নির্বাচনের আগে ডলার বাজার নিয়ে সিদ্ধান্তে কোনো পরিবর্তন হবে না

ডলার
ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় নির্বাচনের আগে ডলার বাজার বা বিদেশি মুদ্রার বাজার সম্পর্কে নীতিগত কোনো পরিবর্তন আনবে না বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন যেভাবে ডলার পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা চলছে, সেভাবেই চলতে থাকবে। তবে সময়ে সময়ে ডলারের দামে যেভাবে পরিবর্তন আনা হচ্ছে, সেই ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে। বেসরকারি খাতের শীর্ষ পর্যায়ের পাঁচটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) সঙ্গে একান্ত সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এমন মতামত দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

গত বছরের জুলাইয়ে গভর্নর পদে যোগ দেওয়ার পর আব্দুর রউফ তালুকদার এই প্রথমবারের মতো পাঁচটি শীর্ষ স্থানীয় ব্যাংকের এমডিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এই বৈঠক ছিল দীর্ঘ ও আন্তরিকতাপূর্ণ।

যে পাঁচটি ব্যাংকের এমডিদের সঙ্গে গভর্নর আলোচনা করেছেন, সেগুলো হলো ইস্টার্ণ ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, দি সিটি ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ও প্রাইম ব্যাংক। ডাচ্‌–বাংলা ব্যাংকের এমডি এই সভায় থাকার কথা থাকলেও ঢাকায় না থাকায় তিনি বৈঠকে যোগ দিতে পারেননি। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কক্ষে আজ রোববার বেলা তিনটায় শুরু হওয়া সভাটি চলে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে গভর্নর একাই উপস্থিত ছিলেন।

জানা যায়, বর্তমান পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়ে জানতে কিছুদিন ধরেই কিছু ব্যাংকের এমডি গভর্নরের সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করছিলেন। এতে সাড়া দেন গভর্নরও। এমডিদের সঙ্গে বৈঠক আগে সাধারণত স্বল্প সময়ে শেষ হতো, তবে এবারের এটি দেড় ঘণ্টা ধরে চলে। আর্থিক অবস্থার নানা সূচক, মূল্যস্ফীতি, ডলার বাজার, প্রবাসী আয়, করপোরেট সুশাসনসহ নানা বিষয় এই আলোচনায় উঠে আসে। গভর্নর এমডিদের কাছে পরিস্থিতি জানতে চান। এমডিরাও কিছু বিষয় উত্থাপন করে পরামর্শ চান। জানা গেছে, তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি গভর্নর।

তবে আব্দুর রউফ তালুকদার জানিয়েছেন যে জাতীয় নির্বাচনের আগে ব্যাংক খাতে বড় ধরনের কোনো সংস্কার বা নীতির পরিবর্তন হবে না। কোনো ধরনের অস্থিরতা যাতে না হয়, সে জন্যই এই সিদ্ধান্ত। এ জন্য ডলার বাজার নিয়েও সিদ্ধান্তে কোনো পরিবর্তন আনবে না বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন যেভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা চলছে, সেভাবেই চলতে থাকবে। পাশাপাশি সময়ে সময়ে যেভাবে ডলারের দামে পরিবর্তন আনা হচ্ছে, তা–ও অব্যাহত থাকবে।

একই সাথে এসএমই খাতে ঋণ বাড়ানোর জন্যও গভর্ণর ব্যাংকের এমডিদের পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

সভায় যোগ দিয়েছিলেন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হোসেন, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, ইস্টার্ণ ব্যাংকের এমডি আলী রেজা ইফতেখার, সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিন ও প্রাইম ব্যাংকের এমডি হাসান ও. রশীদ।

যোগাযোগ করা হলে ব্যাংকের এমডিরা সভা সম্পর্কে মন্তব্য করতে রাজি হননি। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে দেশের অর্থনীতির চলমান সংকট সমাধানে অর্থনীতিবিদ ও আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে শুরু করেছে সরকার। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে বর্তমান পরিস্থিতিতে করণীয় বিষয়ে পরামর্শ গ্রহণের নির্দেশ দেওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক এই উদ্যোগ নেয়। গত বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা প্রথম বৈঠকটি করেন অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের সঙ্গে।

গভর্নর ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা চলতি সপ্তাহে গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ ও নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে আলোচনা করবেন, এমন সূচি রয়েছে। এরপর বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান ও সাবেক অর্থসচিব মোহাম্মদ তারেকের সঙ্গে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ধারাবাহিকভাবে আরও দুই গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এবং অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত সাংবাদিকদের সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকের কথাও রয়েছে।