জনতা ব্যাংকের প্রভাবে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমেছে

রাষ্ট্রমালিকানাধীন জনতা ব্যাংকে গত জুলাই–সেপ্টেম্বর ৩ মাসে খেলাপি ঋণ কমেছে ১১ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা। তবে এই সময়ে বেসরকারি খাতের খেলাপি ঋণ বেড়েছে। ফলে আলোচ্য সময়ে পুরো ব্যাংক খাতে সব মিলিয়ে খেলাপি ঋণ কমেছে ৬৪২ কোটি টাকা।

খেলাপি ঋণসংক্রান্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য পাওয়া গেছে। এতে বলা হয়েছে, গত জুন শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি ৩৯ টাকা, যা সেপ্টেম্বর শেষে কমে হয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা।

এর আগে এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছিল ২৪ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা, যা ছিল ব্যাংক খাতের বিতরণ করা মোট ঋণের ১০ দশমিক ১১ শতাংশ। সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের হার কমে ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশে নেমেছে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, তখন দেশে মোট খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এখন তা দেড় লাখ কোটি টাকার ওপরে। গত ১৪ বছরে খেলাপি ঋণ প্রায় ৭ গুণ বেড়েছে। সেই অর্থে এই সময়টাকে ঋণখেলাপিদের জন্য ‘সুবর্ণ সময়’ বলা যায়।

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের যে হিসাব দিচ্ছে, তা–ও আবার প্রকৃত তথ্য নয়। কারণ, প্রকৃত খেলাপি ঋণ আরও অনেক বেশি। মামলার কারণে অনেক ঋণকে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। আবার অবলোপন করা ঋণও খেলাপির হিসাবে নেই।

এদিকে চলতি বছরেই জাতীয় সংসদে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করা হয়েছে। এর ফলে খেলাপিরাও ঋণ নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। আগে একটি ব্যবসায়ী গ্রুপের কোনো প্রতিষ্ঠান ঋণখেলাপি হলে তাদের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ পাওয়ার সুযোগ ছিল না। নতুন আইনে সেই সুযোগ রাখা হয়েছে। ফলে সামনের দিনগুলোয় খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

জানা গেছে, রাষ্ট্র খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ জুনে ছিল ৭৪ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা, যা কমে হয়েছে ৬৫ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা। তবে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ৭৩ হাজার ৬৩৫ কোটি থেকে বেড়ে হয়েছে ৮১ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ৪ হাজার ৭৫৩ কোটি থেকে বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ৩ হাজার ১৯৭ কোটি থেকে বেড়ে ৩ হাজার ২৮৬ কোটি টাকায় উঠেছে।

আরও পড়ুন

এদিকে জনতা ব্যাংকের নথিপত্র অনুযায়ী, গত জুন শেষে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণ ছিল ২৮ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা, যা সেপ্টেম্বরে কমে হয়েছে ১৭ হাজার ১২৮ কোটি টাকা। ফলে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার ৩০ দশমিক ৪৩ শতাংশ থেকে কমে ১৭ দশমিক ৯৯ শতাংশ নেমেছে। এই ব্যাংকে গত জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে বেক্সিমকো গ্রুপের ৮ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিল করা হয়েছে। একই সময়ে চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপ পুনঃ তফসিল করেছে ৫ হাজার ২৬৯ কোটি টাকার ঋণ। দুই প্রতিষ্ঠানের ঋণ পুনঃ তফসিলের ফলে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ কমেছে ১৩ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা। তবে আরও কিছু নতুন প্রতিষ্ঠান ঋণখেলাপির তালিকায় যোগ হওয়ায় জুলাই-সেপ্টেম্বরে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ কমেছে ১১ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা। গত জুন শেষে জনতা ব্যাংকে বেক্সিমকো গ্রুপের ঋণ ছিল ২৩ হাজার ২২৮ কোটি টাকা ও এস আলম গ্রুপের ঋণ ছিল ৯ হাজার ৬০৯ কোটি টাকা।