কিস্তির অঙ্ক না বাড়িয়ে যেভাবে আদায় করতে হবে বাড়তি সুদের টাকা

বাংলাদেশ ব্যাংকফাইল ছবি

নতুন সুদহারের কারণে বেড়ে যাচ্ছে ঋণগ্রহীতাদের কিস্তির পরিমাণও। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, সুদহার বাড়লেও গ্রাহকের কিস্তির পরিমাণ বাড়ানো যাবে না। তবে বাড়তি সুদ আদায়ে কিস্তির পরিমাণ বাড়াতে পারবে ব্যাংকগুলো। গত সোমবার এ–সংক্রান্ত এক নির্দেশনা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে ব্যাংকগুলোকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নতুন সুদহারের কারণে ব্যক্তি পর্যায়ের গৃহঋণ ও শিল্পের জন্য নেওয়া মেয়াদি ঋণের কিস্তির পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু সেই তুলনায় ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আয় বাড়ছে না। এতে করে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে গিয়ে গ্রাহকদের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হচ্ছে। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিস্তির টাকার পরিমাণ না বাড়িয়ে কিস্তির সংখ্যা বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, গত বছরের ১ জুলাইয়ের আগে ব্যাংকগুলো যে সুদহারে কিস্তির পরিমাণ নির্ধারণ করেছিল, সেটি অপরিবর্তিত রাখতে হবে। নতুন সুদহারের কারণে কোনো গ্রাহকের কিস্তির পরিমাণ বেড়ে গেলে অতিরিক্ত অর্থ স্থানান্তর করতে হবে সুদবিহীন আলাদা ব্লকড হিসাবে। শিল্প ও গৃহঋণের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নতুন সুদহারের কারণে অতিরিক্ত যে অর্থ আলাদা হিসাবে যোগ হবে, তা আগের সমপরিমাণ কিস্তিতে পরিশোধের ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য বাড়তি যে সময় লাগবে, সেই সময়ের মধ্যে বাড়তি সুদ পরিশোধ করা যাবে কিস্তিতে। এ ক্ষেত্রে চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ঋণস্থিতি বিবেচনায় নিতে হবে।

উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, কোনো ব্যক্তির গৃহঋণের ক্ষেত্রে গত বছরের ১ জুলাইয়ের আগে সুদাসলে মাসিক কিস্তির পরিমাণ ছিল ১০ হাজার টাকা। ওই সময় ১০ শতাংশ সুদহারে এ কিস্তি আদায় করা হতো। এখন সুদহার বেড়ে হয়েছে ১৫ শতাংশ। তাতে ওই ঋণগ্রহীতার কিস্তির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৫০০ টাকা। নতুন সুদহারের কারণে কিস্তি বাবদ বাড়তি যে ৫০০ টাকা বেড়েছে, সেটি প্রতি মাসের কিস্তির মাধ্যমে আদায় করা যাবে না। বাড়তি এই ৫০০ টাকা আলাদা একটি ব্লকড হিসাবে স্থানান্তর করে গ্রাহকের ঋণের মেয়াদ পূর্তির পর তা আদায়ের উদ্যোগ নিতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ব্যাংকগুলো তাদের নিয়মিত গ্রাহকদেরই এই সুবিধা দিতে পারবে। প্রচলিত ব্যাংকিং ধারার পাশাপাশি ইসলামি শরিয়াহ ব্যাংকের গ্রাহকেরাও একই ধরনের সুবিধা পাবেন। কিন্তু আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে অশ্রেণিকৃত ঋণের ক্ষেত্রে এই সুবিধা দেওয়া যাবে না। আবার রূপান্তরিত মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রেও এ সুবিধা প্রযোজ্য হবে না। পাশাপাশি ঋণখেলাপি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান বা কোনো কোম্পানিকে এই সুবিধা দেওয়া হবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক বা সরকার গঠিত প্রণোদনা বা বিশেষ তহবিলের আওতায় প্রদত্ত ঋণের ক্ষেত্রেও এই সুবিধা কার্যকর হবে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত বছরের জুলাই থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন পদ্ধতিতে ঋণের সুদহার নির্ধারণ করছে। এর ফলে ঋণের সুদ এখন প্রতি মাসেই বাড়ছে। বর্তমানে সিক্স মান্থস মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল বা স্মার্ট পদ্ধতিতে ঋণের সুদের ভিত্তি হার নির্ধারিত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া এই ভিত্তি সুদহারের সঙ্গে বাড়তি সুদ যোগ করতে পারে ব্যাংকগুলো। ভিত্তি হার ও বাড়তি সুদ—এই দুইয়ে মিলে ঋণের চূড়ান্ত সুদহার নির্ধারণ করে ব্যাংকগুলো। প্রতি মাসের শুরুতে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণের সুদের ভিত্তি হার নির্ধারণ করে দেয়। নতুন এ পদ্ধতিতে বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাংকের ঋণের সুদহার বেড়ে সাড়ে ১৩ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এতে বাড়ছে গ্রাহকের কিস্তির অঙ্কও।