আর্থিক প্রতিষ্ঠান করবে না নগদ, চলছে ডিজিটাল ব্যাংকের প্রস্তুতি

মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’

আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বা অনুমোদন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ফেরত দিয়েছে ‘নগদ ফাইন্যান্স পিএলসি’। বরং ডিজিটাল ব্যাংক গঠনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এ লক্ষ্যে শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন জমা দেবে ‘নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি’। এই দুটি প্রতিষ্ঠানই মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান (এমএফএস) নগদের সঙ্গে সম্পর্কিত।

নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ আজ নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান। এ সময় তিনি দেশের সবচেয়ে দ্রুতগতির ‘ইউনিকর্ন’ বা ১০ হাজার কোটি টাকার কোম্পানি হিসেবে নগদের স্বীকৃতি ও ডিজিটাল ব্যাংকের নানা সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন।

তানভীর আহমেদ বলেন, এমএফএস প্রতিষ্ঠান নগদের গ্রাহক এখন আট কোটি, যেখানে দিনে এক হাজার কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে। সারা দেশে রয়েছে আড়াই লাখ এজেন্ট বা উদ্যোক্তা পয়েন্ট। নগদ ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স পেলে এ নেটওয়ার্কই হবে তাদের সেবা দ্রুত ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যম।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, প্রাথমিক অনুমোদন নিয়ে এমএফএস হিসেবে সেবা পরিচালনা করছে নগদ। নগদে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের কোনো মালিকানা নেই, তবে ডাক বিভাগের সেবা হিসেবে ব্যবসা করার লাইসেন্স রয়েছে। এ জন্য নগদ থেকে রাজস্ব ভাগ পায় ডাক বিভাগ।

প্রতিষ্ঠানটিকে অনুমোদন দেওয়ার ধাপ হিসেবে নানা প্রক্রিয়া শেষে গত এপ্রিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ নগদ ফাইন্যান্স পিএলসির অনুমোদন দেয়। এরপর গত মে মাসে এক প্রজ্ঞাপনে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, নগদ ফাইন্যান্স পিএলসিকে বাংলাদেশে অর্থায়ন ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। তবে সম্প্রতি নগদ ফাইন্যান্স কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চিঠি দিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স সমর্পণ করেছে।

এর কারণ সম্পর্কে তানভীর আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা নেই, তাই লাইসেন্স সমর্পণ করা হয়েছে। তখন ডিজিটাল ব্যাংকের নীতিমালা ছিলা না, এ জন্য আমরা অনুমোদন চেয়েছিলাম। ডিজিটাল ব্যাংক ব্যবসা করার জন্য যে অবকাঠামো প্রয়োজন, তা আমাদের আছে।’

তানভীর আহমেদ বলেন, বেশির ভাগ ছোট ব্যবসায়ীর এক দিন মেয়াদি অর্থ প্রয়োজন। আবার কেউ ৫০-১০০ টাকা জমা করতে চান। এই সেবার মাধ্যমে ছোট ছোট আমানত ও এক অঙ্কের সুদে ঋণ দেওয়া সম্ভব। পাশাপাশি ডিজিটাল ব্যাংকের মাধ্যমে বিমাসেবা বিক্রি করাও সম্ভব হবে, যা দেশের অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি বদলে দেবে।

ডিজিটাল ব্যাংক হলে প্রবাসী আয়ে কোনো প্রভাব পড়বে কি না, জানতে চাইলে নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, এতে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে এবং প্রবাসী আয়ে তেমন প্রভাব পড়বে না। কারণ, অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে দাম বেশি হলে প্রবাসীরা সেদিকেই থাকবে। বৈধ পথে প্রবাসী আয় বাড়াতে ইকোসিস্টেমের পরিবর্তন করা প্রয়োজন।

তানভীর আহমেদ বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে সবাইকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির মধ্যে আনতে চায় নগদ। ডিজিটাল ব্যাংক গঠিত হলে তার মাধ্যমে এটা করা সম্ভব হবে।

নগদ এমএফএসে কত শতাংশ গ্রাহক অ্যাপ ব্যবহার করেন, এ নিয়ে জানতে চাইলে তানভীর আহমেদ বলেন, নগদের সক্রিয় গ্রাহক আড়াই কোটি। এর ৫৫ শতাংশ অ্যাপ ব্যবহার করেন। ডিজিটাল ব্যাংক হলেও এই সেবা ইন্টারনেট ছাড়া ইউএসএসডি প্রযুক্তির মাধ্যমে চালানো সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।

১০ হাজার কোটি টাকার কোম্পানি হিসেবে নগদের স্বীকৃতি প্রসঙ্গে তানভীর আহমেদ বলেন, ‘বিগ-৪ হিসেবে পরিচিত হিসাব প্রতিষ্ঠানের একটি কোম্পানি গত জুনেই আমাদের এ স্বীকৃতি দিয়েছে। এটা দেশের গর্ব করার মতো বিষয়। শূন্য থেকে আমরা ১০ হাজার কোটি টাকার কোম্পানি হয়েছি।’

নগদ ডিজিটাল ব্যাংক করলে তার মালিকানার কাঠামো কী হবে, সে সম্পর্কে জানতে চাইলে তানভীর আহমেদ বলেন, ডিজিটাল ব্যাংকের ৫১ শতাংশ মালিকানা থাকবে এমএফএস প্রতিষ্ঠান নগদের কাছে। বাকি মালিকানা থাকবে নগদে বর্তমান উদ্যোক্তা ও নতুনদের কাছে। নগদ ফাইন্যান্সের উদ্যোক্তারাও এতে থাকতে পারেন। পাশাপাশি দেশের কোনো শিল্প গ্রুপও এ উদ্যোগে যুক্ত হতে পারে।

‘তবে কোনো ব্যাংক বা বিমা প্রতিষ্ঠান আমাদের ডিজিটাল ব্যাংকের মালিকানায় থাকছে না,’ বলেন নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।