রোজার পণ্য আমদানিতে চার ব্যাংককে নির্দেশনা

বাংলাদেশ ব্যাংক লোগো

ডলার-সংকটে গত তিন মাসে নিত্যপণ্যের আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলা কমে গেছে। এমন প্রেক্ষাপটে আসন্ন রমজানে বাজারে যেন নিত্যপণ্যের সংকট না হয়, সে জন্য গভর্নরকে চিঠি দিয়ে নিত্যপণ্য আমদানির ঋণপত্র খুলতে ডলারের কোটা সংরক্ষণের অনুরোধ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সেই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে রমজানে নিত্যপণ্য আমদানির ঋণপত্র খুলতে ব্যবসায়ীদের সহায়তা দিতে রাষ্ট্রমালিকানাধীন চার ব্যাংককে নির্দেশনা দিয়েছেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।

রাজধানীর মতিঝিলে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বাংলাদেশ ব্যাংকে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আফজাল করিম, জনতার এমডি আবদুছ ছালাম আজাদ, অগ্রণীর এমডি মুরশেদুল কবীর ও রূপালী ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর সঙ্গে সভা করে এই নির্দেশনা দেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর।

‘প্রবাসী আয় ও পণ্য রপ্তানি বাড়ছে। ফলে ডলার পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। সরকারি ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তা পাচ্ছি।
আবদুছ ছালাম আজাদ, জনতা ব্যাংকের এমডি

জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র সরওয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্য আমদানির ঋণপত্র খুলতে যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সে জন্য গভর্নর চার ব্যাংকের এমডিকে নির্দেশনা দিয়েছেন।

জানা যায়, গভর্নরের সঙ্গে গতকাল সভায় নিত্যপণ্য আমদানির ঋণপত্র খুলতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ডলারের সহায়তা চান রাষ্ট্রমালিকানাধীন চার ব্যাংকের এমডিরা। তখন সহযোগিতার আশ্বাস দেন গভর্নর।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গত তিন মাসে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) অপরিশোধিত চিনি, অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেল, সয়াবিন বীজ, ছোলা ও খেজুরের আমদানি ঋণপত্র খোলা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে অপরিশোধিত পাম তেল ও সয়াবিন বীজ আমদানির ঋণপত্র। অথচ নিত্যপণ্যের আমদানির ঋণপত্র খোলা স্বাভাবিক রাখতে গত কয়েক মাসে দফায় দফায় পরিপত্র জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

তা সত্ত্বেও নিত্যপণ্য আমদানির ঋণপত্র খোলা কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিদায়ী ২০২২ সালের শেষ প্রান্তিক অক্টোবর-ডিসেম্বরে অপরিশোধিত চিনি আমদানির ঋণপত্র খোলা আগের বছরের চেয়ে ২৮ শতাংশ কমেছে। অন্য পণ্যগুলোর মধ্যে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলে ৪৭ শতাংশ, সয়াবিন বীজে ৮৩ শতাংশ, অপরিশোধিত পাম তেলে ৯৯ শতাংশ, ছোলায় ৪৭ শতাংশ ও খেজুরে ৩০ শতাংশ কমেছে।

আমদানি ঋণপত্র খোলা কমে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে দেশে পণ্য আমদানি কম হবে। এতে বাজারে পণ্যের সংকট দেখা দিতে পারে। ইতিমধ্যে বাজারে কিছু কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে সেই প্রভাব দেখা যাচ্ছে। কয়েক মাস ধরে বাজারে চিনির সংকট চলছে।

আমদানিকারকেরা জানান, ডলার-সংকটের কারণে তাঁরা সময়মতো আমদানি ঋণপত্র খুলতে পারছেন না। এদিকে ঋণপত্র খোলার পরিমাণ কমার পাশাপাশি অপরিশোধিত চিনি ও পাম তেল এবং ছোলা ও খেজুরের ঋণপত্র নিষ্পত্তির হারও কমেছে।

গভর্নরের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে জনতা ব্যাংকের এমডি আবদুছ ছালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রবাসী আয় ও পণ্য রপ্তানি বাড়ছে। ফলে ডলার পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। সরকারি ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তা পাচ্ছি। বেসরকারি ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রেও বিশেষ একটা ব্যবস্থা করা যায় কি না, সে বিষয়ে গভর্নর মহোদয়কে অনুরোধ করেছি আমরা। আশা করছি, নিত্যপণ্য আমদানিতে কোনো সমস্যা হবে না। সরকারি ব্যাংক হিসেবে আমরা জনগণের পাশে থাকব।’