তদন্তে নেমেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, ৮ প্রতিষ্ঠানের ঋণ ছাড় বন্ধ 

গতকাল সন্ধ্যায় ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে জরুরি তলব করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। 

বাংলাদেশ ব্যাংক
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

নাবিল গ্রুপসহ আট প্রতিষ্ঠানকে ইসলামী ব্যাংক থেকে অনিয়মের মাধ্যমে আগ্রাসী ঋণ দেওয়ার ঘটনা খতিয়ে দেখছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তারই অংশ হিসেবে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এসব প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ ছাড় বন্ধ রাখতে বলেছে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি দল ব্যাংকটি পরিদর্শন করে এসব ঋণ অনিয়মের ব্যাখ্যা চেয়েছে। পাশাপাশি এ–সংক্রান্ত নথিপত্র সংগ্রহ করছে।

সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে গত রোববার ইসলামী ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংকের প্রকৃত চিত্র অবহিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকটির ঋণ অনিয়মের ঘটনা খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নেওয়া হয়। পাশাপাশি সরকারি বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারাও এ বিষয়ে ইসলামী ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করেছে।

আরও পড়ুন

তবে ইসলামী ব্যাংকের বড় ধরনের ঋণ অনিয়মের ঘটনায় আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। এমনকি নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির মুখপাত্রও এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। 

গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোতে ‘ইসলামী ব্যাংকে ভয়ংকর নভেম্বর’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে নানা উপায়ে ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকার ঋণ বের করে নেওয়ার তথ্য তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক থেকে ৭ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা ও বাকি অর্থ সোশ্যাল ইসলামী ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে বের করে নেওয়া হয়। যেসব কোম্পানির নামে এসব ঋণ বের করা হয় তার মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে ঋণ নিয়েছে। যেগুলো মূলত নামসর্বস্ব কোম্পানি। এ রকম নামসর্বস্ব দুই কোম্পানির নামে ইসলামী ব্যাংক থেকে বের করে নেওয়া হয় দুই হাজার কোটি টাকা।

আরও পড়ুন

নাবিল গ্রুপসহ আটটি কোম্পানির নামে নেওয়া মোট ঋণের মধ্যে চলতি মাসের ১-১৭ নভেম্বর ইসলামী ব্যাংক থেকে নেওয়া হয় ২ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা।

তবে ইসলামী ব্যাংক এক ব্যাখ্যায় বলেছে, ‘সাম্প্রতিক সময়ে দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীর পর্যাপ্ত জোগান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এ ধরনের পণ্যে ইসলামী ব্যাংক ঋণ বাড়িয়েছে। এ ছাড়া আমদানি বৃদ্ধি, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসা সম্প্রসারিত হওয়ায় যথাযথ মূল্যায়ন করে পর্যাপ্ত জামানত গ্রহণ ও ব্যাংকের নিয়ম মেনেই ঋণ দেওয়া হয়েছে।’

জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার প্রতিবেদন প্রকাশের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা ২০২১ সালের ডিসেম্বরভিত্তিক নাবিল গ্রুপের ঋণের তথ্য বের করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই তথ্য থেকে জানা যায়, ২০২১ সাল পর্যন্ত গ্রুপটির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঋণ ছিল প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। এক বছর না যেতেই ঋণ এত বেড়ে যাওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বিষয়টি সরেজমিন পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নেন।

তারই অংশ হিসেবে গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে যায়। এরপর নাবিল গ্রুপসহ আটটি প্রতিষ্ঠানের ঋণ ছাড় আপাতত বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। এসব ঋণ অনুমোদন ও ছাড়ের সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের ব্যাপারেও খোঁজখবর নিতে শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। পাশাপাশি প্রতিনিধিদলটি মালিকানা পরিবর্তনের পর ব্যাংকটি থেকে যেসব বড় ঋণ ছাড় করা হয়েছে, তার তথ্যও সংগ্রহ করছে।

আরও পড়ুন

এদিকে পূর্বনির্ধারিত কোনো বৈঠক সূচি ছাড়াই গতকাল দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। সেখান থেকে ফিরে গতকাল রাতে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ডেকে নেওয়া হয়। পরে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে গতকাল সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা প্রথম আলোকে বলেন, ‘নাবিল গ্রুপসহ আটটি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া ঋণের বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আমরা ব্যাখ্যা দিয়ে দেব।’