শুধু সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য দেয় সুইজারল্যান্ড

অর্থ পাচার এখন আলোচিত বিষয়। পাচার হওয়া অর্থের তথ্যপ্রাপ্তি ও অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সাবেক প্রধান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান।

আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের অর্থ বাড়ছে। আমরা জানতেই পারছি না, কারা অর্থ জমা করছেন। টাকা ফেরত আনা তো অনেক পরের বিষয়।

আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান: বিএফআইইউ কিন্তু সুইজারল্যান্ডের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (এফআইইউ) থেকে তথ্য আনছে। তবে তা অতি গোপনীয়। এ তথ্য প্রকাশের কোনো সুযোগ নেই। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দিতে হলেও তাদের অনুমতি নিতে হয়। এ তথ্য আদালতেও উপস্থাপন করা যায় না। এগমন্ট গ্রুপের সদস্য হিসেবে বিএফআইইউ দেশটির এফআইইউর কাছ থেকে তথ্য পাচ্ছে। এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া বা আদালতে যাওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু তথ্যের উৎস প্রকাশ করা যায় না। আবার ওই তথ্যের ভিত্তিতে দেশের অন্য সংস্থার কাছে আরও তথ্য চাওয়ার সুযোগ আছে। দেশটিতে জমা হওয়া অর্থ নিয়ে সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে অনেক কাজ হয়েছে।

তবে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্টের (এমএলএ) মাধ্যমে তথ্য আনলে সেই তথ্য প্রকাশ করা যায়। এ ছাড়া আরও পথ আছে। ইউনাইটেড নেশন কনভেনশন অ্যাগেইনস্ট করাপশনের আওতায় তথ্য আনা যায়। তবে সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে এই পর্যায়ে কোনো কাজ হয়নি। কারণ, ৬৭ জনের বিষয়ে তথ্য চেয়ে মাত্র ১ জনের তথ্য পাওয়া গেছে। তাই এ নিয়ে বেশি কাজ হয়নি।

প্রশ্ন :

তাহলে কি কারা সুইস ব্যাংকে টাকা রাখছেন, তা জানার কোনো সুযোগ নেই?

রাজী হাসান: অনেক দেশেরই কিছু আইনি সীমাবদ্ধতা আছে। সুইজারল্যান্ড যদি সেই দেশে সন্দেহজনক কারও লেনদেনের তথ্য পায়, তবেই তা সংশ্লিষ্ট দেশকে সরবরাহ করে। আরও অনেক উন্নত দেশও একই নিয়ম মেনে চলে। এসব দেশ থেকে কারও তথ্য পেতে হলে প্রকৃত পরিচয়, পাসপোর্ট নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ জানাতে হয়। সেই তালিকা অনুযায়ী সন্দেহজনক কারও কোনো লেনদেনের তথ্য যদি তাদের কাছে থাকে, তবেই তারা তা জানায়। এর বেশি তথ্য তারা দিতে পারে না। তবে অন্য উপায় আছে। অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা ওইসিডির উদ্যোগে গঠিত অটোমেটিক এক্সচেঞ্জ অব ইনফরমেশনের সদস্য হলে সহজেই তথ্য পাওয়া যাবে। বিশ্বে এ ফোরামের সদস্যদেশ আছে ১২০টি। তবে এ কথা সত্য, পাচার করা অর্থের চেয়ে কর ফাঁকি দেওয়া অর্থ ফেরত আনা কিছুটা সহজ।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: প্রতিবেশী ভারতও অর্থ পাচারকারীদের তথ্য এনেছে। বাংলাদেশ কেন পারছে না?

রাজীহাসান: এ নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বিএফআইইউ কাজ করেছিল।কর ফাঁকি রোধে অটোমেটিক এক্সচেঞ্জ অব ইনফরমেশনের সদস্য হলে কাজ কিছুটা এগোবে।আবার এমএলএ চুক্তি করলেও তথ্য পাওয়া যাবে।এ জন্য সব সংস্থাকেই সক্রিয় হতে হবে।পাশাপাশি যেসব দেশ সফল হয়েছে, তাদের অভিজ্ঞতাও কাজে লাগাতে হবে।