পরিচালন মুনাফার তুলনায় প্রকৃত মুনাফায় বড় ফারাক

ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা বেশি হলেও প্রকৃত মুনাফা সাত থেকে আট গুণ কম।

ব্যাংক
প্রতীকী ছবি

রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত একমাত্র রূপালী ব্যাংক। ব্যাংকটি ২০২০ সালে ১৬০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছিল। তবে এ ব্যাংক ওই বছর নিট (প্রকৃত) মুনাফা অর্জন করেছিল মাত্র ১৬ কোটি টাকা। আর ২০২১ সালে রূপালী ব্যাংক ১১৯ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করে। কিন্তু বছর শেষে ব্যাংকটির নিট মুনাফা দাঁড়ায় ৩৬ কোটি টাকা।

এক বছরের ব্যবধানে পরিচালন মুনাফা কমে গেলেও বেড়ে যায় নিট মুনাফা। যদিও চলতি বছরের জানুয়ারি-জুনে ব্যাংকটি ২০২০ সালের প্রবণতায় ফিরে আসে। ছয় মাসে এ ব্যাংক পরিচালন মুনাফা অর্জন করে ৫৭ কোটি টাকা। আর নিট মুনাফা অর্জন করে আট কোটি টাকা।

পরিচালন ও নিট মুনাফার এ বড় ধরনের পার্থক্য রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাকি পাঁচ ব্যাংকেও। ব্যাংকগুলো হচ্ছে সোনালী, জনতা, অগ্রণী, বিডিবিএল এবং বেসিক। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে সচিবালয়ে ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) সঙ্গে বৈঠক করে নিট মুনাফা বৃদ্ধির তাগিদ দিয়েছে। নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণীসহ (২০১৯-২১) গত ৩০ জুন পর্যন্ত মুনাফার চিত্র বৈঠকে তুলে ধরেছে ছয় ব্যাংক।

আয় থেকে ব্যয় বাদ দিলে যা থাকে, তা-ই হচ্ছে পরিচালন মুনাফা। আর পরিচালন মুনাফা থেকে খেলাপি ঋণ,সঞ্চিতি, করপোরেট কর বাদ দিলে যা থাকে, তা-ই হচ্ছে নিট মুনাফা। নিট মুনাফা থেকেই লভ্যাংশ দেয় তালিকাভুক্ত ব্যাংক। শুধু পরিচালন মুনাফা দেখে বিনিয়োগ না করতে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

এদিকে পরিচালন ও প্রকৃত মুনাফার মধ্যে এত ফারাকের বিষয়টি নিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

সোনালী, অগ্রণীসহ ৫ ব্যাংকের চিত্র

মুনাফার হিসাব চূড়ান্ত হওয়ার আগে লভ্যাংশের তথ্য প্রকাশ করার ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে ৩ অক্টোবর উপস্থাপিত তথ্য অনুযায়ী, সোনালী ব্যাংক ২০২০ সালে পরিচালন মুনাফা অর্জন করে ২ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। আগের বছর এ মুনাফা ছিল ১ হাজার ৭১০ কোটি টাকা। অথচ ২০২১ সালের ৩ জানুয়ারি পরিচালন মুনাফা বৃদ্ধির বিষয়টি প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় কেক কেটে উদ্‌যাপন করেছিলেন ব্যাংকটির তৎকালীন এমডি আতাউর রহমান প্রধান।

অথচ পরে দেখা যায়, ব্যাংকটি ২০২০ সালে নিট মুনাফা অর্জন করে ৩২৩ কোটি টাকা। তার পরের বছর ২০২১ সালে ২ হাজার ৯০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফার বিপরীতে নিট মুনাফা অর্জন করে ৩৪৬ কোটি টাকা। এ বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ৬ মাসে ১ হাজার ৪৫ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফার বিপরীতে নিট মুনাফা করেছিল ১৪৫ কোটি টাকা।

একইভাবে জনতা ব্যাংক ২০২০ সালে ৯৮১ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছিল। তার বিপরীতে প্রকৃত মুনাফা হয়েছে ১৪ কোটি টাকা। বিডিবিএলের মুনাফার চিত্রও একই রকম। আর বেসিক ব্যাংকের পরিচালন ও নিট—দুই ধরনের মুনাফাই নেতিবাচক।

উৎসাহ বোনাস নিয়ে প্রশ্ন

নিট মুনাফা কম থাকলেও বেসিক ব্যাংক ছাড়া রাষ্ট্রমালিকানাধীন অন্য পাঁচ ব্যাংক প্রতিবছরই বেতন-ভাতার বাইরে উৎসাহ বোনাস বা আর্থিক প্রণোদনা দিচ্ছে। নিট মুনাফা কম থাকলে বা লোকসানে থাকলে এ উৎসাহ বোনাস দেওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে কাজ করছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের গঠিত ১৪ সদস্যের একটি কমিটি।

অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক এমডি সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, পরিচালন মুনাফা নিয়ে এত উদ্‌যাপন করার কিছু নেই। উদ্‌যাপন করতে হবে নিট মুনাফা নিয়ে। নিট মুনাফা বৃদ্ধির বিষয়ে ব্যাংকগুলো কী ভূমিকা পালন করল আর আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কতটা কঠোর তাগিদ দিল, সেটা একটা বড় প্রশ্ন।

ব্যাংকারদের উৎসাহ বোনাস দেওয়ার পক্ষে থেকেও এই সাবেক ব্যাংকার বলেন, ‘তবে সবাইকে সমান হারে দেওয়া যাবে না। যাঁরা ভালো করবেন, তাঁরাই পেতে পারেন বোনাস।’