নগদের মাধ্যমে প্রাথমিকের উপবৃত্তির টাকা দিতে প্রতিমন্ত্রীর সুপারিশ

মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’

এখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মা, বাবা বা বৈধ অভিভাবকেরা নিজেদের সক্রিয় মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে (এমএফএস) উপবৃত্তির টাকা গ্রহণ করছেন। ফলে কাউকে অন্য প্রতিষ্ঠানে নতুন করে হিসাব খুলতে হচ্ছে না, ভোগান্তিও নেই। আগে শুধু শিওর ক্যাশের মাধ্যমে উপবৃত্তির টাকা বিতরণ করা হতো, পরে ডাক বিভাগের নগদ এ সেবায় যুক্ত হয়।

এখন আবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা নির্দিষ্ট একটি এমএফএস প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেওয়ার সুপারিশ করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। সম্প্রতি এক চিঠিতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি নগদের মাধ্যমে বিতরণ করার সুপারিশ করা হয়েছে। সে জন্য পরিবর্তন করতে হবে প্রাথমিক শিক্ষা উপবৃত্তি কার্যক্রম বাস্তবায়ন নির্দেশিকা ২০২১ ও প্রাথমিক শিক্ষা উপবৃত্তি কার্যক্রম বাস্তবায়ন ম্যানুয়াল ২০২১। এটি কার্যকর হলে এত দিন যাঁরা বিকাশ, রকেট, উপায়সহ বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত এমএফএসের মাধ্যমে উপবৃত্তির টাকা গ্রহণ করতেন, তাঁদের নতুন করে নগদে হিসাব খুলতে হবে।

গত বছর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রাথমিক শিক্ষা উপবৃত্তি কার্যক্রম বাস্তবায়ন নির্দেশিকায় বিধান করা হয়, পছন্দের যেকোনো এমএফএসের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা বিতরণ করা যাবে। মূলত শিওর ক্যাশ বন্ধের পর যেকোনো এমএফএস প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে উপবৃত্তির টাকা গ্রহণের সুযোগ দেয় সরকার।

সম্প্রতি প্রাথমিক ও গণশিক্ষাসচিবকে লেখা এক চিঠিতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর শুধু নগদের মাধ্যমে উপবৃত্তির টাকা বিতরণের নির্দেশ দিতে অনুরোধ করে। ওই চিঠিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর বরাত দিয়ে বলা হয়, ‘উপবৃত্তির টাকা বিতরণের জন্য ১৩ ডিসেম্বর ২০২০-এর চুক্তি অনুযায়ী নগদের সঙ্গে পুনরায় চুক্তি করার জন্য অনুমোদন করা হলো। এ জন্য সংশ্লিষ্ট নির্দেশিকা সংশোধন করা যেতে পারে।’

চিঠিতে প্রাথমিক শিক্ষা উপবৃত্তি কার্যক্রম বাস্তবায়ন নির্দেশিকা ২০২১ ও প্রাথমিক শিক্ষা উপবৃত্তি কার্যক্রম বাস্তবায়ন ম্যানুয়াল ২০২১ সংশোধনেরও অনুমোদন চাওয়া হয়।একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, গ্রামের অভিভাবকদের বেশির ভাগ অশিক্ষিত। স্কুলগুলোই তাঁদের এমএফএস হিসাব খুলে দিতে সহযোগিতা করেছে। এভাবে বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে হয়রানি ও ভোগান্তি বাড়ছে।

জানা গেছে, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন সময় জারি করা সরকার থেকে ব্যক্তি (জিটুপি) পেমেন্ট পদ্ধতি অনুসরণ করেই প্রাথমিক শিক্ষা উপবৃত্তির অর্থ বিতরণ করা হয়। এখন অর্থ বিভাগের জিটুপি পেমেন্ট পদ্ধতির সঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সমন্বিত ডিজিটাল পদ্ধতির সমন্বয় করে উপবৃত্তি বিতরণ করা হচ্ছে। এর আগে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে শুধু শিওর ক্যাশের মাধ্যমে উপবৃত্তির টাকা গ্রহণের বাধ্যবাধকতা ছিল। পরে ডাক বিভাগের নগদ এ সেবায় যুক্ত হয়। এ ক্ষেত্রে অভিভাবকেরা নিজেদের হাতে থাকা অথবা পছন্দের মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে উপবৃত্তির টাকা গ্রহণ করতে পারছিলেন না। তাঁদের নতুন করে হিসাব খুলতে হতো। ফলে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা পাওয়া নিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আবার শিওর ক্যাশ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পা ভোগান্তিতে পড়েন অনেক অভিভাবক। এ জন্য কোন সেবার মাধ্যমে অভিভাবকেরা উপবৃত্তির টাকা গ্রহণ করবেন, তা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। তবে আবারও সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে তোড়জোড় শুরু হয়েছে।

এখন প্রাক্‌-প্রাথমিকের প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে মাসিক ৭৫ টাকা উপবৃত্তি দিচ্ছে সরকার। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া প্রত্যেক শিক্ষার্থী মাসিক ১৫০ টাকা এবং এক পরিবারে ২ জন শিক্ষার্থী থাকলে ২ জন মিলে পায় ৩০০ টাকা। এ ছাড়া কোনো পরিবারে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণিতে পড়া একজন শিক্ষার্থী থাকলে উপবৃত্তি দেওয়া হয় মাসে ২০০ টাকা। আর দুজন শিক্ষার্থী থাকলে উপবৃত্তি মিলে মাসে ৪০০ টাকা।

শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার কমাতে এবং মেয়েশিক্ষার্থীদের ক্লাসে ধরে রাখার জন্য ১৯৯৯ সালে উপবৃত্তি চালু করে সরকার। এখন ১ কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দিচ্ছে সরকার।

বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো হলো বিকাশ, রকেট, এমক্যাশ, উপায়, ট্যাপ, মাই ক্যাশ, টেলিক্যাশ, ওকে ওয়ালেট ও ইসলামিক ওয়ালেট। এর বাইরে ডাক বিভাগের নগদ সেবা দিচ্ছে।