৫৮৯ কোটি টাকার গৃহঋণ বিতরণের নতুন রেকর্ড

সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে বিএইচবিএফসির কর-পূর্ব মুনাফা দাঁড়াতে পারে ২৩০ কোটি টাকা। একই সময়ে প্রতিষ্ঠানটির শ্রেণীকৃত ঋণ হয়েছে ৪.৭২ শতাংশ।

গৃহঋণ

বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন (বিএইচবিএফসি) সদ্য সমাপ্ত ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫৮৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকার গৃহঋণ দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ইতিহাসে এটি এক অর্থবছরে সর্বোচ্চ পরিমাণ ঋণ বিতরণের রেকর্ড। এর আগের রেকর্ডটি হয়েছিল ২০২০-২১ অর্থবছরে। সেবার ৫১৪ কোটি টাকার গৃহঋণ বিতরণ করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। বিএইচবিএফসি গ্রাহকদের বাড়ি নির্মাণ ও ফ্ল্যাট ক্রয়ের জন্য ঋণ দেয়।

বিএইচবিএফসি সূত্রে জানা গেছে, সংস্থাটি গত অর্থবছরে মোট ১ হাজার ৯২৭টি ঋণ আবেদন মঞ্জুর করেছে। তবে এই অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় দুই হাজার আবেদন জমা পড়েছিল। এর জন্মলগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত গৃহঋণের জন্য মোট আবেদন জমা পড়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ৫৯০টি।

এখন শুধু শহরে নয়, গ্রামের মানুষের মধ্যেও ঋণ নিয়ে বাড়ি নির্মাণের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এটা যেমন আমাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতার সূচক নির্দেশ করে, তেমনি শহরের তো বটেই, গ্রামের মানুষের রুচিতেও বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।
মো. আফজাল করিম, এমডি, বিএইচবিএফসি

গত অর্থবছরে বিএইচবিএফসি জিরো ইক্যুইটি গৃহনির্মাণ ঋণ, শরিয়াহভিত্তিক পণ্য মনজিলসহ ১২টি পণ্যে মোট ৭০০ কোটি টাকার ঋণ মঞ্জুর ও ৬০০ কোটি টাকা বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। এর বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটির ঋণ মঞ্জুর ও বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৭১৫ কোটি ও ৫৮৯ কোটি টাকা। তাতে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বিএইচবিএফসির ঋণ মঞ্জুর ও বিতরণের হার দাঁড়ায় যথাক্রমে ১০২ ও ৯৮।

তবে গত অর্থবছরে বিএইচবিএফসির ঋণ মঞ্জুর ও বিতরণে আগের অর্থবছরের তুলনায় যথাক্রমে ১৫ দশমিক ৫০ ও ১৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। একই সময়ে প্রতিষ্ঠানটির ঋণ আদায়ে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১৫ দশমিক ৪০ শতাংশ। এ ছাড়া গত অর্থবছরে বিএইচবিএফসির শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৭২ শতাংশ।

বিএইচবিএফসি অবশ্য সাত অর্থবছর ধরে ঋণ বিতরণে ধারাবাহিকভাবে ভালো করে আসছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি মোট ২৪৮ কোটা টাকার গৃহঋণ বিতরণ করেছিল। সাত বছরের ব্যবধানে যা এখন দ্বিগুণের বেশি। প্রতিষ্ঠানটি গত অর্থবছরে অডিট আপত্তি নিষ্পত্তির লক্ষ্য ছিল ১৭০টি। এর বিপরীতে আপত্তি নিষ্পত্তি করেছে ১৯৩টি। এতে প্রবৃদ্ধি হয় ১১৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঋণ বিতরণ ও আদায়ের ক্ষেত্রে আমরা বেশ সফলতা পেয়েছি। এটা শুধু আমার একার নয়, এই কৃতিত্বের দাবিদার পুরো বিএইচবিএফসি পরিবার। সর্বশেষ অর্থবছরে আমাদের কর-পূর্ব মুনাফা দাঁড়াতে পারে প্রায় ২৩০ কোটি টাকা। এটা সামগ্রিকভাবে বিএইচবিএফসির সক্ষমতা প্রমাণ করে। এই সাফল্য গ্রাহকদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।’

দেশে গৃহঋণের চাহিদা বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে আফজাল করিম বলেন, ‘এখন শুধু শহরে নয়, গ্রামের মানুষের মধ্যেও ঋণ নিয়ে বাড়ি নির্মাণের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এটা যেমন আমাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতার সূচক নির্দেশ করে, তেমনি শহরের তো বটেই, গ্রামের মানুষের রুচিতেও বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। মোটামুটি আর্থিক সামর্থ্য থাকলে মানুষ এখন থাকার জন্য ভালো একটা পরিবেশ চায়। এতে সারা দেশে গৃহঋণের চাহিদা বাড়ছে।’

বিশেষায়িত এই প্রতিষ্ঠানের মূল কাজই হলো গৃহঋণ বিতরণ। পাশাপাশি সংস্থাটি ফ্ল্যাট নিবন্ধন, আবাসন উন্নয়ন ও মেরামত এবং বাড়ি নির্মাণে সরঞ্জাম ক্রয়ের জন্য ঋণ দিয়ে থাকে। সর্বোচ্চ ২৫ বছর মেয়াদি ঋণ দিয়ে থাকে বিএইচবিএফসি। ঋণের সর্বনিম্ন মেয়াদ পাঁচ বছর। প্রতিষ্ঠানটির ঋণের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এটি কম সুদ ও সরল সুদে ঋণ দেয়; অর্থাৎ সুদের ওপর সুদ আদায় করে না প্রতিষ্ঠানটি। কৃষকদের জন্য বিএইচবিএফসির ঋণের সুদ মাত্র ৭ শতাংশ। আর ফ্ল্যাট ও বাড়ি নির্মাণে দেওয়া ঋণের হার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ।