বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য
ভোক্তা ঋণে বেড়েছে গ্রাহক, কমে গেছে ঋণের স্থিতি
তিন মাসে ভোক্তা ঋণ কমেছে ২২,২৮১ কোটি টাকা।
তিন মাসে গ্রাহক বেড়েছে ৫,৮৩,৪১৬ জন।
ভোক্তা ঋণে গ্রাহক বাড়লেও ঋণের স্থিতি কমে গেছে। গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর—এই তিন মাসে ভোক্তা ঋণ কমেছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। যদিও এই তিন মাসে ভোক্তা ঋণের গ্রাহকের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৬ লাখ।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ব্যবসা-বাণিজ্য, নির্মাণ, পরিবহনসহ প্রায় সব উৎপাদনমুখী খাতে ব্যাংকঋণের স্থিতি কমলেও ভোক্তা ঋণ বাড়ছিল। তবে চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে এসে এ খাতে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশের এক-চতুর্থাংশ ব্যাংকের ঋণ কার্যক্রম প্রায় বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া শর্ত শিথিল করায় খেলাপি হওয়া ভোক্তা ঋণ অবলোপন করছে বেশ কিছু ব্যাংক। ফলে ঋণ স্থিতি কমে এসেছে। তবে এর মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংক ভোক্তা ঋণে ভালো করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের ভোক্তা ঋণের স্থিতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা, যা মোট ব্যাংকঋণের ৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ। গত জুন শেষে ভোক্তা ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৭২ হাজার ৬২১ কোটি টাকা, যা ছিল মোট ব্যাংকঋণের ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ। অর্থাৎ তিন মাসে ভোক্তা ঋণ কমেছে ২২ হাজার ২৮১ কোটি টাকা। তবে এই সময়ে ভোক্তা ঋণের গ্রাহক ৪৯ লাখ ২৫ হাজার ৩৫৫ থেকে বেড়ে হয়েছে ৫৫ লাখ ৮ হাজার ৭৭১। অর্থাৎ গ্রাহক বেড়েছে ৫ লাখ ৮৩ হাজার ৪১৬।
এর আগে চলতি বছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে এ খাতে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ বেড়েছিল।
বাড়ল-কমল কোন খাতে
ব্যাংকগুলো শিক্ষা, চিকিৎসা, বিবাহ, ভ্রমণ, পেশাজীবী ঋণ, গাড়ি ঋণ, আবাসন ঋণ, প্রভিডেন্ট ফান্ডের বিপরীতে ঋণ, ডিপোজিট প্রিমিয়াম স্কিম (ডিপিএস) ও ফিক্সড ডিপোজিট রিসিপ্টের (এফডিআর) বিপরীতে ব্যক্তিগত ঋণ, ক্রেডিট কার্ডসহ বিভিন্ন খাতে ঋণ দিয়ে থাকে। এর সবই ভোক্তা ঋণ হিসেবে পরিচিত।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, গত জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে পেশাজীবী ও চিকিৎসক ঋণ, ডিপিএস ও এফডিআরের বিপরীতে ঋণ এবং জমি কেনার ঋণে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এর মধ্যে কোন কোন খাতে গ্রাহক ও কোন খাতে ঋণ কমেছে। আবার গ্রাহক ও ঋণ উভয়ও কমেছে কোনো কোনো খাতে। জুনে পেশাজীবী ও চিকিৎসক ঋণে গ্রাহক ছিল ১৬ হাজার ৩৩। সেপ্টেম্বর শেষে যা কমে হয়েছে ১৪ হাজার ৩১১। এই সময়ে ঋণের স্থিতি ১ হাজার ১৬৬ কোটি থেকে কমে হয়েছে ১ হাজার ২ কোটি টাকা। আবাসন খাতে ঋণের স্থিতি ৩১ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকা থেকে কমে হয়েছে ৩০ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা। পরিবহন খাতের ঋণ ৬ হাজার ৬০২ কোটি টাকা থেকে কমে হয়েছে ৫ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা।
এ ছাড়া টিভি, ফ্রিজ, এসি, কম্পিউটার ও ফার্নিচার কেনার ঋণ ৪৪ হাজার ৬৫২ কোটি থেকে কমে হয়েছে ৩৪ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকা। এই সময়ে ডিপিএসের বিপরীতে ঋণ ৭ হাজার ২০২ কোটি থেকে কমে হয়েছে ৫ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা। এফডিআরের বিপরীতে ঋণ ৩০ হাজার ৪০৯ কোটি থেকে কমে হয়েছে ২৫ হাজার ৮৮ কোটি টাকা। তবে এই সময়ে ঋণ বেড়েছে ক্রেডিট কার্ড, শিক্ষা খরচ, বিবাহ, জমি কেনা, বেতনের বিপরীতে ঋণ, ভ্রমণের ঋণ।
অনেক ব্যাংক এখন বেতনের বিপরীতে ঋণ বাড়াচ্ছে। কারণ, এসব ঋণে খেলাপির হার কম। শীর্ষস্থানীয় ব্র্যাক ব্যাংক ইতিমধ্যে ৪৫ হাজার গ্রাহককে ডিজিটাল ঋণ দিয়েছে। এভাবে তাৎক্ষণিক ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হচ্ছে, যা এখন বাড়িয়ে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত করা হয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী, একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যক্তিগত ঋণ, ৬০ লাখ টাকা পর্যন্ত গাড়ি ঋণ এবং ২ কোটি টাকা পর্যন্ত আবাসন ঋণ নিতে পারেন। এসব ঋণের সুদহার বর্তমানে ১১ থেকে ১৪ শতাংশের মধ্যে থাকলেও ক্রেডিট কার্ডে সুদের হার সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত।