সুশাসন ও প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেই তালিকায় এমটিবি
বেসরকারি খাতের মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) প্রতিষ্ঠাতাদের বেশির ভাগই দেশজুড়ে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। অনেকেই ব্যবসায়ীদের আইকন। ফলে ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ও দক্ষ পরিচালনা পর্ষদ দিয়ে পরিচালিত হয়ে আসছে। পাশাপাশি ব্যাংকটি দক্ষ ও পেশাদার ব্যবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে। এতে গ্রাহকদের কাছে আস্থা ও ব্যাংকটির সেবার মানেও তা ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। আর্থিক অনেক সূচকে উন্নতির পাশাপাশি ব্যাংকটি অর্থায়নে পরিবেশকে প্রাধান্য দিয়ে আসছে।
এ কারণে ২০২৪ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের টেকসই ব্যাংকের তালিকায়ও স্থান করে নিয়েছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক। এর আগে ২০২০ ও ২০২৩ সালেও ব্যাংকটি এই স্বীকৃতি পেয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই স্বীকৃতি ব্যাংকটিকে আলাদা পরিচিতি ও সম্মান এনে দিয়েছে। এ কারণে ব্যাংক খাতের সমস্যাগ্রস্ত অনেক ব্যাংকের গ্রাহক নিজ ব্যাংক থেকে টাকা তুলে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে জমা রাখছেন।
ব্যাংক–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, গত পাঁচ বছরে ব্যাংকটি যেসব ঋণ দিয়েছে, তাতে খেলাপির হার ১ শতাংশের কম। গত বছর শেষে ব্যাংকটির আমানত ২৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ৮৮৩ কোটি টাকায়। আর ঋণ ১৫ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৩০ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। ব্যাংকটি যত ঋণ বিতরণ করেছে, তার মধ্যে ৭ হাজার ১৭১ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে টেকসই খাতে। গত বছরে ব্যাংকটির মুনাফা বেড়ে হয়েছে ৩১৬ কোটি টাকা, ২০২৩ সালে যার পরিমাণ ছিল ২৮৫ কোটি।
এমটিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ১৯৯৯ সালে যাত্রা শুরু করা এই ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের মধ্যে রয়েছেন অ্যাপেক্স, স্কয়ার, এসিআই, এবিসি, শেলটেক, স্বদেশ গ্রুপ, ব্রিটানিয়া ও আবুল হোসেন কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতারা। ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন অ্যাপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী, ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন স্কয়ার গ্রুপের প্রয়াত চেয়ারম্যান স্যামসন এইচ চৌধুরী। এ ব্যাংকের সুশাসন নিশ্চিত করতে শুরু থেকে এই উদ্যোক্তারা সচেষ্ট ছিলেন। শুরুতেই তাঁরা ঠিক করে নেন, দুই বছর পরপর চেয়ারম্যান পরিবর্তন হবে। এ জন্য ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হওয়া নিয়ে কোনো সমস্যা হয়নি। সম্প্রতি দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপতি তপন চৌধুরী ও সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে যুক্ত হয়েছেন। তাঁরা ব্যাংকটিতে দ্বিতীয় প্রজন্মের প্রতিনিধি। বাংলাদেশের অন্য কোনো ব্যাংকে এত স্বচ্ছ ব্যবসায়ী নেই।
ব্যাংকটির কর্মকর্তারা জানান, অন্য ব্যাংকের চেয়ারম্যানরা নিয়ম মেনে ব্যাংক থেকে গাড়িসহ বিভিন্ন সুবিধা পান, তবে এই ব্যাংকের কোনো চেয়ারম্যান এই সুবিধা নেননি। পাশাপাশি তাঁরা ব্যবস্থাপনা কমিটিকে ব্যাংক পরিচালনার বিষয়ে পুরো ক্ষমতা দিয়েছেন। এ জন্য এই ব্যাংকে কখনো দীর্ঘ সময় ধরে পর্ষদ সভা হয় না। ফলে ব্যাংকটি পেশাদারির স্বাক্ষর রাখতে পেরেছে। ব্যাংকের সেবার মানও উন্নত।
ব্যাংকটির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, এই ব্যাংকে যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে, সেটা কর্মকর্তাদের কারণে হয়েছে। এর সঙ্গে পরিচালনা পর্ষদের কেউ জড়িত নন। কারণ, তাঁরা কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেন না। ব্যাংকটি নতুন প্রজন্মের কথা বিবেচনা করে নতুন লোগো করেছে। পাশাপাশি এমটিবি নিউ নামে অ্যাপ চালু করেছে।
জানা যায়, ব্যাংকটি ৮০ শতাংশ ঋণ এখনো করপোরেট খাতে। আর ১২ থেকে ১৩ শতাংশ ঋণ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে (এসএমই) এবং ৭ থেকে ৮ শতাংশ ঋণ রয়েছে খুচরা খাতে। সামনে ব্যাংকটি ৪০ শতাংশ ঋণ এসএমই ও খুচরা খাতে নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে। বাকি ৬০ শতাংশ ঋণ থাকবে করপোরেট খাতে। এতে ব্যাংকের ঝুঁকি অনেক কমে আসবে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা। এ লক্ষ্যে এসএমই ও খুচরা ব্যাংকিং খাতে নতুন নতুন সেবা পণ্য চালু করছে ব্যাংকটি।
গত কয়েক বছরে ব্যাংকিং সেবাকে আরও আধুনিক, সহজ ও টেকসই করে তুলেছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক। ডিজিটাল সেবার বিস্তৃতি ঘটিয়েছে, এতে গ্রাহকদের সময়, অর্থ ও ভোগান্তি কমেছে। ফলে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে গেছে মানুষের আরও কাছে; যদিও সারা দেশে ব্যাংকটির ১২০টি শাখা, ৫১টি উপশাখা ও ৩৪১টি এটিএম বুথ রয়েছে।
এ ছাড়া ব্যাংকটি সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল (সিএসআর) ব্যবহারের ক্ষেত্রেও উৎকর্ষ দেখিয়ে যাচ্ছে। গত বছর এই খাতে খরচ করেছে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা। স্কুলশিক্ষার্থীদের সাইকেল উপহার দেওয়ার মধ্য দিয়ে ব্যাংকটি স্কুলে যাতায়াতকে সহজ করে দিয়েছে, যা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি বাড়াতে ও ঝরে পড়া কমাতে সহায়তা করছে।