‘ব্যক্তির প্রভাবে’ কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানে টাকা রাখছে সরকারি ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংক
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

আর্থিক সূচক পর্যালোচনা না করেই কোনো কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে টাকা রাখছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এতে কাজ করছে কোনো কোনো ব্যক্তির প্রভাব। এ জন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে টাকা রাখার ক্ষেত্রে সার্বিক সুশাসন বিবেচনায় নেওয়া এবং যথাযথ যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

রাষ্ট্রমালিকানাধীন চার ব্যাংক ও এক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এমন মন্তব্য করে এই নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ব্যাংকগুলো হলো সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও রূপালী। এ ছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো হলো ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) ও বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফাইন্যান্স ফান্ড লিমিটেড।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারি এসব ব্যাংকের অনেক টাকা দুর্বল আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আটকে গেছে। বছরের পর বছর গেলেও টাকা ফেরত পাচ্ছে না। এখন অনেকে ঋণ না পেয়ে নতুন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নামে এসব ব্যাংক থেকে টাকা বের করে নিচ্ছে। এটা ঠেকানোর উদ্যোগ হিসেবেই এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কারণ, এসব বিনিয়োগ করা অর্থও সময়মতো ফেরত না পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘সম্প্রতি বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সূত্র হতে জানা যাচ্ছে যে কতিপয় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয় অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে যথাযথ যাচাই-বাছাই ছাড়াই কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যক্তিবিশেষ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠিতে বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রীয় অর্থের সুরক্ষা নিশ্চিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহে যেকোনো প্রকার বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানসমূহের বিবিধ আর্থিক সূচক পর্যালোচনা করা, সার্বিক সুশাসন বিবেচনায় নেওয়া এবং যথাযথ যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। বিনিয়োগ কমিটির মাধ্যমে ‘কাউন্টার পার্টি এক্সপোজার লিমিট’ নির্ধারণ করে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য আপনাদেরকে অনুরোধ করা হলো।’

‘এ ছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ/পুনঃবিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো বিনিয়োগ কমিটি না থাকলে এ–বিষয়ক কমিটি গঠন এবং কাউন্টার পার্টি এক্সপোজার লিমিট নির্ধারণের জন্য আপনাদের পরামর্শ দেওয়া হলো,’ ওই চিঠিতে আরও বলা হয়।

দেশে আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৩৫টি। গত বছর শেষে এসব প্রতিষ্ঠানে ঋণ ও বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৭০ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৬ হাজার ৮২১ কোটি টাকা, যা ঋণ ও বিনিয়োগের ২৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ। ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১৩ হাজার ১৭ কোটি টাকা। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি বেড়েছে ৩ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো চলতি হিসাব খুলে আমানত নিতে পারে না। সর্বনিম্ন তিন মাস মেয়াদি আমানত সংগ্রহ করতে পারে।

এদিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানতের হার সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ নির্দিষ্ট করে রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান আমানত হারাচ্ছে। কারণ, সংকটে পড়া অনেক ব্যাংক আমানতের বিপরীতে ৮ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিচ্ছে।