প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেবা পৌঁছে গেছে

এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসেন।

প্রথম আলো:

ব্র্যাক ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা কেমন চলছে?

সেলিম আর এফ হোসেন: ব্র্যাক ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা ২০২৩ সালের অক্টোবরে ৫ বছর পূর্ণ করেছে। এই সময়ে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আওতায় আমানত দাঁড়িয়েছে দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি। এ পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আওতায় ৪ লাখ হিসাব খোলা হয়েছে। ব্র্যাক ব্যাংকের এজেন্ট আউটলেট এখন ১ হাজার ৯৪টি। ব্র্যাক ব্যাংকে আমরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সেবার অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করছি। সামগ্রিক অর্থনীতি বিবেচনায় এ অর্জনের বিষয়ে বলতে পারি, আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা ব্যাংক খাতের সেরা এবং গ্রাহকদের মধ্যেও আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

অন্যদের চেয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের এজেন্টরা কিছুটা আলাদা। এর কারণ কী?

সেলিম আর এফ হোসেন: এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সাফল্য নির্ভর করে ব্যাংক ও এজেন্টদের মেলবন্ধনের ওপর। এ জন্য ব্র্যাক ব্যাংক সব সময় জোর দিয়েছে সঠিক এজেন্ট নির্বাচনের দিকে। আমরা সব সময়ই এজেন্ট নির্বাচন এবং আউটলেট পরিচালনার ক্ষেত্রে তদারকির ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকি। গ্রাহকের আমানতের নিরাপত্তা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। এ জন্য এজেন্টদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ এবং ব্যবসায় সম্প্রসারণ ও ব্যাংকের নিয়মনীতি পরিপালনের ব্যাপারে আমরা তদারক করে থাকি। এ কারণে আমাদের এজেন্টদের গুণগত মানও তুলনামূলক বেশ ভালো। আমরা এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে রিটেইল, এসএমই ও করপোরেট গ্রাহকদেরও সেবা দিয়ে থাকি।

প্রথম আলো:

এজেন্টদের মাধ্যমে ব্র্যাক ব্যাংক ঋণ বিতরণে শীর্ষে। আমানতের চেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করছে আপনাদের এজেন্টরা। ব্যাংকিংয়ে এর সুফল কতটা মিলছে?

সেলিম আর এফ হোসেন: ব্র্যাক ব্যাংকের জন্মলগ্ন থেকেই মূল উদ্দেশ্য ছিল ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ বা এসএমই গ্রাহকদের উন্নত ব্যাংকিং সেবা দেওয়া। বিশেষ এই জনগোষ্ঠীর ঋণের প্রয়োজন হয় এবং তাদের ঋণ পরিশোধের প্রবণতাও অনেক ভালো। তাই এই জনগোষ্ঠীকে আকৃষ্ট করতে দেশজুড়ে আমাদের রয়েছে বিস্তৃত নেটওয়ার্ক। আমরা চেষ্টা করেছি প্রত্যন্ত অঞ্চলে যথাযথ ঋণ বিতরণের। তাতে আমরা পেয়েছি গ্রাহকের আস্থা। পাশাপাশি গ্রাহকের ব্যাংকিং অংশীদারও হয়েছি। যার প্রতিফলন আমরা দেখছি সারা দেশে ঋণ বৃদ্ধির পাশাপাশি আমানত বৃদ্ধিতেও। এটাই আমাদের ঋণ বিতরণের সুফল।

প্রথম আলো:

শাখার দেওয়া ঋণ এবং এজেন্টদের মাধ্যমে দেওয়া ঋণের পার্থক্যটা কী? এজেন্টদের মাধ্যমে দেওয়া ঋণ কেমন আদায় হচ্ছে?

সেলিম আর এফ হোসেন: ব্যাংকের জন্য এজেন্ট ব্যাংকিং একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যানেল বা মাধ্যম। এ মাধ্যমে বিতরণ করা ঋণের সঙ্গে উপশাখা বা শাখার বিতরণ করা ঋণের কোনো পার্থক্য নেই। বরং এজেন্ট আউটলেট সেই সব প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রাহকদের দোরগোড়ায় পৌঁছেছে, যেখানে ব্যাংকের কোনো শাখা-উপশাখা নেই। এ ছাড়া আমাদের এজেন্টদের বিতরণ করা ঋণের আদায় পরিস্থিতিও বেশ ভালো। এজেন্ট আউটলেটেই গ্রাহকেরা ঋণের কিস্তি জমা দিতে পারছেন। এমনকি ব্যাংকিং সময়ের বেশি সময় পর্যন্ত সেবা দিয়ে যাচ্ছে এজেন্টরা। এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ঋণ বিতরণ ও কিস্তি আদায়ে।

প্রথম আলো:

ডিজিটাল সেবার দ্রুত বিকাশ হচ্ছে। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি উপশাখায় ঝুঁকছে অনেক ব্যাংক। এ অবস্থায় এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার ভবিষ্যৎ কী দেখেন?

সেলিম আর এফ হোসেন: এজেন্ট ব্যাংকিং শাখা-উপশাখার মতোই ব্যাংকিং সেবা প্রদানের একটি মাধ্যম। এজেন্ট ব্যাংকিং মূলত সেই গ্রাহকদের সেবায় নিয়োজিত, যারা শাখা বা উপশাখার সেবার আওতাধীন ছিল না। আমাদের ৮০ শতাংশের বেশি এজেন্ট আউটলেট গ্রামে। এসব এলাকায় আগে ব্যাংকিং সেবা ছিল না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, ব্যাংকের কিছু সেবা আছে, যা এজেন্টরা দিতে পারে না। যেমন চেকের মাধ্যমে লেনদেন, বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন, ঋণপত্র বা এলসি খোলার সেবা ইত্যাদি। যেখানে এসব সেবার প্রয়োজনীয়তা আছে, সেখানে আমরা শাখা-উপশাখা খুলছি। এ ছাড়া ভবিষ্যতে ডিজিটাল ব্যাংক আসবে। যাদের কোনো শাখা, উপশাখা, কিয়স্ক, এজেন্ট কিছুই থাকবে না। এই গ্রাহকদের জন্যও এজেন্ট চ্যানেল হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ সেবাকেন্দ্র।

  • সেলিম আর এফ হোসেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ব্র্যাক ব্যাংক