না।’

ব্র্যাক ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, ‘এ দেশে এমডির দায়িত্ব পালন করা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ সেটা বলার বাইরে। মাত্র ২ শতাংশ শেয়ার কিনে কেন ব্যবসায়ীরা ব্যাংকের চেয়ারম্যান হবেন? আমাদের দেশে ব্যাংকের সংখ্যা হওয়া উচিত ১০-১২টি। আস্তে আস্তে সেদিকেই যেতে হবে।’

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য মনজুর হোসেন বলেন, দলীয় লোকজন নিয়োগ দিলে প্রতিষ্ঠান ভালো করতে পারবে না। বর্তমান গভর্নরের কাজে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে না। তাই সুশাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারে জোর দিতে হবে।

প্রথম আলোর অনলাইন প্রধান শওকত হোসেন বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে পারলে অনেক সমস্যা দূর হয়ে যাবে। নয়তো বর্তমান গভর্নর চলে গেলে আবার সমস্যা দেখা দেবে।

মূল প্রবন্ধে ফাহিম মাসরুর বলেন, ‘বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে আলাপ হলেও অর্থনৈতিক সংস্কার নিয়ে সেভাবে কথা হচ্ছে না। আমরা কি ভিয়েতনাম স্টাইলে দ্রুত প্রবৃদ্ধির দিকে যাব। নাকি ইন্দোনেশিয়ার মতো স্থানীয় চাহিদাভিত্তিক বাজারের দিকে যাব। কিংবা কেরালার মতো রেমিট্যান্স–নির্ভর হব, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার।’

সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, অর্থনৈতিক টাস্কফোর্সের সদস্য আখতার মাহমুদ, অর্থনীতিবিদ জিয়া হাসান প্রমুখ।