নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতিতে ৮ ব্যাংক, ৩৫টি মুখে মুখে

মতিঝিলের শাপলা চত্বর
ফাইল ছবি

ব্যাংকগুলোকে ঋণের মান অনুযায়ী নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হয়। মুনাফা থেকে রাখতে হয় এই নিরাপত্তা সঞ্চিতি। দেশি-বিদেশি ৩৫টি ব্যাংক কোনোমতে এটি করতে পেরেছে। অর্থাৎ তাদের নিরাপত্তা সঞ্চিতিতে কোনো ঘাটতিও নেই, উদ্বৃত্তও নেই।

সরকারি-বেসরকারি আট ব্যাংক নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে। বাকি ব্যাংকগুলোয় নিরাপত্তা সঞ্চিতি উদ্বৃত্ত রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণসংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী, ব্যাংকের স্বাস্থ্য তথা আর্থিক সামর্থ্য ঠিক রাখতে ঋণের মান বিবেচনায় নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হয়। ব্যাংকগুলো তাদের মুনাফা থেকে চাহিদামতো সঞ্চিতি সংরক্ষণ করে থাকে। এর মাধ্যমে মূলত আমানতকারীদের টাকার সুরক্ষা দেওয়া হয়, যাতে মুনাফার টাকা পুরোটাই মালিকেরা নিতে না পারেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাষ্ট্রমালিকানাধীন কয়েকটি ব্যাংক বছরের পর বছর প্রয়োজন অনুযায়ী নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে পারছে না। বেসরকারি খাতের কিছু ব্যাংকও কয়েক বছর ধরে একই সমস্যায় পড়েছে। গত মার্চে ব্যাংক খাতে মোট সঞ্চিতি সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল ৯২ হাজার ৬১৯ কোটি টাকা। এর বিপরীতে সংরক্ষণ করা হয়েছে ৭৬ হাজার ৩২০ কোটি টাকা। তাতে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা।

দেখা গেছে, গত মার্চে রাষ্ট্র খাতের অগ্রণী, বেসিক, রূপালী ও কৃষি ব্যাংক সঞ্চিতি ঘাটতিতে ছিল। আর বেসরকারি খাতে ঘাটতিতে ছিল বাংলাদেশ কমার্স, ঢাকা ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক। মূলত খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাংকগুলোর সঞ্চিতি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা বেড়ে গেছে। কিন্তু তারা মুনাফা ধরে রাখার জন্য চাহিদা অনুযায়ী সঞ্চিতি রাখে না।

এদিকে দেশি-বিদেশি ৩৫ ব্যাংক কোনোমতে সঞ্চিতি সংরক্ষণ করেছে। এর মধ্যে অন্যতম বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকটি সব সময় ২ হাজার কোটি টাকার বেশি নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখত। গত ডিসেম্বরে এই ব্যাংকের নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণের চাহিদা ছিল ২ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা।

তখন ব্যাংকটি ৫ হাজার ৭১৪ কোটি টাকা সংরক্ষণ করেছিল। তাতে উদ্বৃত্ত ছিল ২ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা। কিন্তু গত মার্চে ব্যাংকটির নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণের চাহিদা বেড়ে হয় ৫ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা। তখন ব্যাংকটি সমপরিমাণ সঞ্চিতি সংরক্ষণ করে। ফলে এবার কোনো উদ্বৃত্ত থাকেনি, ঘাটতিও নেই। অথচ গত বছরের মার্চে উদ্বৃত্ত ছিল ২ হাজার ৬৫১ কোটি টাকা।

মূলত মুনাফা বাড়াতে গিয়ে ইসলামী ব্যাংক উদ্বৃত্ত সঞ্চিতি রাখেনি। ২০২২ সালে ইসলামী ব্যাংকের কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ৬১৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ১৩৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা বা ২৮ দশমিক ২৮ শতাংশ বেশি।

আরও পড়ুন

জানতে চাইলে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাহিদা অনুযায়ী নিরাপত্তা সঞ্চিতি রেখেছি। বেশি রাখার প্রয়োজন নেই।’

ব্যাংকটির দুজন কর্মকর্তা জানান, অনিয়মের ঘটনা আলোচনায় আসার পর তারল্যসংকটে পড়ে সব হিসাব উল্টোপাল্টা হয়ে গেছে। চাহিদামতো ঋণের মান নির্ধারণ করা হয়নি, সঞ্চিতিও রাখা যায়নি। এর ফলে দীর্ঘ মেয়াদে ব্যাংকটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন আর্থিক প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিদেশিরা।