৫ সূচকে চিহ্নিত হবে দুর্বল ব্যাংক, ভাগ হবে ৪ ভাগে

ব্যাংক খাত–সংশ্লিষ্টদের মধ্যে বড় আলোচনা, কোনো ব্যাংক একীভূত হলে সেটির আমানতকারী ও বিনিয়োগকারীদের কী হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা ও অংশীজনদের নানা তৎপরতার কারণে দুর্বল ব্যাংক একীভূত বা অধিগ্রহণের বিষয় নতুন করে সামনে এসেছে। এখন খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে বড় আলোচনা, কোনো ব্যাংক একীভূত হলে সেটি ব্যাংকের তালিকা থেকে হারিয়ে যেতে পারে। কিন্তু তখন এ ধরনের ব্যাংকের আমানতকারী ও বিনিয়োগকারীদের অর্থের কী হবে। 

অথচ ব্যাংক খাতে নানা অব্যবস্থাপনার মধ্যেও গত এক যুগে এক ডজনের বেশি নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে প্রণোদনা দিয়ে টিকিয়ে রাখা হয় দুর্বল ব্যাংকগুলোকে। ব্যাংক খাতের ওপর জনগণের আস্থা ফেরানো ও আর্থিক স্থিতিশীলতা বাড়ানোর লক্ষ্যে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে চার ভাগে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যেসব ব্যাংকের প্রকৃত খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের বেশি এবং ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণের অনুপাত (সিআরএআর) সাড়ে ১২ শতাংশের কম, সেগুলোকেই চার ভাগে করা হবে। 

এ ধরনের ব্যাংকগুলোর পরিচালন খরচ বৃদ্ধির সীমা, লভ্যাংশ বিতরণ, নতুন শাখা খোলা, আমানত ও ঋণ বিতরণ বন্ধ এবং একীভূত করার সিদ্ধান্ত দিতে পারবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ জন্য গত ডিসেম্বরে ‘প্রম্পট কারেক্টিভ অ্যাকশন’ (পিসিএ) শীর্ষক একটি নীতিমালা জারি করেছে। ২০২৪ সালের আর্থিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ২০২৫ সালের মার্চে এটি কার্যকর হবে।

আরও পড়ুন

যেভাবে চার ভাগ হবে

যদি কোনো ব্যাংকের সিআরএআর টানা ৬ মাস সাড়ে ১২ শতাংশ ও প্রকৃত খেলাপি ঋণ ৫ থেকে ৮ শতাংশের মধ্যে থাকে, সেটি ক্যাটাগরি-১–এ পড়বে। এ শ্রেণির ব্যাংক তার শেয়ারধারীদের কোনো নগদ লভ্যাংশ দিতে পারবে না, তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে বোনাস শেয়ার বণ্টন করা যাবে। এসব ব্যাংকের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ ১ বছরে ১০ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। পরিচালন খরচ আগের বছরের চেয়ে সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ বাড়ানো যাবে। 

টানা ১২ মাস যেসব ব্যাংকের সিআরএআর ৮ থেকে ১০ শতাংশ এবং খেলাপি ঋণ ৮ থেকে ১১ শতাংশের মধ্যে থাকে, সেগুলোর ক্যাটাগরি-২। এই ব্যাংকগুলোও কোনো লভ্যাংশ দিতে পারবে না। এসব ব্যাংকের পরিচালন ব্যয় আগের বছরের চেয়ে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ বাড়ানো যাবে। 

আরও পড়ুন

টানা ১৮ মাস যেসব ব্যাংকের সিআরএআর ৫ থেকে ৮ শতাংশ এবং খেলাপি ঋণ ১১ থেকে ১৪ শতাংশ, সেগুলো ক্যাটাগরি-৩–এ থাকবে। এ শ্রেণির ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া ব্যাংক-সংশ্লিষ্ট কারও সঙ্গে কোনো ধরনের নতুন লেনদেনে জড়াতে পারবে না। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া দেশ বা বিদেশে নতুন শাখা, উপশাখা বা সহায়ক সংস্থাও খুলতে পারবে না। 

যেসব ব্যাংকে টানা ২৪ মাস খেলাপি ঋণ ১৪ শতাংশের ওপর থাকবে ও সিআরএআর ৫ শতাংশের নিচে নামবে, সেগুলো সবচেয়ে খারাপ ধাপ বা ক্যাটাগরি-৪ হিসেবে চিহ্নিত হবে। এসব ব্যাংকের আমানত সংগ্রহ ও ঋণ বিতরণ বন্ধ করে দিতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক। 

আরও পড়ুন

একীভূত হবে কোন ব্যাংক 

‘প্রম্পট কারেক্টিভ অ্যাকশন’ (পিসিএ) নীতিমালায় বলা হয়েছে, পাঁচটি সূচকের ভিত্তিতে ব্যাংকগুলোর শ্রেণি নির্ধারণ করা হবে। সূচক পাঁচটি হলো—ব্যাংকের মূলধন পর্যাপ্ততার অনুপাত, টিয়ার-১ মূলধন অনুপাত, কমন ইকুইটি টিয়ার-১ (সিইটি১) অনুপাত, প্রকৃত খেলাপি ঋণ ও করপোরেট গভর্ন্যান্স বা সুশাসন। টিয়ার-১ মূলধন হলো শেয়ারধারীদের মূলধন, যা ব্যাংকের মূলধন ও মুনাফা থেকে রেখে দেওয়া অর্থের সমস্টি। কমন ইকুইটি টিয়ার-১ (সিইটি১) হলো, পারপিচুয়াল বন্ড। এই বন্ড ছেড়ে অর্থ সংগ্রহ করে ব্যাংক, যা কখনো শেষ হয় না। প্রতিবছর মুনাফা দেওয়া হয় বন্ডের ক্রেতাদের।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক স্বেচ্ছায় একীভূত হতে পারবে। তা না হলে আগামী বছর নীতিমালা অনুযায়ী দুর্বল ব্যাংক একীভূত করার পদক্ষেপ নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে এতে আমানতকারীদের কোনো শঙ্কা নেই। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের বিষয়টি দেখবে বাংলাদেশ ব্যাংক।