বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ২ কোটি ডলার ফেরত দেওয়ায় শ্রীলঙ্কার প্যান এশিয়া ব্যাংকিং করপোরেশনের কর্মকর্তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। ২০১৬ সালে নিউইয়র্ক ফেডারেল ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া ২ কোটি ডলার ফেরত পাঠিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার ব্যাংক কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংক আজ বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে। এতে বলা হয়, ২০১৬ সালের বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ২ কোটি ডলারের একটি প্রতারণামূলক লেনদেন সফলভাবে ঠেকিয়ে দেওয়ায় এবং অনুকরণীয় সতর্কতা, পেশাদারত্ব ও সততার জন্য শ্রীলঙ্কার প্যান এশিয়া ব্যাংকিং করপোরেশনের কর্মকর্তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা জানানো হয়েছে। এ জন্য আজ একটি বিশেষ পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনার, প্যান এশিয়া ব্যাংকিং করপোরেশনের পুরস্কারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাসহ শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের চারজন ডেপুটি গভর্নর এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রধান।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো. হাবিবুর রহমান অনুষ্ঠানে আগত সম্মানিত অতিথিদের স্বাগত জানান এবং তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘এই অনুষ্ঠানটি এমন একদল ব্যক্তির প্রতি দীর্ঘ প্রতীক্ষিত শ্রদ্ধাঞ্জলি, যাঁদের কর্ম বিশ্ব আর্থিক ইতিহাসের একটি সংকটময় মুহূর্তে সর্বোচ্চ স্তরের সতর্কতা এবং নৈতিক আচরণ প্রদর্শন করেছে। তাঁদের সততা শুধু আর্থিক সম্পদকেই রক্ষা করেনি, বরং বৈশ্বিক আর্থিক সম্প্রদায়কে একত্রিত করার মূল্যবোধকেও শক্তিশালী করেছে।’
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, ‘শ্রীলঙ্কার ব্যাংকারদের যথাযথ পরিশ্রম এবং বাংলাদেশ থেকে যাওয়া তদন্তকারী দলকে শ্রীলঙ্কায় তাঁদের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানাই। এই অনুষ্ঠান শুধু প্রশংসার প্রতীক নয়, বরং আন্তসীমান্ত সহযোগিতা, আর্থিক সততা এবং প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহির ক্ষেত্রে আমরা যেসব মূল্যবোধ ধারণ করি সেগুলোরও পুনঃ নিশ্চিতকরণ।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, এই অনুষ্ঠান নৈতিকতা, বিচক্ষণতা ও মানবিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি, যা সীমান্ত অতিক্রম করেছে। শ্রীলঙ্কার এই কর্মকর্তাদের নেওয়া সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ শুধু বাংলাদেশের আর্থিক স্বার্থকেই রক্ষা করেনি, বরং ব্যাংকিং ব্যবস্থার অখণ্ডতার প্রতি বৈশ্বিক বিশ্বাসকেও সুদৃঢ় করেছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক ফেডারেল ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা সুইফট পেমেন্ট পদ্ধতিতে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে বিপুল এই অর্থ হাতিয়ে নেয়। পরে বিভিন্ন সময় ১ কোটি ৫০ লাখ ডলার ফেরত আনা সম্ভব হয়। কিন্তু এখনো ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।