এবার ডলার ধারণের সীমা কমল

নতুন সিদ্ধান্তের ফলে ১০০ কোটি ডলার বাজারে আসবে বলে আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

  • ব্যাংকগুলোকে রেগুলেটরি ক্যাপিটালের ২০ শতাংশের পরিবর্তে ১৫ শতাংশ বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণ করতে হবে।

  • ইআরকিউ হিসাবের ধারণকৃত ডলারের ৫০ শতাংশ নগদায়নের নির্দেশ। সীমাও কমে অর্ধেক।

ডলার
ছবি: সংগৃহীত

দেশে ডলার–সংকট নিরসনে নতুন চার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে ব্যাংকের ডলার ধারণের সীমা (এনওপি) হ্রাস, রপ্তানিকারকের প্রত্যাবাসন কোটায় (ইআরকিউ) ধারণকৃত ডলারের ৫০ শতাংশ নগদায়ন, ইআরকিউ হিসাবে জমা রাখার সীমা কমিয়ে অর্ধেকে নামিয়ে আনা এবং অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের বৈদেশিক মুদ্রার তহবিল অভ্যন্তরীণ ব্যাংকিং ইউনিটে স্থানান্তর। ব্যাংক ও রপ্তানিকারকদের ডলার ধারণের সীমা কমানোসহ নতুন সিদ্ধান্তগুলোর ফলে ডলার নিয়ে চলমান সংকট কমবে বলে আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এসব নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল বৃহস্পতিবার তিনটি পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। ডলার ধারণের সীমা কমিয়ে আনার বিষয়টি
আগামী রোববার ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়ে জানানো হবে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ৫০ লাখ ডলারের বেশি মূল্যের বেসরকারি যেকোনো আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলার ২৪ ঘণ্টা আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশা করছে, তাদের নতুন সিদ্ধান্তে প্রায় ১০০ কোটি ডলার বাজারে আসবে, যার ফলে ব্যাংকগুলোয় দীর্ঘদিন পর ডলার বেচাকেনা শুরু হবে। সংকটের কারণে কয়েক মাস ধরে ব্যাংকে ডলার কেনাবেচা বন্ধ রয়েছে। এখন শুধু বাংলাদেশ ব্যাংক বিক্রি করছে, আর ব্যাংকগুলো কিনছে।

বিভিন্ন ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এসব সিদ্ধান্তে বাজারে ডলারের প্রবাহ কিছুটা বাড়বে। তবে ডলারে আয় কম হওয়ায় ও ডলারের দাম ধরে রাখায় সমস্যার কারণে এসব সিদ্ধান্তে সংকট পুরোপুরি কাটবে না।

এদিকে প্রবাসী আয় ধরতে কয়েকটি ব্যাংক গতকাল ডলারের দাম ১০১ টাকা বা এর চেয়ে বেশি প্রস্তাব করেছে। এরপরও চাহিদামতো প্রবাসী আয় তেমন মিলছে না। অবশ্য ঈদের পর প্রবাসী আয়ে কিছুদিন নিম্নগতি থাকে।

ডলার ধারণের সীমা কমছে

ব্যাংকগুলো তাদের রেগুলেটরি ক্যাপিটালের ২০ শতাংশের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণ করতে পারে। এই সীমা ১৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অবশ্য সংকটের কারণে এখন কয়েকটি ব্যাংকের কাছে ডলার নেই। ব্যাংকগুলো ২০ শতাংশ হিসাবে ২২০ কোটি ডলার সংরক্ষণ করতে পারে, যা নতুন সিদ্ধান্তের ফলে ১৬০ কোটি ডলারে নেমে আসবে। এতে সব ব্যাংককে না হলেও কিছু ব্যাংককে অন্য ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করতে হবে।

ইআরকিউয়ের ৫০ শতাংশ নগদায়ন

রপ্তানিকারকের প্রত্যাবাসন কোটা (ইআরকিউ) হিসাবে জমাকৃত বৈদেশিক মুদ্রার ৫০ শতাংশ দ্রুত নগদায়ন করার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি ইআরকিউ হিসাবে জমা রাখার সীমাও অর্ধেক করে দিয়েছে। রপ্তানি আয়ের একটা অংশ এই হিসাবে জমা রাখা যায়। যা দিয়ে রপ্তানিকারকেরা খরচ করতে পারেন। জানা গেছে, ইআরকিউ হিসাবে ৭২ কোটি ডলার রয়েছে। ফলে ৩৬ কোটি ডলার ব্যাংকগুলোর নগদায়ন করে কিনে ফেলতে পারবে। ব্যবসায়ীরা ধরে রাখা ডলার বিক্রি করতে বাধ্য হবেন।

নতুন নিয়মে ইআরকিউতে প্রযুক্তি খাতের রপ্তানিকারকেরা ৭০ শতাংশের পরিবর্তে ৩৫ শতাংশ, সেবা খাতের রপ্তানিকারকেরা ৬০ শতাংশের জায়গায় ৩০ শতাংশ ও পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা রপ্তানি আয়ের ১৫ শতাংশের পরিবর্তে সাড়ে ৭ শতাংশ রাখতে পারবেন।

বিদেশি ঋণে মিটবে আমদানি দায়

ব্যাংকগুলো তাদের অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রায় আমানত নেয়, আবার বিদেশ থেকে ঋণও নেয়। তবে এই অর্থ দিয়ে অভ্যন্তরীণ ব্যাংকের আমদানি দায় শোধ করা যায় না। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক সিদ্ধান্ত দিয়েছে, ব্যাংকগুলো তার রেগুলেটরি মূলধনের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশের সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা অফশোর ইউনিট থেকে অভ্যন্তরীণ ইউনিটে নিতে পারবে। এই অর্থ দিয়ে মূলধনি যন্ত্রপাতি, শিল্পের কাঁচামাল ও সরকারি আমদানি দায় শোধ করা যাবে। তবে সুবিধাটি ছয় মাস তথা আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।

বড় আমদানির তথ্য আগেই জানাতে হবে

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ৫০ লাখ ডলারের বেশি বেসরকারি যেকোনো আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলার ২৪ ঘণ্টা আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে হবে। অর্থাৎ ৪৭ কোটি টাকা মূল্যের কোনো ঋণপত্র খুললেই আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে হবে। তবে সরকারি আমদানির ক্ষেত্রে আগেই তথ্য জানানোর প্রয়োজন নেই।

বাজার পরিস্থিতি

ঈদের পর বেশি দাম দিয়েও ডলার পাচ্ছে না ব্যাংকগুলো। আবার রপ্তানি আয়ও আসছে না। কারণ, ঈদের আগেই প্রবাসী ও রপ্তানি আয় দেশে চলে এসেছে। এদিকে আমদানি দায় পরিশোধের চাপ এখন বেড়েছে। এ জন্য ব্যাংকগুলো বাধ্য হয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বারস্থ হয়েছে।

গতকাল রিজার্ভ থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে ১৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রতি ডলারের দাম ধরা হয় ৯৩ টাকা ৯৫ পয়সা। প্রতিনিয়ত ডলার বিক্রির ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে এখন চার হাজার কোটি ডলারের নিচে নেমে গেছে।