বিকাশের মুনাফায় বড় চমক, ৯ মাসেই ৫০৫ কোটি টাকা

বিকাশ লোগো

মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান বিকাশ চলতি বছরের প্রথম ৯ মাস জানুয়ারি-সেপ্টেম্বরে ৫০৫ কোটি টাকার নিট মুনাফা অর্জন করেছে। এই মুনাফা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩১ শতাংশ বা দ্বিগুণের বেশি। ২০২৪ সালের একই সময়ে প্রতিষ্ঠানটি মুনাফা করেছিল ২১৮ কোটি টাকা।

ব্র্যাক ব্যাংক সম্প্রতি তাদের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়ের আর্থিক বিবরণী প্রকাশ করেছে। তাতে পৃথকভাবে বিকাশের আর্থিক বিবরণী যুক্ত করা হয়েছে। বিকাশ হচ্ছে ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান। বিকাশের ৫১ শতাংশ শেয়ারের মালিক এই ব্যাংক।

বড় অঙ্কের মুনাফা অর্জনের সুবাদে বিকাশ দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাতের শীর্ষ ১০ মুনাফা অর্জনকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। এর ওপর ভর করে ব্র্যাক ব্যাংক হয়ে উঠেছে দেশের শীর্ষ মুনাফা অর্জনকারী ব্যাংক।

এ নিয়ে বিকাশের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) মঈনুদ্দিন মোহাম্মদ রাহগীর এক লিখিত বক্তব্যে প্রথম আলোকে বলেন, এক যুগের বেশি সময় ধরে আধুনিকতম প্রযুক্তি, সেবা অবকাঠামো, ডিজিটাল পেমেন্ট ইকোসিস্টেম এবং ডিজিটাল সাক্ষরতায় (লিটারেসি) ধারাবাহিকভাবে কৌশলগত বিনিয়োগ ইত্যাদি সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বিকাশের রাজস্ব প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। দীর্ঘমেয়াদি পুঁজি (পেশেন্ট ক্যাপিটাল) এবং প্রবৃদ্ধিমুখী মানসিকতা এই প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি টেকসই ব্যবসায়িক মডেল গড়ে তুলতে সহায়তা করেছে, যা একই সঙ্গে ক্যাশলেস বা নগদবিহীন লেনদেনে গ্রাহকের আস্থা ও আত্মবিশ্বাস তৈরি করে আচরণগত পরিবর্তন এনেছে।

-২০১১ সালে যাত্রা শুরুর পর গত বছরই প্রথম বিকাশ ৩০০ কোটি টাকার রেকর্ড মুনাফা করে। -প্রতিষ্ঠানটির ৮ কোটি ২০ লাখ গ্রাহক, সাড়ে ৩ লাখ এজেন্ট ও ১০ লাখ মার্চেন্ট পয়েন্ট আছে।

মঈনুদ্দিন মোহাম্মদ রাহগীর আরও বলেন, বিকাশ প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন মৌলিক আর্থিক সেবার পাশাপাশি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মিলে যৌথভাবে ঋণ বিতরণ, আমানত গ্রহণ, পরিষেবা বিল পরিশোধ সেবা প্রদান, রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আনয়ন এবং পে-রোলের মতো সেবাগুলোর সংযোজন হয়েছে, যা গ্রাহকের জন্য বিকাশের সেবার পরিধি যেমন বাড়িয়েছে, তেমনি দেশে ডিজিটাল আর্থিক সেবার ইকোসিস্টেমকেও শক্তিশালী করে তুলেছে।

বিকাশের আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর ৯ মাসে বিকাশ মোট আয় করেছে ৫ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা। অন্যদিকে ভ্যাট পরিশোধ করেছে ৬৩৬ কোটি টাকা, সেবা দিতে খরচ হয়েছে ৩ হাজার ৫১ কোটি টাকা, পরিচালন ও প্রশাসনিক ব্যয় হয়েছে ৯৫৩ কোটি টাকা, কমার্শিয়াল বা বাণিজ্যিক কাজে খরচ হয়েছে ৩১০ কোটি টাকা। ফলে বিকাশের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৫২২ কোটি টাকা। পাশাপাশি বিকাশ গত ৯ মাসে তহবিল থেকে আয় করেছে ১৮৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ডে (ডব্লিউপিপিএফ) ৩৫ কোটি টাকা ও কর বাবদ ১৬৬ কোটি টাকা দিয়েছে। এতে ৯ মাসে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৫০৪ কোটি টাকা।

২০১১ সালে যাত্রা শুরুর পর গত বছরই প্রথম বিকাশ ৩০০ কোটি টাকার রেকর্ড মুনাফা করেছিল। তার আগে কোম্পানিটির সর্বোচ্চ মুনাফা ছিল ২০২৩ সালে, যা পরিমাণে ৯৯ কোটি টাকা। গত বছরের শেষে তা এক লাফে ৩০০ কোটি টাকা ছাড়ায়। আর চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে ৩০৮ কোটি টাকার মুনাফা করে।

বর্তমানে বিকাশের প্রায় ৮ কোটি ২০ লাখ গ্রাহক রয়েছে। দেশজুড়ে প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে ৩ লাখ ৫০ হাজার এজেন্ট ও ১০ লাখ মার্চেন্ট পয়েন্ট। আর্থিক লেনদেনের পাশাপাশি বিকাশে রয়েছে বিভিন্ন পরিষেবা বিল পরিশোধ, টাকা পাঠানো, ন্যানো ঋণ ও ডিপোজিট ইত্যাদি সুবিধা। প্রতিষ্ঠানটির মালিকানার সঙ্গে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানি ইন মোশন, বিশ্বব্যাংক গ্রুপের ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন বা আইএফসি, গেটস ফাউন্ডেশন, অ্যান্ট ইন্টারন্যাশনাল ও সফটব্যাংক প্রভৃতি।