শিশু দিবাযত্নকেন্দ্রের সংখ্যা ও যাতায়াত সুবিধা বাড়াতে হবে

মাহিয়া জুনেদ

ব্যাংকিংয়ে বিভিন্ন বিভাগ আছে, যেখানে সব রকম কাজ এখনো নারীবান্ধব নয়। তবে অনেক কাজ বা কর্মক্ষেত্র নারীবান্ধব। যেমন যেসব কাজ অফিসে বসে করা যায়, সেসব ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে নারীরা এগিয়ে আসছেন এবং ভালো করছেন। কিন্তু যেসব কাজ করতে শহরের বাইরে যাতায়াত করতে হয়, সেগুলোতে নারীরা এখনো আগ্রহী হতে পারছেন না। এ জন্য আনুষঙ্গিক বিভিন্ন কারণ তো আছেই, পারিবারিক সীমাবদ্ধতাও এ জন্য দায়ী। সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে নারীরা অনেকটা এগিয়েছেন বলা যায়। দেশের জনসংখ্যার ৫০ শতাংশ নারী। সেই তুলনায় নারী গ্রাহকের সংখ্যা খুবই কম। বিশেষ করে ব্যবসায়ী বা ঋণসংক্রান্ত সেবার ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ এখনো উল্লেখ করার মতো বলা যাবে না।

ব্যাংকিংয়ে নারীদের জ্ঞান বাড়ানোর একমাত্র উপায় হচ্ছে পড়াশোনা করা ও প্রতিনিয়ত নিজেকে সচেতন রাখা। সেটা হতে পারে সংবাদপত্র পড়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন নীতিমালা অনুসরণ করা। কোম্পানি এবং এসব বিষয় নিয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণ করা। আলোচনায় অনেক রকম দৃষ্টিভঙ্গি জানা যায়, যা নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে সাহায্য করে থাকে। এখন তো জানার বিষয়গুলো অনেক সহজ। ইউটিউবে ব্যাংকিংয়ের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভিডিও আছে। অবসর সময়ে সেসব দেখে জ্ঞান বাড়ানো যেতে পারে। তবে ভিডিও দেখতে হবে সঠিক তথ্য প্রদান করে এমন জায়গা থেকে। অনেক ক্ষেত্রে চটকদার তথ্য দিয়েও অনেকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে থাকে।

ব্যাংকে নারীদের নেতৃত্ব এখনো কম। এখন দেশের মাত্র একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নারী এবং একটি ব্যাংকে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক নারী। এটি খুবই দুঃখজনক। পরিসংখ্যান ঘাঁটলে দেখবেন, সমগ্র ব্যাংকিং জনগোষ্ঠীর মাত্র ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ নারী। আবার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে এই সংখ্যা মাত্র ৯ শতাংশ। আশি বা নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে খুব কমসংখ্যক নারী ব্যাংকের চাকরিতে নিযুক্ত হতেন। যেহেতু এই পেশায় নারীদের প্রবেশ অনেক দেরিতে হয়েছে, সে কারণে আমরা দেখতে পাই, নেতৃত্ব দেওয়ার মতো জায়গায় এখনো নারীর উপস্থিতি অনেক কম।

তবে আশার বিষয় হলো, পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে। ধীরে ধীরে নারীরা এগিয়ে আসছেন এবং এই পেশা থেকে নেতৃত্বস্থানীয় জায়গায় পৌঁছে যাচ্ছেন। আমাদের সিটি ব্যাংকে বেশ কিছু বিভাগীয় প্রধান এখন নারী। যেমন মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা, আইন, নারী ব্যাংকিং, প্রায়োরিটি ব্যাংকিং এবং আমি নিজেও আছি। এসব নারী তাঁদের যোগ্যতা ও দক্ষতা অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। বেতনের বাইরে সুবিধার জায়গা যদি দেখি, তাহলে আমাদের দেখতে হবে, কী কী অসুবিধার জন্য নারীরা ব্যাংকে কাজ করতে আসছেন না বা এলেও একপর্যায়ে ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। বিশেষ করে মধ্যম স্তরে পৌঁছানোর পর চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন। এর মধ্যে বড় সমস্যা হলো, শিশু দিবাযত্নকেন্দ্র বা ডে-কেয়ারের অভাব। আমাদের দেশে এখনো নির্ভরযোগ্য ডে-কেয়ারের খুবই অভাব। ছেলেমেয়েদের দেখাশোনা করার জন্য নির্ভরযোগ্য ডে-কেয়ার সেন্টার করে দিলে অনেকেই নিশ্চিন্তে কাজে আসতে পারবেন। এটা শুধু ব্যাংক বা নিজেরা করলে হবে না। অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগও থাকতে হবে। এ ছাড়া যাতায়াতের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। বিভিন্ন প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে হবে। এতে তাঁদের আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠবে। করপোরেট কালচার এবং লিডারশিপ ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা থাকাও জরুরি। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যুক্ত হতে পারে, সেটি হলো মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম। পাঁচ-ছয়জন নারীর জন্য একজন মেন্টর থাকবেন, যাঁর গাইডে অন্যরা ক্যারিয়ার-সংক্রান্ত ডিসিশনগুলো নিতে পারবেন। তবে এসব বিষয় কাজ করবে মানুষের মনমানসিকতার পরিবর্তন ঘটলে। নারীদের এগিয়ে আসার জন্য এটা অনেক বড় একটা শর্ত।

বেসরকারি ব্যাংকগুলো নারীদের ব্যাংকিংয়ে নিয়ে আসতে কী ভূমিকা রাখছে, তার উদাহরণ হতে পারে সিটি ব্যাংক। আমরা কর্মী নিয়োগের সময় বিশেষ করে ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি নেওয়ার সময় অন্তত ৫০ শতাংশ পদে মেয়েদের নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করি। আমাদের এখানে নিয়মিত যৌন হয়রানি প্রতিরোধে প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ করা হয়ে থাকে। আমাদের দুটো ডে-কেয়ার সেন্টারের সঙ্গে চুক্তি আছে। সেখানে আমাদের নারী বা পুরুষ সহকর্মীরা তাঁদের বাচ্চা রেখে কাজে আসতে পারেন। আমরা ছয় মাস মাতৃত্বকালীন ছুটিও বাস্তবায়ন করছি।