এক বছরে প্রবাসী আয় কমল ৭৯ কোটি ডলার

সদ্য বিদায়ী ২০২২ সালে এর আগের ২০২১ সালের তুলনায় দেশে রেমিট্যান্স তথা প্রবাসী আয় কমেছে ৭৯ কোটি ডলার। অবশ্য বছরজুড়ে প্রবাসী আয় প্রত্যাবাসন এক মাসে একটু বেড়েছে তো আরেক মাসে খানিক কমেছে। বছর শেষে তা ২ হাজার কোটি ডলার অতিক্রম করলেও ২০২১ সালের আয়কে টপকাতে পারেনি। তবে গত বছরের শেষ দুই মাস নভেম্বর ও ডিসেম্বরে প্রবাসী আয় বেড়েছে।

গতকাল রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে ২০২২ সাল সব মিলিয়ে প্রবাসী আয় এসেছে ২ হাজার ১২৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এর আগের বছর ২০২১ সালে প্রবাসী আয় এসেছিল ২ হাজার ২০৭ কোটি ২৫ লাখ ডলার। অর্থাৎ বিদায়ী বছরে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ৭৮ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। এই হিসাব বৈধ চ্যানেল খ্যাত ব্যাংক খাতের মাধ্যমে আসা প্রবাসী আয়ের।

গত নভেম্বরের তুলনায় ডিসেম্বর মাসে প্রবাসী আয় সাড়ে ১০ কোটি ডলার বেড়েছে। সর্বশেষ ডিসেম্বরে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন মোট ১৬৯ কোটি ৯৭ লাখ ডলার, যা নভেম্বর ছিল ১৫৯ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। এর মানে প্রবাসী আয় যেভাবে কমতে শুরু করেছিল, সেই ধারা থেকে ঘুরতে শুরু করেছে। তবে জুলাই-আগস্টে যেভাবে প্রবাসী আয় আসছিল, সেই ধারায় ফেরেনি। জুলাই ও আগস্ট মাসে প্রবাসীরা বৈধপথে ২০০ কোটি ডলারের বেশি অর্থ পাঠিয়েছিলেন। এর মধ্যে জুলাইয়ে তাঁরা ২০৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলার ও আগস্টে ২০৩ কোটি ৭৮ লাখ ডলার পাঠান।

আবার সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে প্রবাসী আয় ১৬০ কোটি ডলারের নিচে ছিল। ডিসেম্বরে এসে সেটা ১৬০ কোটি ডলার অতিক্রম করে। কিন্তু জুলাই-আগস্টে যেভাবে প্রবাসী আয় এসেছিল, সেই গতি ফেরেনি।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও ব্যাংকগুলোর নানা উদ্যোগের ফলে বৈধ পথে প্রবাসী আয় বাড়তে শুরু করেছে উল্লেখ করে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশে হুন্ডির বাজার বেশ শক্তিশালী। সবাই মিলে প্রবাসীদের হুন্ডিতে আয় পাঠানের প্রবণতা থেকে বের করে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে। তাতে আশা করা যাচ্ছে, ভবিষ্যতে ব্যাংকিং চ্যানেলে আরও বেশি প্রবাসী আয় আসবে। বছরের শেষটা অন্তত সেই ইঙ্গিত দিয়েছে।’

অন্যান্য সময়ের মতো এবারও এককভাবে বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে সবচেয়ে বেশি। ডিসেম্বরে ব্যাংকটির মাধ্যমে এসেছে ৫০ কোটি ১০ লাখ ডলার। এর পেছনেই রয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকটির মাধ্যমে ৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।

এ ছাড়া আল-আরাফাহ্‌ ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে ৮ কোটি ৮৮ লাখ ডলার, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে ৮ কোটি ৬২ লাখ ডলার ও সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ৭ কোটি ৭৭ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে।

এদিকে দেশের ব্যাংকগুলো প্রবাসী আয় আনতে এখন প্রতি ডলারে সর্বোচ্চ ১০৭ টাকা দিচ্ছে। আর রপ্তানি আয় নগদায়নে ডলারের দর ধরা হচ্ছে ১০১ টাকা। অন্যদিকে আমদানিতে ডলারের দর এই দুই দরের মাঝামাঝি সমন্বয় করা হচ্ছে। ব্যাংকগুলো একে অপরের কাছে ডলার বিক্রি করছে ১০৭ টাকা ৫০ পয়সায়।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নতুন বছরে পরিবারের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খরচসহ নানা ধরনের বাড়তি খরচ যুক্ত হয়। এ কারণে প্রবাসীরা বাড়িতে টাকা পাঠান বেশি। আবার অবৈধ পথ ও ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারের দামে পার্থক্য কমে আসায় বৈধ পথে প্রবাসী আয় আসা বেড়েছে।

এদিকে মার্কিন ডলারের বিপরীতে দেশীয় টাকার মান ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ ছিল গত বছর। আর ডলার-সংকটের কারণে ১৬ মাস ধরে কমছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। এ কারণে দেশের রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা এখন বেশ চাপে রয়েছে। আমদানি দায় মেটাতে ডলার বিক্রির কারণে রিজার্ভ এখন ৩৪ বিলিয়নের কোঠায় এসে দাঁড়িয়েছে।