খেলাপি ঋণ কমানোর দায়িত্ব ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের নিতে হবে: গভর্নর

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার
ছবি: সংগৃহীত

দেশের ব্যাংক খাতের বড় সমস্যা খেলাপি ঋণ। সেই সমস্যা সমাধানে ব্যাংকের শীর্ষ নেতৃত্ব ও ব্যবস্থাপনায় যাঁরা আছেন, তাঁদেরই দায়িত্ব নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। এ ছাড়া খেলাপি ঋণ কমানো ও করপোরেট সুশাসন নিশ্চিত করতে ব্যাংকিং সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন বলেও মনে করেন নিয়ন্ত্রক সংস্থার শীর্ষ এই কর্তা।

আজ বুধবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) আয়োজিত ‘ব্যাংকিং অন ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। এ সময় তিনি ২০২৭ সালের মধ্যে দেশের ৭৫ শতাংশ লেনদেন ডিজিটাল মাধ্যমে উন্নীত করার কথা বলেন।

গত সোমবার এবিবি এক সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিল, খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ করা এককভাবে ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে সম্ভব নয়। এ কাজের জন্য সামাজিক প্রতিশ্রুতি দরকার। খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে আইনি ব্যবস্থা কঠোর করতে হবে এবং এ খাতে লোকবল বাড়াতে হবে।

আরও পড়ুন
‘ব্যাংকিং অন ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। আজ রাজধানীর একটি হোটেলে
ছবি: প্রথম আলো

আজকের অনুষ্ঠানে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, দেশের ব্যাংক খাতের অস্বস্তির বিষয় খেলাপি ঋণ। এটা কমাতে ব্যাংকের শীর্ষ ব্যবস্থাপনায় যাঁরা আছেন, তাঁদের বিশেষ করে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে দায়িত্ব নিতে হবে। শীর্ষ কর্তারা শক্তভাবে পদক্ষেপ নিলে দেশের ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের সমস্যা কমে আসবে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ‘দূরদর্শী নীতিমালা’ প্রণয়নের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আরও বলেন, ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ কমানো ও করপোরেট সুশাসন নিশ্চিত করতে ব্যাংকিং সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। এটা করতে হলে আলাদা করে পরিকল্পনা করতে হবে এবং কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এ ছাড়া ব্যাংক খাতের ডিজিটাল রূপান্তরের যে চেষ্টা চলছে, তার জন্য শক্তিশালী ঝুঁকি মোকাবিলা ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে, যাতে রূপান্তরের এই প্রক্রিয়ায় ব্যাংকের বিকাশ বাধাগ্রস্ত না হয়।

তবে এ ক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়ানো প্রয়োজন, এ কথা উল্লেখ করে গভর্নর আব্দুর রউফ বলেন, প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংকিং ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলে ব্যাংকের ব্যবসার বৈচিত্র্য বাড়বে। এটি দেশকে নগদ টাকার লেনদেনবিহীন স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের ক্ষেত্রে এগিয়ে রাখবে। এই যাত্রায় দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংককে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান গভর্নর।

আরও পড়ুন

সম্মেলন এবিবির চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, দেশের ডিজিটাল আর্থিক সেবার প্রবৃদ্ধি কীভাবে ত্বরান্বিত হতে পারে, সম্মেলন থেকে তা নিয়ে পর্যবেক্ষণ উঠে আসবে। ডিজিটাল রূপান্তর দ্রুত নিশ্চিত করতে ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় কৌশল গ্রহণে সহায়তা করবে এটি।

আর্থিক সেবা খাত প্রভাবিত করতে পারে—এমন নীতি নিয়ে গবেষণা চলমান রাখতে হবে বলে পরামর্শ দেন এবিবির চেয়ারম্যান। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ব্যাংক ও ফিনটেক কোম্পানিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া আরও বাড়ানো প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সম্মেলন উপলক্ষে এবিবি ও পিডব্লিউসি যৌথভাবে ‘ব্যাংকিং ইভল্যুশন: ড্রিভেন বাই ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন’ শিরোনামের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ডিজিটাল রূপান্তরের জন্য গৃহীত কৌশলগুলো বিশ্লেষণে বিভিন্ন ব্যাংকের নির্বাহীদের ওপর পরিচালিত জরিপের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি করা হয়েছে।

দেশের তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর গ্রাহকদের ২৬ শতাংশ মনে করেন, এমএফএস সেবাদানকারীরা উদ্ভাবনী পণ্য বাজারে নিয়ে আসার কারণে তারা এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হতে পারছেন।

জরিপে অংশ নেওয়া ৮৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারী মনে করেন, গ্রাহক বাড়াতে মুঠোফোন ও ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যাংকিং সেবা বেশি সফল। এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা ব্যাংকিং সেবার কাছাকাছি আসতে পেরেছেন এবং এই সেবার প্রতি আগ্রহী হয়েছেন।

দেশের তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর গ্রাহকদের ২৬ শতাংশ মনে করেন, এমএফএস সেবাদানকারীরা উদ্ভাবনী পণ্য বাজারে নিয়ে আসার কারণে তারা এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হতে পারছেন।

সম্মেলনে বিভিন্ন ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাসহ আরও উপস্থিত ছিলেন ৪৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের দেড় শতাধিক কর্মকর্তা। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক কোম্পানি ও সংস্থার বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন অধিবেশন পরিচালনা করেন। দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলন শেষ হবে কাল বৃহস্পতিবার।