দেশে নগদবিহীন লেনদেন বাড়াতে দরকার প্রণোদনা

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল

তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষের যুগে পণ্য বা সেবার মূল্য পরিশোধে আধুনিক নানা ব্যবস্থার প্রচলন হয়েছে। উন্নত বিশ্বে অর্থনৈতিক লেনদেনে কাগজ ও ধাতব মুদ্রার বিকল্প হিসেবে কার্ড ও মোবাইল ওয়ালেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ‘নগদবিহীন বা ক্যাশলেস লেনদেন’ ব্যবহার করে সহজ ও নিরাপদ বিনিময় সম্ভব হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও সুইজারল্যান্ডের মতো দেশগুলো ব্যাংক নোট ও মুদ্রার ব্যবহার কমিয়ে ‘নগদবিহীন অর্থনীতির’ দিকে যাত্রা করছে। খুব দ্রুতই উন্নত দেশগুলো কাগজ ও ধাতব মুদ্রানির্ভর লেনদেন কমিয়ে নগদবিহীন অর্থনীতিতে পরিণত হবে।

উন্নত অবকাঠামো, কর্মসংস্থানের সুযোগ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসার প্রসার, রপ্তানি বৃদ্ধি, প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধি এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তির নানা উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিও এগিয়ে যাচ্ছে ধারাবাহিকভাবে। প্রযুক্তির প্রসার এবং সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ-২০২১’ লক্ষ্যের ফলে অভাবনীয় অর্থনৈতিক সাফল্য পেয়েছি আমরা। এখন সরকার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের’ ধাপ পেরিয়ে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১’–এর রূপকল্প তৈরি করেছে। ‘স্মার্ট সিটিজেন’, ‘স্মার্ট ইকোনমি’, ‘স্মার্ট সোসাইটি’ ও ‘স্মার্ট গভর্নমেন্ট’—স্মার্ট বাংলাদেশের এই চারটি মূল স্তম্ভের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থা। বাংলাদেশের এই স্মার্ট যাত্রায় আরও আধুনিক, নিরাপদ ও সহজ লেনদেন প্রযুক্তি গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিতে মাস্টারকার্ড নতুন নতুন সেবা যুক্ত করছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক ‘কিউআর কোড’-এর মাধ্যমে ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থা চালু করেছে। কিউআর (কুইক রেসপন্স) কোডের ব্যবহার বাড়লে টাকা বহনের এবং ভাংতি করার ঝামেলা ছাড়াই লেনদেন করতে পারবেন ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড় উদ্যোক্তারা। কিউআর কোডের মতো নগদবিহীন লেনদেন ব্যবস্থা জনপ্রিয় হলে বড় কিংবা ছোট অঙ্কের লেনদেনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। তাতে  ছাপানো টাকার লেনদেনের হারও কমে আসবে।  

প্রযুক্তির কল্যাণে এরই মধ্যে বড় শহর এবং আধুনিক বিপণিবিতানের বাইরে দেশের আনাচকানাচে নগদবিহীন লেনদেন সুবিধা পৌঁছে গেছে। বর্তমানে আর্থিক লেনদেনের একটি বড় অংশ ডিজিটাল লেনদেনের মাধ্যমে সম্পন্ন হচ্ছে। এতে লেনদেনের স্বচ্ছতা যেমন নিশ্চিত হচ্ছে, তেমনি দেশের মোট দেশজ উৎপাদনেও (জিডিপি) তার ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগের ফলে রাজধানীর গুলশানের ডিএনসিসি-১ মার্কেটকেও এরই মধ্যে দেশের প্রথম নগদবিহীন মার্কেট হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এর ফলে চা বিক্রেতা, মুচি, ভাসমান খুচরা দোকানসহ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বাংলা কিউআর কোড ব্যবহার করে দ্রুত ও নিরাপদে আর্থিক লেনদেন করতে পারছেন। টাকার অঙ্ক যেমনই হোক না কেন, কিউআর কোডের সহজ ব্যবহার লেনদেনকে অনেক বেশি সহজ করে দিচ্ছে।  

নগদ টাকা ও ধাতব মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় সরকারকে বড় অঙ্কের খরচ বহন করতে হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক হিসাবে, ছাপানো অর্থের ব্যবস্থাপনায় প্রতিবছর জিডিপির শূন্য দশমিক ৫ শূন্য শতাংশ অর্থ খরচ হয়। কিউআর কোড এবং অন্যান্য নগদবিহীন লেনদেন বাড়িয়ে এই খরচ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমিয়ে আনা সম্ভব।

কিউআর কোড ব্যবহার ও সচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমে দেশে নগদবিহীন লেনদেনের ইতিহাসের অংশ হতে কাজ করে যাচ্ছে মাস্টারকার্ড। বিশ্বে অনেক দেশেই ডিজিটাল লেনদেনকে জনপ্রিয় করতে সরকারের পক্ষ থেকে নানা প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। তার সুফলও পেয়েছে দেশগুলো। সরকার স্মার্ট বাংলাদেশের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, সেটি বাস্তবায়ন করতে হলে এ খাতে ৫ শতাংশ করে প্রণোদনা দেওয়া দরকার। যার ৩ শতাংশ পাবেন ব্যবহারকারীরা এবং ২ শতাংশ যাবে মার্চেন্টদের কাছে। পাশাপাশি ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রে ভ্যাট এবং কর মওকুফ সুবিধা দিতে হবে। প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতিতে টিকে থাকতে হলে বাংলাদেশের এই পথ অনুসরণ করা দরকার।

লেখক: মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার